চীনে সম্প্রতি শুরু হয়েছে যন্ত্রের সাহায্যে প্রধান গ্রীষ্মকালীন ফসল ঘরে তোলার কার্যক্রম। এ বছর এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। ধীরে ধীরে তা এগুবে উত্তরাঞ্চলের দিকে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এখন পর্যন্ত চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯০ শতাংশ জমির গম কাটা হয়ে গেছে।
চীনের কৃষিশিল্প ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুসারে, ২০২২ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উত্পাদন ৬৫ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। চীন বহুজন দেশ। এখানে খাদ্যশস্যের উত্পাদন যেমন বেশি, তেমনি খাদ্যশস্যের চাহিদা ও ভোগও বেশি। সরকারি হিসেবে চীনের ১৪০ কোটি মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৭ লাখ টন খাদ্যশস্য, ৯৮ হাজার টন ভোজ্যতেল, ১৯ লাখ ২০ হাজার টন শাকসবজি এবং ২ লাখ ৩০ হাজার টন মাংস লাগে।
২০২১ সালে মহামারীর মধ্যেও চীনে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি টন, যা একটি নতুন রেকর্ড।
প্রাচীন আমলে চীনাদের মূল খাবার ছিল চাল ও গম। তবে চীনা জনগণের জীবনমান এখন অনেক উন্নত হয়েছে। তাদের খাদ্যতালিকায় এখন মাংস, ডিম, দুধ, সীফুড, ফল ও সবজিও যুক্ত হয়েছে। এসব খাবার চীনাদের, বিশেষ করে ৪৫ কোটি মধ্যবিত্তের, খাবার-টেবিলে নিত্যদিনই শোভা পায়।
চীনে কৃষিশিল্পে কাঠামোগত সংস্কার সাধিত হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরেই। চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ খাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং এতে খাদ্যশস্যের উত্পাদন ক্রমাগত বেড়েছে, খাদ্যশস্যের মান ও বৈচিত্র্য বেড়েছে। এই প্রক্রিয়ায় চীনারা ‘পর্যাপ্ত খাদ্য’ থেকে ‘ভালোমন্দ খাদ্য’ এবং আরও পরে ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য’ খাওয়ার সুযোগ পায় ও পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ব্যাপকভাবে কৃষিশিল্পের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে চীনা কৃষিশিল্পের কাঠামোয় আরও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটবে। এতে এখনও টিকে থাকা ঐতিহ্যগত কৃষিপদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে, চাষের আওতায় আসবে আরও বেশি জমি, এবং কৃষিশিল্পে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির বৃদ্ধি সময় ও শ্রম-ব্যয় আরও সাশ্রয় করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধি প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিশিল্পে আরও উন্নয়ন ঘটবে।
আধুনিক কৃষিশিল্পে বৃক্ষরোপণ ও মৎস্যচাষও অন্তর্ভুক্ত। ২০১৫ সাল থেকে চীনে মত্স্যশিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। তবে, অতিরিক্ত মাছ ধরাও টেকসই উন্নয়নের জন্য ভালো নয়। সেজন্য চীন মত্স্যচাষের টেকসই উন্নয়নের জন্য উপযোগী প্রযুক্তি উন্নত করার দিকে মন দিয়েছে। এক্ষেত্রে চীন ইতোমধ্যেই অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অগ্রগতি অর্জন করবে বলে আশা করা যায়।
চীনের কৃষিশিল্প ইতোমধ্যেই শ্রমঘন শিল্প থেকে প্রযুক্তিঘন শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। চীনে রয়েছে বিশ্বের ৯ শতাংশ চাষযোগ্য জমি এবং ৬ শতাংশ স্বাদুপানির সম্পদ। এ সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেই চীন বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের খাদ্যচাহিদা মিটিয়ে থাকে। চীন মানবজাতির খাদ্য ও বস্ত্রের সমস্যা সমাধানে বিশাল অবদান রাখছে। সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার নতুন পর্যায়ে, মানুষের ক্রমবর্ধমান খাদ্যচাহিদা পূরণে চীন রাখছে নিজের ভূমিকা। (ছাই/আলিম)