তাঁরা চিকিৎসক, তাঁরা যোদ্ধা
2022-05-27 18:54:15

আমরা সবাই জানি, চীনের মহামারি শুরু হয় উ হান শহর থেকে। তখন তারা এই ভাইরাস সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না, কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়, চিকিত্সা করতে করতে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। তখন সেই শহরের অবস্থা কেমন ছিল? চিকিত্সকরা কীভাবে এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন? আজ আপনাদেরকে জানাবো চীনে এমন একজন তরুণ নার্সের গল্প, আমরা তার সঙ্গে ফিরে যাবো সেই কঠোর সময়।

 

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ সম্মেলনের বেইজিং নারী সম্মেলনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে বিশেষভাবে চীনা এক নার্সের গল্প বলেছিলেন। এই তরুণ নার্স যখন চীনের উ হান শহরে করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে সাহায্য দিতে গিয়েছিলেন।

 

তিনি বলেন: চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের একজন তরুণ নার্স, তাঁর বয়স ২০ বছরেরও কম। সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কম বয়সের মানুষ, তোমার নিজেরই অন্যের সাহায্য দরকার। তবে এই ছোট নার্স বলে, যখন প্রতিরোধমূলক পোশাক পরি, তখন আমি আর ছোট শিশু থাকি না। এই কথা গোটা চীনকে মুগ্ধ করেছে।

 

এই নার্সের নাম লিউ চিয়া ই। তিনি কুয়াং তুং প্রদেশের হুই চৌ শহরের হুই ছেং এলাকার চীনা চিকিত্সা হাসপাতালের একজন নার্স। ২০২০ সালে যখন উহান শহরে মহামারি দেখা দেয়, তখন হাসপাতাল সব কর্মীর মধ্যে কে কে সেখানে গিয়ে সাহায্য দিতে পারবে তা জানতে চায়। তখন লিউ চিয়া ই রাতের শিফটে কাজ করছিলেন, তিনি দ্বিধা না-করে সবার আগে নিজের নাম নিবন্ধন করেন।

লিউ চিয়া ই বলেন, তখন উ হানের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল। তিনি নিজের জ্ঞান ও পেশাদারী সামর্থ্য দিয়ে এই শহরটিকে সাহায্য করতে চান। মনে নিশ্চয় ভয় আছে, তবে তাঁর কাছে এই সাদা ইউনিফর্ম মানে দায়িত্ব। তখন তিনি মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে উ হানে যান।

লিউ চিয়া ই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ের সাক্ষী। আর উ হান শহরের তুংসিহু হাসপাতাল ছিল তাঁর যুদ্ধের মাঠ।

তিনি বলেন, তাঁর প্রধান কাজ ছিল অস্থায়ী হাসপাতালের কর্মীদের জন্য প্রতিরোধমূলক পোশাক খুলে দেওয়া। কর্মীদের নিরাপদে অস্থায়ী হাসপাতাল থেকে বের হতে সাহায্য করা। যখন চিকিৎসকের ডিউটি শিফ্ট হয়, তখন নার্স লিউ-এর সবচেয়ে ব্যস্ততার সময়।

পোশাক ধীরে ধীরে খুলতে হয়। নাইলে ভাইরাসের অ্যারোসল সৃষ্ট হতে পারে, ভাইরাস খুব সম্ভবত চুল থেকে বের হয়। আর যখন মানুষ থাকে না, তখন লিউ হাসপাতালটি জীবাণুমুক্ত করেন, চিকিৎসার আবর্জনা প্যাকেজ করেন।

 

ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেন, একাই থাকেন। অস্থায়ীভাবে তৈরি এই ছয় বর্গমিটারের ছোট কক্ষ, এক দিকে দূষিত এলাকা, আরেক দিকে ভাইরাসমুক্ত এলাকা। নার্স লিউ প্রতিদিন এই ছোট কক্ষে ছয় ঘণ্টা থাকেন, দেখতে অনেক সহজ হলেও, প্রতি মুহূর্তেই বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।

লিউ জানান, চিকিত্সা বর্জ্য পরিষ্কার করা এবং চিকিৎসকের প্রতিরোধমূলক পোশাক খোলার সময় তাঁর বার বার হাতের জীবাণুমুক্ত করতে হয়। একদিন ঘন ঘন হাত জীবাণুমুক্ত করতে গিয়ে তাঁর গ্লভসে একটি ছোট ছিদ্র হয়। তখন তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

যদিও সবসময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তবুও নার্স লিউয়ের পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে আলাপের সময় খুব কম কাজের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সহকর্মীর চোখে নার্স লিউ খুব উষ্ণহৃদয় এবং লাভলি ছোট মেয়ে। সে গান শুনতে পছন্দ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রিয় খাবার শেয়ার করতে পছন্দ করে।

 

নার্স লিউ বলেন, প্রতিরোধমূলক পোশাক পরে আমি আর শিশু থাকি না। আমার সহকর্মীরা হাসপাতালের ভিতরে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করেন, আমি এই মেইন গেটে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। তাঁরা নিরাপদে হাসপাতাল থেকে বের হন, তা দেখে আমিও খুব খুশি।

২০২০ সালের মার্চ মাসে লিউ-এর হাসপাতালের চিকিত্সক দল কর্তব্য সম্পন্ন করে হুই চৌ শহরে ফিরে যান।

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে নার্স লিউ-এর হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যালয় স্থাপন করা হয়। নার্স লিউ-এর সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হওয়ায় তাঁকে এই বিভাগের দায়িত্ব দেয় হাসপাতাল।

 

তিনি হাসপাতালে প্রত্যেক বিভাগে গিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেন। যেমন, সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত পণ্য ব্যবহার করা ইত্যাদি।

 

২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মহামারি বন্ধ হয় নি। পরিস্থিতির বার বার পরিবর্তন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হুই চৌ শহরে আবারও মহামারি দেখা দেয়। নার্স লিউ-এর হাসপাতাল আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তিনি হাসপাতালের নিউক্লিক এ্যাসিড নমুনা সংগ্রহ করা এবং টিকা দেওয়ার কাজে অংশ নেন, প্রতিদিন সহকর্মীদের সঙ্গে জীবাণুমুক্তকরণ কাজ করেন, তাদের বিশ্বাস, মহামারি নিশ্চয় পরাজিত হবে।