মে ২৫: বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ মহামারী ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে বর্তমানে চীনা অর্থনীতি একাধিক চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে এই প্রেক্ষাপটেও, টেসলার শাংহাই কারখানার উত্পাদনকাজ সম্প্রসারিত হতে চলেছে, এবং এটি ভবিষ্যতে বিশ্বে টেসলার বৃহত্তম অটো রপ্তানিকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনে বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহ কমেনি এবং বিদেশি পুঁজি চীনা অর্থনীতিতে ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীনা অর্থনীতি বুঝতে হলে ‘সময়’ ও ‘পরিস্থিতি’ বিবেচনা করা উচিত। যদিও চীনের অর্থনীতি স্বল্পমেয়াদে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ফ্যাক্টরের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে, তবে এ কারণে এটি ‘স্থবির’ হবে না। প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিনও ‘বন্ধ’ হবে না। দীর্ঘমেয়াদে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অভ্যন্তরীণ প্রবণতা পরিবর্তিত হয়নি এবং চীনের অর্থনীতির ভাল প্রবণতাও পরিবর্তিত হয়নি।
বর্তমানে, চীনা অর্থনীতি নানান দিক দিয়ে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। পণ্যের চাহিদা কমেছে, সরবরাহব্যবস্থায় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিও ‘বাতাসের বিপরীতে’ অবস্থান করছে। উন্নত অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলো ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে এবং এসব দেশের মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কোনো কোনো উন্নয়নশীল অর্থনীতিও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় চীনের অর্থনীতির ওপর বাহ্যিক নেতিবাচক প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না।
কিছুদিন আগে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চলতি বছরের বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, এবং সংকোচনের চাপ মোকাবিলা করছে।
কোনো কোনো বিদেশি মিডিয়া বলছে, চীনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলে এবং যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে বিলম্ব করে না। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের ধারাবাহিক ব্যবস্থাকে ‘সময়মতো বৃষ্টি’-র সাথে তুলনা করা চলে। চীনা বাজারের ওপর বিদেশিদের আস্থা বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বএশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ইউসুং-গেউন মনে করেন, মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমন্বয়ের পাশাপাশি, চীন অন্যান্য প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছে ও করছে। এতে চীন অর্থনীতি ভবিষ্যতে আরও গতিশীল হবে।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন যে, চীনা অর্থনীতি বড় ও স্থিতিস্থাপক। এর ঝুঁকি প্রতিরোধ করার শক্তিশালী ক্ষমতা রয়েছে। বোস্টন পরামর্শক কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ও গ্লোবাল সিনিয়র পার্টনার হ্য তাইয়ুং মনে করেন, আর্থিক ব্যবস্থা সুসংহত হওয়া এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রক বিভাগ ও বাজারের আর্থিক নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর সাহায্যে চীনা সরকার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।
চীনা অর্থনীতিতে গভীর পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনীতির গুণগত মান ও দক্ষতা উন্নত হবে, যা চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীর দৃষ্টিতে, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দেশটির অর্থনীতির বড় শক্তি।
বোস্টন পরামর্শক কোম্পানির চীনা বিষয়ক চেয়ারম্যান লিয়াও থিয়ান সু সিনহুয়া বার্তাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে, চীনা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নতি, রূপান্তর ও আপগ্রেডিং এবং উচ্চমানের উন্নয়নের সাধারণ প্রবণতা পরিবর্তিত হয়নি। ২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট বা কোভিড ১৯ মহামারীর মুখেও, চীনের দায়িত্বশীল মনোভাব পরিবর্তন হয়নি, এবং চীন বহির্বিশ্বের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করার ধারা বজায় রেখেছে। চীনা বাজারের ওপর বহির্বিশ্বের আস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)