মে ২৬: ২০২১ সালের ১৫ই মে চীনের প্রথম মঙ্গল অনুসন্ধানযান ‘থিয়ান ওয়েন-১’ সফলভাবে মঙ্গলে অবতরণ করে। সেটিই ছিল মঙ্গলে চীনের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ‘পদচিহ্ন’। তারপর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। উত্ক্ষেপণ, কক্ষপথে থেকে মঙ্গলকে আবর্তন, মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ, এবং মঙ্গলযানের রোভারের মঙ্গলের বুকে ভ্রমণ ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পৃথিবীতে প্রেরণ—থিয়ান ওয়েন-১-এর প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এ পর্যন্ত ‘চু রুং’ রোভার মঙ্গলের উত্তরের নিম্নভূমির ইউটোপিয়া সমভূমিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় আছে এবং প্রায় ২০০০ মিটার ভ্রমণ করেছে। এসময় রোভারটি অনেক মূল্যবান বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর কিছুদিন আগে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ‘থিয়ান ওয়েন-১’ মঙ্গলে অবতরণের পর বিগত এক বছরে ‘চু রুং’রোভারটি মঙ্গলগ্রহে ৩৫৬ ‘মঙ্গলদিন’ কাজ করেছে এবং মোট ১৯২১ মিটার ভ্রমণ করেছে। মঙ্গলযানের অরবিটার উৎক্ষেপণের পর থেকে ৬৬১ দিন ধরে উড়ছে এবং মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশের পর থেকে রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে মঙ্গলের বিভিন্ন স্থান শনাক্তের কাজ করছে। বর্তমানে দুটি যন্ত্রই ভাল অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত অরবিটার ও রোভার মোট ৯৪০ জিবি তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
চীনের মহাকাশ-গবেষণার ইতিহাসে ‘থিয়ান ওয়েন-১’ মিশন থেকে অনেককিছুই অর্জিত হয়েছে। এবারই প্রথম চীনের কোনো যান অন্য গ্রহে পৌঁছেছে। মঙ্গলযানটি ৪০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীর সাথে টেলিযোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। তা ছাড়া, এবারই প্রথম চীন মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে সরাসরি বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে।
২০২২ সালেও ‘থিয়ান ওয়েন ১’ অনেক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার বাঘ বছরের বসন্ত উৎসবের প্রাক্কালে, মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ থেকে ‘সেলফি ভিডিও’ পাঠায় ‘থিয়ান ওয়েন ১’; বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঁচ তারকা লাল পতাকা এবং শীতকালীন অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকের প্রতীককে একই ফ্রেমে বাঁধে মঙ্গলযান।
‘চীনের মহাকাশ-গবেষণা, ২০২১’ শ্বেতপত্র অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে চীন গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্প অব্যাহত রাখবে; গ্রহাণু অনুসন্ধানযান উৎক্ষেপণ করবে; পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রহাণুর সম্ভাব্য আঘাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবে; এবং মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কাজ চালিয়ে যাবে।
চীনের গ্রহ-অন্বেষণ প্রকল্প উন্মুক্ত। চীন সবসময় গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পক্ষে। ‘থিয়ান ওয়েন ১’ মিশন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়, একাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে চীন। এই প্রক্রিয়ায় ‘ইএসএ’-এর সাথে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চালিয়েছে চীন; অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের সাথে বৈজ্ঞানিক পেলোড খাতে সহযোগিতা চালিয়েছে চীন; আর্জেটিনায় অবস্থানরত মহাকাশ স্টেশন হচ্ছে চীনের প্রথম বিদেশী গভীর মহাকাশ স্টেশন, যা ‘থিয়ান ওয়েন ১’-এর জন্য পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ সহায়তা যোগায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি মঙ্গল অনুসন্ধান কক্ষপথ ডেটা বিনিময় ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে চীন। ভবিষ্যতেও চীনের এমন উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে। (উর্মি/আলিম)