মে ২৪: যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল’-এর আরেকটি দিক সম্প্রতি দিনের আলোয় এসেছে। স্থানীয় সময় গত ২৩শে মে জাপান সফররত মার্কিন নেতা তথাকথিত ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ)’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই কাঠামোয় সরবরাহ-চেইনের সাথে চীনকে ‘ডিকপলিং’ করা এবং মার্কিন বাজারে প্রবেশে শুল্ক না-কমানোর কথা বলা হয়েছে। বাকি বিষয় খুবই অস্পষ্ট। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘খালি হাতে নেকড়ে’ ধরার পরিকল্পনা, যাকে ষড়যন্ত্রই সার।
তথাকথিত ‘আইপিইএফ’ ধারণাটি মার্কিন নেতা প্রস্তাব করেছিলেন যখন তিনি গত অক্টোবরে ভিডিওর মাধ্যমে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দাবি করেছেন যে, ‘আইপিইএফ’ চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ‘কার্যকরভাবে প্রতিহত করবে’। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই কাঠামোর উদ্দেশ্য শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ এবং এর লক্ষ্য চীন। সংক্ষেপে, এটি যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা তৈরি একটি একচেটিয়া অর্থনৈতিক ‘ছোট বৃত্ত’ এবং একটি রাজনৈতিক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার হাতিয়ার বাজার-ভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এই ‘ছদ্ম-বহুপাক্ষিকতা’ যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকৃত স্বাধীনতা, উন্মুক্ততা এবং সমৃদ্ধির পরিবর্তে এই অঞ্চলে কেবল বিভাজন এবং সংঘর্ষ বয়ে আনবে।
আসলে, মার্কিন নেতার এবারের দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান সফরে মিত্রদের আরও শক্ত করে কাছে টানার প্রয়াস সুস্পষ্ট। কেন যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘আইপিইএফ’-এর উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ডকে অস্পষ্ট রেখেছে, তা বোঝা কঠিন নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসলে এশীয় দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক কল্যাণকর কোনো ব্যবসা করতে চায় না। এখানে আসার লক্ষ্য চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা।
এতদঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান। অনেক এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ‘সহযোগিতার ফর্ম ও তার কার্যকারিতা স্পষ্ট নয়’, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় বেশি, দেয় কম", এবং ‘স্থায়িত্ব একটি সমস্যা’। জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেছেন যে, কোনো কোনো দেশের সরকার জিজ্ঞাসা করছে: ‘আমরা কী জিনিসে যোগ দিতে যাচ্ছি?’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মহামারী মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ মূল রপ্তানিনির্ভর। যদি যুক্তরাষ্ট্র শুধু মুখে মুখে সাহায্য করার প্রবণতা ত্যাগ না-করে, নিজের অংশীদারদের জন্য বাজার উন্মুক্ত না-করে, তবে এই নকুন কাঠামো অনিবার্যভাবে একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করবে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই অঞ্চলের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রুপ থেকে প্রত্যাহার এবং চুক্তি ভঙ্গ’ নিয়ে ভীত। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর স্বাভাবিকভাবেই তাদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এটা দূর করা কঠিন। কয়েক বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) একাধিক দফা আলোচনা সম্পন্ন করেছিল, কিন্তু হোয়াইট হাউসে পরিবর্তন ঘটার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তা থেকে বেরিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের পটভূমিতে, মার্কিন সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করাও অন্য দেশগুলোর জন্য কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সকল ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য চীন। তবে, যতই চেষ্টা করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে নষ্ট করতে পারবে না। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে, চীন এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)