গত বুধবার ছিল বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এদিন বাংলাদেশে দুধসহ দুগ্ধজাত তৈরি প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশের ‘দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড’ বা মিল্ক ভিটা। সেই সঙ্গে, ২২ ধরণের পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। এই অবস্থায় বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ইউএইচটি দুধ। স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজ সংরক্ষণের সুবিধার কারণে এই জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের দুধ পানের প্রবণতা কম। সরকারি পর্যায় থেকে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে দুধের উৎপাদন ও সংরক্ষণের পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সংকট মোকাবিলার করা উচিত।
গত ১৩ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিল্ক ভিটার পণ্যের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
বিশ্ব দুগ্ধ দিবসে বাংলাদেশে তরল দুধ থেকে শুরু করে দুগ্ধজাত অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ২২ ধরনের দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বাড়িয়েছে মিল্ক ভিটা।
পত্রিকার খবরে দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটার প্যাকেটজাত তরল দুধে ৫ টাকা দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০ টাকা। আগে এর দাম ছিল ৭৫ টাকা। এ ছাড়া আধা লিটারের প্রতি প্যাকেট দুধের দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়েছে। ২৫০ মিলিলিটারের প্যাকেটের দাম করা হয়েছে ২৫ টাকা। এত দিন এর দাম ছিল ২২ টাকা। তবে ২০০ মিলিলিটারের প্যাকেটের দাম ২০ টাকাই আছে। সেই সঙ্গে প্রতি কেজি ঘিয়ের দাম হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। এত দিন এর দাম ছিল ১ হাজার ১৮০ টাকা। এক কেজি মিষ্টি দইয়ের দাম হয়েছে ২১০ টাকা, আগে বিক্রি হতো ১৯০ টাকায়। এক কেজি টক দইয়ের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭৫ টাকা।
একই সময়, স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজে সংরক্ষণের সুবিধার কারণে বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ইউএইচটি দুধ। গত বছর ইউএইচটি দুধের বিক্রি বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। এভাবে দুধ সংরক্ষণ ও বিক্রির প্রক্রিয়া পাশ্ববর্তী দেশ থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বে ব্যাপক প্রচলিত রয়েছে। এজন্য প্রথমে গরুর দুধ ১৩৫ থেকে ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চার সেকেন্ড উত্তপ্ত করে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর ছয় স্তরবিশিষ্ট টেট্রাপ্যাকের বিশেষ কার্টন প্যাকে তরল দুধ প্যাকেটজাত করা হয়। এটাই হলো উচ্চ তাপমাত্রা বা আলট্রা হাই টেম্পারেচার (ইউএইচটি) পদ্ধতি। এতে টেট্রাপ্যাকের কার্টন ভেদ করে ভেতরে আর্দ্রতা, বাতাস ও সূর্যের আলো ঢোকে না। ফলে দুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বা ছয় মাস ভালো থাকে।
যে কোনো সময় প্যাকেট খুলে সরাসরি এই ইউএইচটি দুধ পান করা যায়। এই পদ্ধতি প্রায় ৬০ বছর আগে উদ্ভাবিত হয়। ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশে। ২০০৩-০৪ সালে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এই ইউএইচটি দুধ বাংলাদেশের বাজারে চালু করে।
এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দুধ পানের প্রবণতা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার। বাংলাদেশে দুধের চাহিদার তুলনায় উৎপাদনও বেশ কম। তা ছাড়া দুধ ফুটিয়ে পান করার ঝামেলা পোহাতে গিয়ে অনেকেই পান করা থেকে বিরত থাকেন।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। দেশে বার্ষিক দুধের চাহিদা ১৫৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপাদন হয় ১১৯ লাখ মেট্রিক টন।
মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সবগুলো উপাদান দুধেই পাওয়া যায়। তাই দেহ গঠন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় দুধের উপকারিতা অপরিসীম। ছোট থেকে বড় সবার জন্যই দুধ পানের স্বাভাবিক অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। আর একে জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে সংরক্ষণ পদ্ধতি ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।