আপন আলোয় ৭১
2022-06-02 18:13:24

এ পর্বে অন্তরঙ্গ আলাপনে থাকছেন: সুজিত মোস্তফা

 

চীনের শিল্প, চীনের সংস্কৃতি

চীনের ঐতিহ্যবাহী ক্যান্টোনিজ অপেরায় মঞ্চ মাতাচ্ছে শিশুরা

রঙিন পোশাকে মঞ্চ মাতাচ্ছে ছোট ছোট শিশুরা ।মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখছেন দর্শকরা। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরের অপেরা মঞ্চে।

ছবি: ক্যান্টোনিজ অপেরায় অংশ নিয়েছেন এক শিশু

কুয়াংচৌ শহরের পুরনো নাম ক্যান্টন। এই শহরের বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো ক্যান্টোনিজ অপেরা যা সারা চীনে বিখ্যাত। এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ২০১৭ সালে গুয়াংচৌর ক্যান্টোনিজ আর্ট অপেরা মিউজিয়াম এক বিশেষ প্রোগ্রাম শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট শিশুদের তারা ক্যান্টোনিজ অপেরা শিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

ক্যান্টোনিজ অপেরার তারকা শিল্পী চাং লিসিং বলেন, ‘আমি তিন বছর বয়স থেকে জেট লি এবং ব্রুস লির মুভি দেখি। আমি তাদের মতো কুংফু মাস্টার হতে চেয়েছি। তাই আমার মা আমাকে ভিন্ন শরীরচর্চা করতে বলেন, যা পরবর্তীতে আমাকে খুব ফ্লেক্সিবল করেছে। আমি ক্যান্টোনিজ অপেরা পছন্দ করি কারণ এটি মার্শাল আর্টের মতোই। আমি এটা ধরে রাখতে চাই।’

চাং লিসিং দশ বছর বয়সেই চীনা থিয়েটারের প্লাম ব্লজোম অ্যাওয়ার্ড দুবার জয় করেছে যা ক্যান্টোনিজ অপেরায় সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার। এই প্রোগ্রামে অংশ নেয়া শিশুরা ক্যান্টোনিজ অপেরার প্রতি খুব আগ্রহী এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি শিখতে তারা কঠোর পরিশ্রম করে।

ক্যান্টোনিজ অপেরা শিখছে এমন এক প্রশিক্ষণার্থী শিশুর মা হুয়াং ইয়ুসিয়ান বলেন, ‘ আমাদের দিনে তিনঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে ক্লাস নিতে আসতে হয়। ক্লাসের পর বাড়ি ফিরেও প্রতিদিন আরও এক ঘন্টা বেশি প্র্যাকটিস করতে হয়।  মিউজিয়ামের পরিচিতিও বেড়েছে এই কর্মশালার ফলে। দর্শকরা উৎসাহ নিয়ে মঞ্চে শিশুশিল্পীদের চোখ ধাঁধাঁনো পরিবেশনা দেখছেন।

বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে কুয়াংচৌ এবং এর আশপাশে বেশিরভাগ ক্যান্টোনিজ অপেরা দলের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।  এই অপেরার স্বর্ণযুগের পরিবেশনার অনেক দুর্লভ ভিনাইল রেকর্ড এবং অপেরার পোশাকের সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে এখানে।

ক্যান্টোনিজ অপেরা আর্ট মিউজিয়ামের কর্মী থাং ফাইওয়েন বলেন, ‘আশা করি আমাদের কর্মশালার কারণে শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্যান্টোনিজ অপেরার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি হবে। সাধারণ একটি মুভমেন্টের জন্যও প্রয়োজন হয় শত শত বছরের প্রাচীন কলাকৌশলের। প্রতিটি মুদ্রার জন্য অনেক দক্ষতার দরকার। এটা শেখার মূল্য আছে।’

ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে জনগণের মধ্যে আবার জনপ্রিয় করতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে প্রতি সপ্তাহে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করছে ক্যান্টোনিজ অপেরা আর্ট মিউজিয়াম। ক্যান্টোনিজ অপেরা আর্ট মিউজিয়াম এখন পর্যন্ত তিনটি স্থানীয় স্কুলের প্রায় ৬০০ শিশুকে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

অন্তরঙ্গ আলাপন

ঘটা করে জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন হচ্ছে, নজরুল চর্চা হচ্ছে না: সুজিত মোস্তফা

ছবি: নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা

এক.

জন্মদিনে বা মৃত্যুদিবসে ঘটা করে নজরুলকে স্মরণ করা হয়- ঠিক আছে। কিন্তু এটাতে আসলে তেমন কিছু এসে-যায় না। মানে পত্র-পত্রিকায় কিছু ছবি, খবর হওয়া ইত্যাদি। নজরুলকে নিয়ে যারা কাজ করেন- যেমন আমরা – আমাদের হয়তো নাম ছড়ায়। কেউ কেউ নজরুলকে ব্যাংক করে, তাঁকে উৎস বানিয়ে আসলে নিজের নাম প্রচারেই ব্যস্ত থাকে। নজরুল সেখানে মুখ্য নন। কারণ নজরুল যদি মুখ্য বিষয় থাকতেন তাহলে নজরুল কর্মীদের মধে একতা থাকতো। সেই একতাটাই নেই বাংলাদেশে।

দুই.

সারা বছর ধরে নজরুলকে নিয়ে কাজ করার যে ব্যাপার- সেটা স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে- সেটা হচ্ছে না। যেমন আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গে যান সেখানে দেখবেন মেট্রোরেল ২৪ ঘন্টা রবীন্দ্রসংগীত বাজছে। তারপর সেখানে ওরা যত বাংলা চলচ্চিত্র বানায়, সেগুলোতে ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করছেন। এটা একটা স্ট্রাটেজি- টু কিপ দ্য সং ইন্টু দ্য মাইন্ড অব দ্য পিপল। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র মেকাররা নজরুলের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাননি, খুব রেয়ারলি একটা দুটো গান হয়তো ব্যবহার হয়েছে।

ছবি: অতিথিদের কাছ থেকে নজরুল পদক গ্রহণ করছেন শিল্পী সুজিত মোস্তফা

তিন.

আগে বিটিভিতে একটা মিনিমাম অডিশন দিয়ে ছেলেমেয়েদের ঢুকতে হতো, একটা মানবিচার হতো। আর এখন অনেক চ্যানেল হয়ে যাওয়ায় ব্যক্তিগত যোগাযোগ, পয়সার জোর- নানাভাবে হাবিজাবি আর্টিস্ট (ভালোরাও আসছে) ঢুকে পড়ছে। জনরুচি তৈরি করা মিডিয়ার একটা বড় ফাংশন। তো এগুলো জনরুচি তৈরি করার চেয়ে জনরুচি ধংস করছে অনেক বড়ভাবে।

এ সব কথা বলে আসলে খুব একটা লাভ নেই। আমাদের যারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, যারা এ সব বিষয়ে পরিবর্তন আনতে পারতেন- তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেন না। তারা সব থেকে বেশি বোঝেন, যেহেতু তারা ক্ষমতার জায়গাটিতে বসে আছেন।

চীন আন্তর্জতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে- নজরুল চর্চা বিষয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত নজরুল পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নজরুলসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সংগঠক সুজিত মোস্তফা। শুনিয়েছেন নজরুলের কিছু স্বল্পশ্রুত গান।

 

সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্ক জানাতে পারেন আপনার মূল্যায়ন।

 

পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমরা বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরো কিছু খবর এবং গুণিজনের অন্তরঙ্গ আলাপন নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।

 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া