প্রযুক্তির সাহায্যে খাদ্যের মান উন্নয়ন
2022-05-25 14:54:44

চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল খাবার। টেবিলে রাখা খাবার আমাদেরকে সুন্দর জীবনযাপনের মানে বলে দিতে পারে।

 

হু নান প্রদেশে একদল কৃষি বিজ্ঞানী রয়েছেন। তাদের মূল কাজ হল আরও ভাল খাবার সরবরাহ করা। তারা সারা জীবন ধরে খাবার নিয়ে গবেষণা করেন। কীভাবে ধানের আরও ফলন হবে, মাংস কীভাবে আরো পুষ্টিকর হতে পারে, মাছ কীভাবে আরো সুস্বাদু হবে এবং কীভাবে ভোজ্য তেল স্বাস্থ্যকর হতে পারে? এসব নিয়ে চিন্তা করেন তারা।  হু নান চীনের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উত্পাদন কেন্দ্র। এখান থেকে সারা চীনে শাকসবজি ও ভোজ্য তেলও সরবরাহ করা হয়।

 

তিপ্পান্ন বছর বয়সি লিউ হং সুন একজন কৃষক।  সারা জীবন ধরে তিনি ধান চাষ করে আসছেন। গত বছর তার শতাধিক মু (১০-১২ হেক্টর) জমিতে ৩ লাখ কেজির বেশি চাল উত্পাদিত হয়। জমির উত্পাদন দক্ষতা এখন আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। কারণ বিশেষজ্ঞরা তার কাছে এসে তাকে চারা, সার, ড্রোনের ব্যবহারসহ নানা বিষয় শিখিয়েছেন। লিউ হং সুনের জন্মস্থান লিউ ইয়াং সমতল ভূমিতে। কয়েক দশক আগে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখানে ৬,৫০০ বছর আগের ধান ক্ষেত আবিষ্কার করেছেন, তার মানে হু নান অনেক আগ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উত্পাদন কেন্দ্র। পাশাপাশি, হু নান থেকে চীনের নানা প্রদেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। দেশের ২.৮ শতাংশ চাষের জমি নিয়ে দেশের ৪.৫ শতাংশ খাদ্য উত্পাদন করে হু নান। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতে বড় ভূমিকা পালন করছে।

 

একবিংশ শতাব্দীতে চীনকে কে খাওয়াবে? ধানের বীজ দিয়ে পশ্চিমাদের এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইউয়ান লং পিংসহ হুনানের কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মীরা। হু নান চীনের প্রথম প্রদেশ যেখানে ব্যাপকভাবে হাইব্রিড ধানের প্রসার হয়। প্রতিটি মৌসুমে এই ধানের উত্পাদন পরিমাণ প্রতি মু (৬৬৭ বর্গমিটার) জমিতে ৭০০ থেকে  ১,১০০ কেজি হতে পারে।  আর ২০২১ সালে দুই মৌসুমে উত্পাদন  হয়েছে প্রতি মু (৬৬৭ বর্গমিটার) জমিতে ১,৬০৩.৯ কেজি।

 

ইউয়ান লং পিংয়ের উদ্যোগে উচ্চ-ফলনশীল, সবুজ এবং উচ্চ-মানের শস্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রকল্পে এক মু জমি তিনজনকে খাওয়াতে পারে। গত বছর খাদ্যের উত্পাদন পরিমাণ ২০ কোটি কেজি বৃদ্ধি হয়েছে।

 

হু নান প্রদেশের ইয়াং নান জেলাটি ধান ও চিংড়ির উত্পাদন এলাকা হিসেবে বিখ্যাত। হু নান একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের সিপিসি সম্পাদক পাই লিয়ান ইয়াং একটি দল নিয়ে এখানে কাজ করেন।

 

সেখানকার ক্ষেতে চাষ হয় ৩০০ ধরনের ধান এবং প্রতিটি ধরনের ধানের পাশে রাখা আছে একটি বোর্ড। তাতে এ ধানের জীবন যাত্রা লেখা আছে। কোনো এক ধরনের ধান ভাল কিনা- তার নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আছে। কোনো ধানে অ্যামাইলোজের অনুপাত ১৪-১৮ শতাংশের মধ্যে হলে ভাল। দেখতে সুন্দর হবে। দৈর্ঘ্য থেকে প্রস্থের অনুপাত ৩.৬ হতে হবে। এসব ধান নিয়ে বিশ্লেষণ করার পর এর মধ্যে সেরা প্রজাতি বেছে নেন বিজ্ঞানীরা। এ ধানের নামও আছে, তা হল তাও সিয়া চাল। ইয়াং নান জেলার সব রেঁস্তোরাতে বিনামূল্যে ভাত খেতে পারা যায়। তবে তাও সিয়া চাল দিয়ে তৈরি ভাত খেতে মূল্য দিতে হয়। আর তা হলো একটি ছোট বালতি ভাতের দাম ১৮ ইউয়ান।

 

হু নান প্রদেশে এমন বাবা ও ছেলে আছেন, যাদের দুজনই বিজ্ঞানী এবং মত্স বিশেষজ্ঞ। লিউ চুন নামে চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির সদস্য। তিনি একবার গ্রাস কার্পের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি আবিষ্কা করেন। এখন তার ছেলে লিউ সাও চুনও এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ। লিও সাও চুনের নেতৃত্বে তার দল এক ধরনের ক্রুসিয়ান কার্প মাছের কৃত্রিম প্রজনন করে। এ মাছের প্রোটিন বেশি এবং চর্বি কম। খেতে আরও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

 

চীনা ঐতিহ্যিক রান্নার পদ্ধতিতে তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হু নান চীনের গুরুত্বপূর্ণ রাইসরিষা উত্পাদন কেন্দ্র। আগে রাইসরিষার তেলে ক্ষতিকারক উপাদান ছিল। তবে কয়েক বছরের গবেষণার পর চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির সদস্য ও হু নান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুয়ান ছুন ইউয়ন নতুন এক ধরনের রাইসরিষা তেল আবিষ্কার করেন। এ তেল আরও উন্নতির পর এর সংরক্ষণ আরও সহজ হয়েছে। রান্নার সময় ধোঁয়া কম তৈরি হয় এবং এতে ভিটামিনও বেশি। এ তেল দিয়ে মাছ, মুর্গিসহ নানা খাবার রান্না করলে আরও সুস্বাদু হয়।

বর্তমানে চীনে উত্পাদিত ২০ শতাংশ রাইসরিষা হল কুয়া ছুন ইউয়ন ও তার দলের আবিষ্কৃত। আর হু নান প্রদেশের ধান, মরিচ, মাছসহ অনেক খাদ্যশষ্য এখন চীনের নানা জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।

 

হু নানে আছে নয়জন কৃষিবিদ। তারা ৪,০০০ জনের বেশি গবেষকের সঙ্গে চাল, মাংস, মাছ, মরিচ, চা, ও কমলাসহ নানা খাবার নিয়ে গবেষণা করছেন।

 

চলতি বছরের দুই অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, সুন্দর জীবনের প্রতি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং চীনা মানুষের খাবারের কাঠামো পরিবর্তনের প্রবণতা অনুযায়ী প্রচুর খাবার সবররাহ করার পাশাপাশি সবধরনের খাবার সরবরাহ করতে হবে। মাংস, ফুল, সবজি, জলজ পণ্য তথা এসবের কোনোটারই অভাব হতে দেয়া যাবে না।

 

কৃষির ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট সির এ কথায় রয়েছে। গবেষকরা সবার জন্য আরও পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার প্রদানে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। (শিশির/এনাম/রুবি)