জুন ২: সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরে তাইওয়ান ইস্যুকে আবারও সামনে নিয়ে আসেন। বাইডেনের সফরের সময় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রিন স্বীকার করেছেন যে, তথাকথিত ‘যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ভারত-অস্ট্রেলিয়া কোয়ার্টেট’ আপাতদৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। তবে, এই নতুন জোট একদঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে মার্কিন উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ। গ্রিন আরও বলেছেন, ‘আপনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অন্যান্য নেতার সাথেও তাইওয়ান নিয়ে কথা বলতে শুনবেন।’
প্রকৃতপক্ষে, এই ‘চারপক্ষীয় ব্যবস্থা’ হল ‘একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বজায় রাখার’ নামে এই অঞ্চলকে বিভক্ত করার এবং সম্ভাব্য সর্বাধিক পরিমাণে চীনের বিরুদ্ধে অপতত্পরতা চালানোর কৌশল। এটি, আরও সরাসরি বলতে গেলে, তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন নিপীড়ন বৃদ্ধির মঞ্জ, যা স্বাভাবিকভাবেই চীনের জন্য উদ্বেগজনক। গত ২৭ এপ্রিল ইউএস হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তাইওয়ানের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষকে চলতি বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণে সহায়তা করতে একটি বিল পাস করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজকে সম্পূর্ণরূপে দ্বিমুখী হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘এক চীননীতি’ মেনে চলার কথা বলছে, অন্যদিকে তারা চীনের সাথে ঝামেলা করার কোনো সুযোগ হাত ছাড়া করছে না। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে যে, চীনের মূল ভূখণ্ড তাইওয়ান "আক্রমণ" করতে পারে। পাশাপাশি, দেশটির একশ্রেণির রাজনীতিবিদ "তাইওয়ানের স্বাধীনতা"-র পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলছে। তারা তাই্ওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন বিরোধের প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তার কল্পিত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে, অনেক অনুষ্ঠানে "চীন হুমকি তত্ত্ব" অতিরঞ্জিত করার কোনো অপচেষ্টা বাদ দেয়নি। ওয়েন শাওবিয়াও, যিনি তাইওয়ান ইস্যুতে একজন পণ্ডিত, মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন মধ্য-মেয়াদী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সুবিধা দিতেই তাইওয়ান ইস্যুকে উস্কে দিচ্ছে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন।
নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে এবং অন্য দেশের স্বার্থ নষ্ট করতে গুন্ডামি অব্যাহত রেখেছে। এই চরম স্বার্থপর অভ্যাসটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা ক্রমশ ঘৃণ্য ও একপেশে হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তাইওয়ান ইস্যু চীনের মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর অধিকার নাই। গত ১৮ মে, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য এবং সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির বিদেশ বিষয়ক কমিশন কার্যালয়ের পরিচালক ইয়াং চিয়ে ছি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভানের সাথে ফোনে কথা বলেন। ইয়াং চিয়েছি জোর দিয়ে বলেন, তাইওয়ান ইস্যুটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদনশীল এবং মূল সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্র অনেক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করেছে যে, তারা ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলে এবং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ সমর্থন করে না। অথচ তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থান তার সাম্প্রতিক বিবৃতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘তাইওয়ান কার্ড’ খেলার উপর জোর দেয় এবং আরও ভুল পথে চলে, তবে এটি অবশ্যই পরিস্থিতিকে একটি বিপজ্জনক অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। ইয়াং উল্লেখ করেন, জোট গঠনের এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সংঘর্ষ উস্কে দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা কখনই সফল হবে না। চীন অবশ্যই তার সার্বভৌমত্ব এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা যা বলব, তা করব।’
এনবিসি-র এক জরিপ অনুসারে, ৭৫ শতাংশ আমেরিকান বর্তমানে বিশ্বাস করেন যে, তাদের দেশ ‘ভুল পথে যাচ্ছে’। এ ছাড়া, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি জরিপ অনুসারে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুমোদনের হার ৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা তার পূর্বসূরী ট্রাম্পের সমান, রেকর্ড কম। শুধু তাই নয়, বাইডেনের অনুমোদনের রেটিং যুক্তরাষ্ট্রের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যেই কমেছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাকে সমর্থনকারী ভোটারদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে এবং নারী ভোটারদের মধ্যে সমর্থন ৫৩ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং জয়-জয় হল ঐতিহাসিক প্রবণতা এবং জনগণের আকাঙ্খা। প্রবণতা অনুসরণ করার এবং মানব উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেরকে ছোট ছোট বৃত্তে জবরদস্তি করার জন্য তার মস্তিষ্ককে র্যাক করছে; দেশটি বিশ্বাস করে যে তাইওয়ান ইস্যুতে কতা বলতে, চীনকে বাধ্য করতে, এমনকি চীনকে পরাজিত করার সামর্থ্য সে রাখে। এই ধরনের চিন্তাভাবনা অবাস্তব এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক, এবং ফলাফল শুধুমাত্র ব্যর্থতাই হতে পারে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধান করার এবং চীন-মার্কিন পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দেই। চীনে একটি পুরানো কথা আছে যে, আপনি যদি অনেক অবিচার করেন, তবে তা হবে আত্মহত্যার সামিল। যদি যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের নীচের রেড লাইন ক্রস করে, তবে চীন অবশ্যই তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে।(ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)