আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৭৬
2022-06-02 18:08:05

১. ফেলে দেয়া জিনিস থেকে শিল্পকর্ম করেন খালেদা সেলিম

২. ড্রাগন বোটের গল্প : পিতৃভক্ত কন্যা সাও ই

৩. ড্রাগনবোট উৎসবের গান

৪. ময়ূররানী চিআওচিআও

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া । কেমন আছেন আপনারা?

নারীদের রয়েছে সহজাত সৌন্দর্যবোধ। তারা শখের বসে অনেক সময় সূচিকর্ম এবং নানা রকম শিল্পকর্ম করে থাকেন। অনেক নারী এই শখ থেকেও গড়ে নেন নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়ের পথ। আজকে অনুষ্ঠানে আমরা এমন একজন নারীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যিনি নিজের তৈরি শিল্পকর্মে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন। খালেদা সেলিম এমনই একজন শিল্পী। তিনি ফেলে দেওয়া বস্তু দিয়ে নানা রকম শিল্পসামগ্রী তৈরি করেন।

আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার

ফেলে দেয়া জিনিস থেকে শিল্পকর্ম করেন খালেদা সেলিম

আইসক্রিমের ফেলে দেওয়া প্যাকেট, খালি ক্রিমের কৌটা কিংবা জুসের বোতল –এসব ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে নিজের অনন্য দক্ষতায় শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন খালেদা সেলিম।

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে বিশেষ শিল্প প্রতিভা ছিল। তিনি নিজের কাপড় ডিজাইন করতেন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তার তৈরি কাপড় বিপণনও করেছেন। করোনা মহামারির সময় যখন লকডাউনে থাকতে হয় তখন তিনি ফেলে দেওয়া বস্তু থেকে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি শুরু করেন। যেমন ওষুধের খালি কৌটা, ওয়ানটাইম ইউজড কর্ক ট্রে , কেকের নিচের কার্ডবোর্ড থেকে তিনি বিভিন্ন রকম দৃষ্টিনন্দন শিল্পসামগ্রী তৈরি করেন।

গতবছর তিনি ডব্লিউভিএ (উইমেন ভলেনটারি অ্যাসোসিয়েশন) মেলায় স্টল নিয়ে তার এসব শিল্পকর্ম বিক্রি শুরু করেন। ব্যাপক সাড়া পান ক্রেতাদের কাছ থেকে।

খালেদা সেলিম কবিতা লেখাও শুরু করেন গত বছর। এ বছর বইমেলায় ‘অপেক্ষা’ নামে তার একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। এজন্য তিনি একটি সম্মাননাও পেয়েছেন।

খালেদা সেলিম ছোটবেলা থেকে একটি শিল্পী পরিবারে বড় হয়েছেন। তার বড়ভাই খালিদ হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি নজরুল সংগীত শিল্পী। খালেদা সেলিমও ছোটবেলায় গানের চর্চা করেছেন। তিনি আকাশ ছুঁতে চাই এর শ্রোতাদের জন্য লালনসংগীতের দুই চরণ গেয়ে শোনান।

খালেদা সেলিম বাগান করতেও ভালোবাসেন। তিনি ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনেও পারদর্শী। নিজের বাড়ি তিনি নিজেই নকশা করে গড়ে তুলেছেন। তার বাগানও সাজিয়েছেন দৃষ্টিনন্দনভাবে, সেখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছও রয়েছে।

আয়না নামে তার একটি অনলাইন বুটিক শপ রয়েছে। সেখানে তিনি নিজের তৈরি নানা রকম পোশাক বিক্রি করেন। ভবিষ্যতে তিনি নিজের শিল্পকর্ম আরও বড় পরিসরে বিপণন করতে আগ্রহী।

 

ড্রাগনবোটের গল্প : পিতৃভক্ত কন্যা সাও ই

 

চীনের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ড্রাগন বোট উৎসব। চীনা ভাষায় একে বলা হয় তুয়ান উ চিয়ে। এই উৎসবের পিছনে রয়েছে অনেকগুলো কাহিনী বা মিথ। এর মধ্যে একটি মিথ হলো বাবার প্রতি কন্যার অপরিসীম ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে।  চলুন শোনা যাক সেই গল্প।

 

ড্রাগন বোট উৎসবের সূচনার পিছনে  অনেকগুলো কিংবদন্তির একটি হলো পিতার প্রতি  এক কন্যার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কাহিনী। এই কাহিনীটি ১৩০ থেকে ১৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত ঘটনার বিবরণ।

প্রাচীনকালে সাও ই (১৩০-১৪৩ খ্রিস্টাব্দ)নামে এক তরুণী মধ্য পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে বাস করতেন। সাও ই তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন।

একদিন তার বাবা একটি নদীতে ডুবে যান। বাবার মৃতদেহের সন্ধানে সাও ই আহার নিদ্রা ত্যাগ করে নদীর তীরে ঘুরতে থাকেন এবং মর্মস্পর্শী বিলাপ করতে থাকেন।

পঞ্চম চান্দ্র মাসের পঞ্চম দিনে পিতার শোকে সাও ই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাঁচদিন পর পিতা ও কন্যার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। দেখা যায় সাও ই তার বাবার মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে আছেন।

বাবার প্রতি কন্যার এই মহান ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ স্মরণে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। নদীটির নামকরণও করা হয় সাও এর নামে। সাও নদীটি হলো হাংচৌ প্রদেশে প্রবাহিত ছিয়াংথাং নদীর একটি শাখা নদী।

 সাও ইর স্মরণে উত্তর চেচিয়াং-এ ড্রাগন বোট উৎসব পালন করা হয়।

ড্রাগনবোট উৎসবের গান

চীনের বিভিন্ন জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ লোকজ সংগীত। ড্রাগনবোট উৎসবকে ঘিরে চীনের থুচিয়া জাতির একটি লোকজ সংগীত শুনবো এখন। গানটি পরিবেশন করছেন মিয়াও জাতির কন্যা এবং চীনের একজন বিখ্যাত শিল্পী সুং চুইং।

ময়ূররানী চিআওচিআও

ময়ুর পালনের মাধ্যমে চীনের গ্রাম পর্যায়ের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছেন ময়ূরের রানী হিসেবে খ্যাত  চিআওচিআও নামে এক উদ্যোগী নারী। তার বিষয়য়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের সিহং কাউন্টির মেয়ে সুন চিআওচিআও। তার ক্রমবর্ধমান ব্যবসার জন্য তিনি বেশ পরিচিতি অর্জন করেছেন। ময়ূর পালনের মাধ্যমে তিনি তার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তাই  তিনি মানুষের কাছে "সোনার ময়ূর" নামেই বেশি পরিচিত।

২০১৭ সালে সূর্য ময়ূর পালন দিয়ে শুরু হয় তার ময়ূরের ব্যবসা। তারপর আস্তে আস্তে বাড়তে থেকে ব্যবসার পরিধি। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে চিয়াংসু জুড়ে।  এই ব্যবসায় বর্তমানে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউয়ান বার্ষিক আয় হয় তার।

সুনের এই অগ্রযাত্রার কারণে ময়ূর পালন এখন গ্রাম পর্যায়ের অর্থনীতির পাশাপাশি শহরেও প্রভাব ফেলছে।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

ময়ূররানী চিআওচিআও, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

ড্রাগনবোটের গল্প : পিতৃভক্ত কন্যা সাও ই, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া