ড্রাগন নৌকা উত্সবের আশ্চর্য যাত্রা
2022-06-03 17:59:07

বন্ধুরা, ৩ জুন চীনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সবের অন্যতম-তুয়ান উ উত্সব অর্থাত্ ড্রাগন নৌকা উত্সব। ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা এবং চোংয্যি নামের ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরো আছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ গালা অনুষ্ঠান। চীনে এমন বিশেষ একটি তুয়ান উ উত্সবের গালা আছে। এতে কোনো বিখ্যাত শিল্পী থাকে না। শুধু সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেয়, আর খরচও বেশি হয় না। কারণ, অনুষ্ঠান প্রযোজক দলের বেশি টাকা ছিল না। তবে, প্রচারের পর তা দেশ বিদেশের প্রশংসা পায়। ইউনেস্কোও টুইটারে এর প্রশংসা করেছে। পানির নিচে নাচ, অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা সবাই যেন প্রাচীনকালের মানুষ, তারা আমাদের মুহূর্তের মধ্যে প্রাচীনকালের সমৃদ্ধ পরিবেশে নিয়ে যান। নেটিজেনরা সবাই বলেন, দেখতে হবে, দেখতে হবে, নইলে আপনি পস্তাবেন। তাহলে এই সাংস্কৃতিক গালা কেমন হয়েছে। চলুন, আজ আপনাদের তুয়ান উ উত্সবের আশ্চর্য  ভ্রমণে নিয়ে যাই।

এই সাংস্কৃতিক গালা অনলাইন মিনি নাটকের পদ্ধতিতে দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হয়। এতে চীনের থাং রাজবংশের চারটি সাধারণ মেয়ের গল্প দিয়ে পুরো অনুষ্ঠান সংযুক্ত করা হয়। চারটি থাং রাজবংশের মেয়ে রাজপ্রাসাদে তুয়াং উ উত্সব উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে যাচ্ছে। তাদের পথে সংঘটিত মজার এবং আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা দিয়ে তুয়ান উ উত্সব উদযাপনে চীনাদের ঐতিহ্যিক রীতিনীতি, যেমন ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা, চোংয্যি নামের ঐতিহ্যিক খাবার খাওয়া, সুং হুয়াং মদ পান করা, ইত্যাদি দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে তুয়ান উ উত্সবে ক্ষতিকর কাজ এড়ানো, পূর্বপুরুষের স্মৃতি স্মরণ করা এবং দেশ ও জনগণকে ভালোবাসার চেতনা তুলে ধরা হয়। বিশ্বে চীনের ঐতিহ্যবাহী উত্সবের অসীম আকর্ষণ শক্তি রয়েছে।

এই সাংস্কৃতিক গালার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সবচেয়ে প্রশংসার কাজ হলো পানির নিচে নাচ- ‘প্রার্থনা’। যা চীনের ত্রিরাজ্য আমলের সময়ের বিখ্যাত সাহিত্যিক ছাও জি রচিত কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। গভীর রং-এর পুলে নৃত্যশিল্প গায়ে লাল, হলুদ ও সবুজ রং-এর সুন্দর পোশাক পরে সংগীতের সঙ্গে পানির নিচে নাচেন, যা সাহিত্যিক ছাও জি’র কবিতায় তাঁর কল্পিত প্রিয় লুও দেবতার মতো অসাধারণ সুন্দর দেখায়।

পানি নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে নড়ে, পোশাক পানিতে ভাসে। নৃত্যশিল্পীর ঘোরা, অথবা পানিতে ভেসে বেড়ানো, সবই অসাধারণ সুন্দর দেখায়। যেন মুহূর্তে, দর্শকরা সাহিত্যিক ছাও জি হয়ে ওঠে। লুও দেবতার সৌন্দর্যের মধ্যে হারিয়ে যায়।

নেটিজেনরা প্রশংসা করে বলেন, এমন সুন্দর নৃত্য দেখে মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে। তবে আমাদের দেখা সৌন্দর্যের পিছনে রয়েছে নৃত্যশিল্পীদের অনেক কষ্ট।

এই নাচের শিল্পী হ্য হাও হাও। তিনি ওয়াটার ব্যালে খেলোয়াড় ছিলেন। পানির নিচে নাচা শিল্পীর জন্য সহজ কাজ নয়, তা একটি চ্যালেঞ্জ, একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।  তিনি জানান, পুরো নৃত্য নিঃশ্বাস আটকে সম্পন্ন করতে হয়। প্রায় প্রত্যেক ৫০ সেকেন্ডে একবার নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। একদিনে ২ শতাধিক বার পানিতে যেতে হয়। আরো একটি কঠোর চ্যালেঞ্জ হলো পানির নিচে চোখ খুলে রাখতে হয়। যা সাধারণ মানুষের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে এই নাচ সম্পন্ন করার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

আমরা টিভি স্ক্রিনে যে অসাধারণ সুন্দর নৃত্য ‘প্রার্থনা’ দেখতে পাই, তা ১ মিনিটেরও কিছু বেশি, তবে যথাক্রমে তিনবার শুটিং করতে হয়। মোট ২৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর তা সম্পন্ন করা যায়।

এই অসাধারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং টুইটারে বলেছেন: অবিশ্বাস্য সুন্দর, রাজহংসের মত অমায়িক, ড্রাগনের মত চটপটে। ইউনেস্কোও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নাচের প্রশংসা করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের হ্য নান টেলিভিশনের প্রযোজনা ‘তুয়ান উ উত্সবের আশ্চর্যজনক যাত্রা’ গালা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১০ কোটি বার দেখা হয়।

তাহলে কেন এমন ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এত বেশি দর্শক পছন্দ করেছে? এর পিছনে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার বলেছিলেন, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতে হবে। ঐতিহাসিক সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে। সাংস্কৃতিক আস্থা সুসংবদ্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, চীনের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির উদ্ভাবন জোরদার করা উচিত, যুগের চেতনার আলোকে চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে প্রাণচঞ্চল করা উচিত।

যা সবচেয়ে ঐতিহ্যিক বিষয়, এটাই আসল ফ্যাশন। এটি একটি জাতির সাংস্কৃতিক আস্থা হওয়া উচিত। এই কথা চীন ও বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য।