ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে রাশিয়ান তেল আমদানির ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি নিয়ে আলোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।এস্তোনিয়া এবং লাটভিয়া রাশিয়ার ওপর আরো অবরোধ আরোপে সমর্থন করেছে এবং নতুন দফা অবরোধ ব্যবস্থায় গ্যাস আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে চায়। অন্যদিকে, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া এর বিরোধিতা করে। তাদের মতে, এ বিষয়ে আলোচনার কোন দরকার নেই।
গত ৩০ ও ৩১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ একটি শীর্ষ সম্মেলন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একমত হয়েছেন যে, পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত তেল ছাড়া রাশিয়া থেকে অবিলম্বে ৭৫ শতাংশ তেল আমদানি বন্ধ করবে ইইউ। এর মাধ্যমে রাশিয়ার উপর ষষ্ঠ অবরোধ ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার ওপর আংশিক তেল আমদানি নিষেধাজ্ঞা পাস হবার পর, রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের নিষেধাজ্ঞা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিবাদের বিষয়ে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় দিন সম্মেলন শুরু হবার আগে এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে রাশিয়ার ওপর সপ্তম দফা অবরোধ ব্যবস্থায় গ্যাস আমদানি নিষেধাজ্ঞা যোগ করা উচিত্। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি বেশ প্রত্যাশী নন। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, আমার মতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা সপ্তম দফা অবরোধ ব্যবস্থায় থাকতে হবে, তবে বাস্তবতার আলোকে দেখলে এটি বাস্তবায়ন হবে না।
অন্যদিকে, লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে যে মতৈক্যে পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তা সঠিক দিকে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ।অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর সপ্তম দফা অবরোধ ব্যবস্থায় থাকবে না প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা। জার্মানির চ্যান্সেলরেরও একই মত।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংর্ঘষ গুরুতর হয়ে উঠার আগে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ও ৩০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা হতো। অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের নিষেধাজ্ঞা ভিন্ন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া সহজ, তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের নয়।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাশিয়ার উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবরোধ বৃদ্ধির দরকার নেই। তেল নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনি বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ । আমরা কিছু সময়ের জন্য বিরত থাকতে পারি এবং দেখি এবারের অবরোধ ব্যবস্থা কী কী প্রভাব ফেলবে। তার মতে, তেলের তুলনায় গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কম হবে । তবে তা ইউরোপের জন্য আরও সমস্যা সৃষ্টি করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি বিষয়ক কমিটির সদস্য গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, ইউরোপ যত বেশি সম্ভব প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত করছে এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের তরলীকরণ প্রক্রিয়ার ক্ষমতা জোরদার করছে। তবে ইউরোপে রাশিয়ার পুরোপুরি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ মোকাবিলায় আরও প্রস্তুতি নিতে হবে ইউরোপকে।(শিশির/এনাম/রুবি)