চলতি বছর পালিত হচ্ছে চীনের মহাকাশযান প্রকল্পের ৩০তম বার্ষিকী। চীনের চিও ছুয়ান উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ কেন্দ্রে দেড় কিলোমিটার একটি রেলপথ রয়েছে। প্রতিবার রকেট কারখানা থেকে লঞ্চ টাওয়ারে উপগ্রহকে স্থানান্তর করা হয় এ রেলের মাধ্যমে। এ রেলপথ চীনা মহাকাশযান শিল্পের ৩০ বছরের উন্নয়ন স্বচোখে দেখেছে।
প্রতিবার রকেটের স্থানান্তরে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। পৃথিবীতে এ রকেটের শেষ যাত্রা এসকর্ট করেন তাঁরা। উতক্ষেপণের আগে রকেটের সঙ্গে ছবি তোলা হয়, এটা একটি ঐতিহ্য।
প্রতিবার শিশুরা সবচেয়ে খুশি হয়। তারা মরুভূমিতে মহাকাশ নগরে বাবা মার সঙ্গে বাস করে। সেখানে শহরের মতো উন্নত না হলেও প্রতিবার রকেট উৎক্ষেপণ তাদের জন্য উত্সবের মতো আনন্দের সময়। তাদের বাবা মারা মহাকাশযান শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং এমন পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে তারা নিজেরাও কিছু মহাকাশ তথ্য জানে।সোজা হয়ে দাঁড়ানো রকেটকে লঞ্চ টাওয়ারে স্থানান্তর করা হল বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত একটি পদ্ধতি । পাশাপাশি চিও ছুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রটি চীনের প্রথম সোজা রকেট স্থাপন, পরীক্ষা ও স্থানান্তর কেন্দ্র। তাতে রকেট উত্ক্ষেপণের আগে সোজা করে দাঁড়ানো নিশ্চিত করা হয় । আর লঞ্চ টাওয়ারে কাজের সময় বেশি সাশ্রয় করা হয়।
ইন কুও সিয়াং ৪০ বছর আগে চিও ছুয়ান উত্ক্ষেপণ কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে লং মার্চ এফ পি রকেটের প্রথম স্থানান্তরে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তখন চীনে প্রথম বারের মতো সোজা রকেট স্থানান্তর করা হয়। তিনি বলেন, যখন কারখানার দরজা খোলা হয়, তখন আমরা দাঁড়ানো রকেট দেখেছি। বড় সমতলে দাঁড়িয়ে আছে একটি রকেট। এ স্থানান্তর পথ চীনা মহাকাশযান শিল্প উন্নয়নের সাক্ষী। লং মার্চ এফপি রকেটের প্রধান পরিচালক চিং মু ছুনও গেল ৩০ বছরের উন্নয়নে স্বচোখে দেখেছেন এবং অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে ১৩ বারের মতো মহাকাশযান, দুটি থিয়ান কুং স্পেস স্টেশন উৎক্ষেপণ করা হয়। আর আজ আমাদের ১৬তম উৎক্ষেপণ । শেন চৌ এক থেকে শেন চৌ ১৪ পর্যন্ত আমাদের প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে এবং আমাদের দলও অনেক অভিজ্ঞ হয়েছে।
রং ই হলেন লং মার্চ রকেটের প্রধান নকশাকার, তিনিও চীনা মনুষ্যবাহী রকেটের প্রথম নারী প্রধান নকশাকার। তিনি বলেন, আমাদের সিনিয়র কর্মীরা কঠোর পরিবেশে গবেষণা কাজ করেছেন এবং রকেটের নির্ভরযোগ্যতার ভিত্তি তৈরি করেছেন। আমিসহ পরবর্তী কর্মীরা খুব সৌভাগ্যবান যে আমরা চীনা মহাকাশযান শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের সময়ে কাজ করছি।
১৯৯২ সালে চীনে শুরু হয় মনুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকৌশল এবং ১৯৯৯ সালে উৎক্ষেপণ করা হয় প্রথম শেন চৌ স্পেসসিপ। চীন এ মানবহীন থেকে মনুষ্যবাহী, স্পেস
স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্তি থেকে নির্মাণ পর্যন্ত বড় সফলতা লাভ করেছে। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মহাকাশযান কর্মীর নীরব পরিশ্রম।
এবারের রকেট স্থানান্তর এসকর্ট দলে অনেক যুবক কর্মীও রয়েছেন। তারা এখন সিনিয়রদের কাছ থেকে দায়িত্ব আর স্বপ্নের ভার নিয়েছেন।
চীনের স্পেস স্টেশনে ইতোমধ্যে দু বারের মতো মহাকাশচারীরা বাস করেছেন। শেন চৌ ১৪-এর ক্রু ৬ মাসের কাজ শেষ করে চলতি বছরের শেষ দিকে চীনা স্পেস স্টেশনের নির্মাণ ও স্থাপন কাজ শেষ করবেন। তার জন্য আমাদের আন্তরিক শুভ কামনা রইল। (শিশির/এনাম/রুবি)