আন্তর্জাতিক শিশু দিবস সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য
2022-06-01 10:05:15

আজ পয়লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমাদের শিশুদেরকে জানাই এ দিবসের শুভেচ্ছা।যদিও আজ আন্তর্জাতিক শিশু দিবস, তবে সবদেশ এদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করে-তা কিন্তু নয়। চীন এখন পয়লা জুন এ দিবস পালন করে, তবে আগে চীনের শিশু দিবস এদিন পালিত হতো না। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের শিশু দিবস এবং তার ঐতিহ্য এবং বিশ্বের নানা দেশের শিশু দিবসের কিছু মজার তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

 

১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহিলা ফেডারেশনের মস্কোয় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত শিশুদের স্মরণ, শিশু নির্যাতন রোধ এবং শিশুর জীবিকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার রক্ষায় প্রতি বছর  ১লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তার মানে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস শুরু হয় ১৯৪৯ সালে।তবে তার আগেও চীনে শিশু দিবস ছিল। চীনের ঐতিহ্যিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রথম মাসের সপ্তম দিন, তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন,তুয়ানউ উত্সব, মধ্য-শরত্ উত্সব এবং বসন্ত উত্সবও শিশুদের দিবস বটে। সবাই জানে, চীনা জাতি সভ্যতা এবং নিয়ম-নীতির ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়। তবে উল্লেখিত ওই দিবসগুলোতে শিশুরা অবাধে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে খেলতে পারে বলে প্রাচীনকালে এ ৫টি দিনকে শিশুদের দিবস বলে বিবেচনা করা হতো।

 

চীনা চন্দ্র পঞ্জিকার প্রথম মাসের সপ্তম দিন চীনের মানব দিবস । চীনারা বিশ্বাস করে, নুওয়া নামে একজন দেবী মানুষ তৈরি করেন এবং তিনি ঠিক চন্দ্র পঞ্জিকার প্রথম মাসের সপ্তম দিনে তৈরি করেন ,তাই এদিনকে মানব দিবসকে বলে ডাকা হয়। এ দিনের আরেকটি নামও আছে তা হল ছোট মানুষ দিবস। প্রাচীন চীনা ভাষায় ছোট মানুষের কোন খারাপ অর্থ নেই। ছোট মানুষ মানে বাচ্চা।

 

আর তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন চীনের ঐতিহ্যিক শাং সি দিবস। প্রাচীনকালে এদিন পরিবারের সবাই বাইরে গিয়ে ভ্রমণ করতো। বাসার বাচ্চাদের নিয়ে উপকণ্ঠে বেড়াতে যেত।প্রকৃতিতে শিশুরা ইচ্ছা মতো খেলতে পারতো।

 

তৃতীয় দিবস হল তুয়ান উ দিবস। আর মাত্র দুদিন পর আমরা চলতি বছরের তুয়ান উ দিবস পালন করব।আর প্রাচীনকালে তুয়ান উ ছিল খুব বড় একটি উত্সব। শিশুরা এদিন জুংচি নামে আঠালো ভাত দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার খায় এবং নদীর পাশে এসে ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা দেখতে পারে।

 

তার পর বসন্ত উত্সব ও মধ্য শরত উত্সবও শিশুদের জন্য বড় দিন। আজ আমরা এ দুই উত্সবের ওপর গুরুত্ব দিই, কেমন? বসন্ত উত্সবে শিশুরা নতুন পোশাক পরে, মিষ্টি খায়,লাল খামে রাখা টাকা পায়। আর বসন্ত উত্সবের মতো মধ্য শরত্ উত্সবও পুনর্মিলনের একটি দিন। মুন কেক খেতে খেতে চাঁদ উপভোগ করে, এবং পরিবারের সঙ্গে  আনন্দঘন পরিবেশে এ দিনটি কাটায় শিশুরা।

 

আর ১৯৩১ সাল থেকে চীন ৪ঠা এপ্রিলকে শিশু দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। যখন চীনে চলছিল জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। চীনা শিশুরাও যুদ্ধে যায়। কোন কোন জায়গায় শিশুরাও এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ৪ঠা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় জাপান-বিরোধী শিশু গ্রুপ এবং ওই দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের সঙ্গে মিল রেখে এর তারিখ পয়লা জুনে পরিবর্তন করা হয়। তবে আজকাল চীনের হংকং ও তাইওয়ান অঞ্চলে ৪ঠা এপ্রিলও শিশু দিবস পালিত হয়।

 

সবাই জানে, চীন একটি বহু জাতির দেশ এবং তাতে ৫৬টি জাতি আছে। তাই কোন কোন সংখ্যালঘু জাতির  নিজস্ব শিশু দিবস আছে। যেমন, ই জাতির শিশু দিবস খুব বৈশিষ্ট্যময়। ই ভাষায় শিশু দিবসকে বলা হয় ‘আইমেংক্য’ । তবে শিশু দিবসের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই তাদের। প্রতিটি গ্রাম বসন্তের যে কোন একদিন শিশু দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কখনও তারা এক বছরে দু বার শিশু দিবস পালন করে। এদিন শিশুরা নিজেদের প্রিয় পোশাক পরে। ছেলেরা একটি কাঠের ছুরি হাতে রাখে, আর মেয়েরা  বাঁশের বর্ষা নিয়ে  কাকতাড়ুয়াকে গ্রামের বাইরে বহিষ্কার করে। এ অনুষ্ঠানের পরে শিশুরা বিশেষ এক খাবার খায় এবং দানব সরানো সফলভাবে উদযাপন করে।

 

চীনা শিশু দিবসের প্রচুর কথা বলেছি। তাহলে বিশ্বের অন্য দেশের শিশু দিবস কেমন? সিঙ্গাপুরের শিশু দিবস হল পয়লা অক্টোবর। ওই দিন শিশুদের বদলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষরা ছুটি পায়।বিনোদন পার্কে গেলে প্রাপ্তবয়স্করা অর্ধেক দামে টিকিট কিনতে পারে । তবে শিশুদের  পূর্ণ দাম দিয়ে টিকিট কিনতে হয়।

 

মে মাসের ৫ তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ার শিশু দিবস। এদিন দেশের মোবাইলফোন কোম্পানির প্রচারের দিন।

 

বৃটেনের শিশু দিবস হল ১৪ জুলাই। এদিন স্কুলের আয়োজনে শিশুরা ও বাবা মায়েরা কুকি ও নানা হস্তশিল্প তৈরি করে। পরে নিলাম অনুষ্ঠানে খাবার ও হস্তশিল্প বিক্রি করে দরিদ্র অঞ্চলে অনুদান দেয়া হয়।

 

ভারতে ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস পালিত হয়। এদিন স্বধীনত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন।

 

জাপানে যথাক্রমে মেয়ে দিবস ও ছেলে দিবস পালিত হয়। ৩ মার্চ ও ৫ মে মেয়ে  ও ছেলে দিবস।

 

যদিও বিভিন্ন দেশে শিশু দিবসের তারিখ ভিন্ন, তবে শিশুদের জন্য কামনা ও প্রত্যাশা একই এবং এই দিন শিশুরা সাধারণত উপহার পেয়ে থাকে।

 

আমরা আশা করি, এ বিশ্বের সবশিশু স্বাস্থ্যকরভাবে, সুখে ও নিরাপদে বড় হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)