মহামারির প্রেক্ষাপটেই চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে
2022-05-20 11:34:58

গত ১৩ মে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৫ মিনিট হাঁটার দূরুত্বের নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের সার্কেল গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাং চৌ ও শেন জেনসহ নানা শহরে এর বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং কিছু অগ্রগতিও অর্জিত হয়েছে।

চীন এ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কারণ এতে মহামারি প্রতিরোধ নেট গঠন সহজ হবে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের গবেষক কুও ইয়ান হোং জানিয়েছেন: এ ব্যবস্থায় জনগণ কাছ থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট করার সুবিধা উপভোগ করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হবে, যা দ্রুত মহামারি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। ওমিক্রন ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। তাই ধীরে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেকে আক্রান্ত হতে পারে। আর চীন সরকার এর সব খরচ বহন করছে। 

 যত দ্রুত রোগী সনাক্ত হয়, তত দ্রুত মোকাবিলা করা যায়, তা হলো মহামারি প্রতিরোধের সোনালী নীতি। পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিউ মিন বলেন, দ্রুত রোগী সনাক্ত হলে মহামারি ছড়ানো ঠেকানো যা


য় এবং প্রবীণ ও যারা আগে থেকেই নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো নয়, তাদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

চীন মহামারি প্রতিরোধে ১৫ মিনিট হাঁটার দূরুত্বে টেস্ট সার্কেল গঠনসহ ব্যাপক শক্তি নিয়োগ করছে। তাতে বোঝা যায়, মানুষের প্রাণ ও নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়কে চীন সবসময় অগ্রাধিকার দেয়।

 

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ছেন সি মনে করেন, চীনের গতিশীল শূন্য নীতির কারণে মহামারি প্রতিরোধের জন্য সময় তৈরি করেছে। এ সময়কালে ভ্যাকসিন দেওয়া, অবস্থা অনুযায়ী চিকিত্সা দেওয়া ও আইসোলেশনে নেওয়া এবং জনসাধারণের মানসিকতা পরিবর্তনসহ নানা কাজ চালানো হয়েছে।

  

সর্বশেষ এক  গবেষণা থেকে জানা গেছে, চীন এ নীতি পালন না করলে ছয়মাসে ১৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। চীন বৃহত জনসংখ্যার দেশ। বুড়োদের সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়ন ভারসাম্যহীন এবং চিকিত্সা সম্পদও পর্যাপ্ত নয়। মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা শিথিল হলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া এবং অনেকের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে চীন বর্তমানে গতিশীল শূন্য নীতিতে অবিচল থাকছে এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এককথায়, নিজের বাস্তবতা থেকে গতিশূল শূন্য নীতি পালন এবং পরিস্থিতির সাথে নানান ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করে চীন। এসব কর্মকান্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা ও প্রাণ রক্ষা  এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীল উন্নয়ন সাধন করা। 

 

এ দিকে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীল উন্নয়ন সাধন হবে কি না। এ নিয়ে বিশ্বে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে? মহামারীর প্রভাবে চীনা অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে, চীনা অর্থনীতির দৃঢ় স্থিতিস্থাপকতা, সম্ভাব্য উন্নয়নের সুযোগে পরিবর্তন হবে না বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা। চলুন, গত কয়েক মাসের অর্থনৈতিক সূচকে নজর দেয়া যাক।

 

চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির মুখপাত্র মেং ওয়েই গত মঙ্গলবার বেইজিংয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই চীনে বিদেশি পুঁজির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধির ধারা বজায় রয়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত, চীনে বিদেশি মূলধনের প্রকৃত ব্যবহার ছিল ৭,৪৪৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.১ শতাংশ বেশি। জটিল ও গুরুতর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ মহামারীর মধ্যে এ সাফল্য অর্জন সহজ ছিল না। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীনে একটি সম্পূর্ণ শিল্পব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এবং চীনের বিশাল বাজারের ওপর বিদেশিদের আস্থা অটুট আছে।

তিনি আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে, চীনে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ। উক্ত চার মাসে বাসা-বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে ১০.৫ শতাংশ। এ ছাড়া, দেশের ১৪টি প্রদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং তিব্বত ও চিয়াংসিতে বৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিং হুই সম্প্রতি জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনা অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রবণতা পরিবর্তন হবে না। চীনের অর্থনীতির দৃঢ়তা, বড় সুপ্তশক্তি এবং উন্নয়নের বড় সুযোগ পরিবর্তন হয়নি। এপ্রিল মাসে চীনের কিছু জায়গা করোনাভাইরাসের মহামারিতে গুরুতর প্রভাবিত হয়েছে। তবে পুরো দেশে প্রধান উত্পাদান চাহিদার সূচকের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। এপ্রিল মাসে চীনে ভোগ্যপণ্যের খুচরা বিক্রির পরিমাণ ছিল ২.৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ ৩.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। ইস্পাত উত্পাদনের পরিমাণ ১১ কোটি টন। কয়লা উত্পাদনের পরিমাণ ৩৬ কোটি টন। চীনের প্রধান সূচকের বৃদ্ধি বজায় রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চীনের শিল্পজাত মূল্য সংযোজনের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ শতাংশ। স্থাবর সম্পত্তির পুঁজি বিনিয়োগ এবং আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৬.৮ শতাংশ এবং ৭.৯ শতাংশ। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র, দেশের অর্থনীতি বহুমুখী পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান ফু লিং হুই জানান,

চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতার পরিবর্তন হয় নি। দেশের উচ্চ গুণগতমানের উন্নয়নের ভিত্তি পরিবর্তন হয় নি। দেশের অর্থনীতির দৃঢ়তা, বড় সুপ্তশক্তি এবং বেশি সুযোগের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় নি। মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন সমন্বয় করার বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থার সমর্থনে, চীনের অর্থনীতি মহামারির প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুষ্ঠু উন্নয়ন বজায় রয়েছে।

পুঁজি বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চীনের উত্পাদন শিল্পের পুঁজি বিনিয়োগ উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.২ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে হাই টেক শিল্পের পুঁজি বিনিয়োগের বৃদ্ধি ২২ শতাংশ। অবকাঠামো নির্মাণ খাতে পুঁজি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৫ শতাংশ বেড়েছে। উভয় দ্রুত প্রবৃদ্ধির মান বজায় রেখেছে। এ ছাড়া মহামারির প্রাদুর্ভাব, চীনের খাদ্য ও মূল শিল্পের বৃদ্ধিও স্থিতিশীল ছিল। মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে। চীনের নীতি বিজ্ঞান গবেষণাগারের অর্থনীতি নীতি কমিশনের উপপ্রধান সুই হুং ছাই বলেন,স্থাবর সম্পত্তির পুঁজি বিনিয়োগের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে, আর্থিক উন্নয়ন স্থিতিশীল করায় পুঁজি বিনিয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আরেকটি বিষয় হল, বর্তমানে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দাম স্থিতিশীল করায় চীনের বিভিন্ন নীতির বাস্তবায়ন খুব কার্যকর। সরবরাহ ভালোভাবে নিশ্চিত করায় কার্যকরভাবে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করা যায়।চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যা ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিং হুই জানান, বর্তমানে চিলিন ও শাংহাইসহ বিভিন্ন জায়গার মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। উত্পাদন পুনরুদ্ধার হয়েছে। মে মাসে অর্থনীতি পরিচালনা উন্নত হবে বলে অনুমান করা যায়। পুঁজি, ভোগ্য এবং আমদানি-রপ্তানি কীভাবে অর্থনীতির চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করে-এই বিষয়ে মুখপাত্র ফু বলেন, এই তিনটি ক্ষেত্রের চাহিদা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করবে।তিনি বলেন,যদিও উত্পাদন প্রতিষ্ঠান কিছু কঠিনতার মুখোমুখি হয়েছে, তবে বিভিন্ন পক্ষের সমর্থন বাড়ছে, যা শিল্প প্রতিষ্ঠানের আস্থা বাড়াতে সহায়ক। সেই সঙ্গে অবকাঠামো খাতে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়ছে। যা পুঁজি বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভোগ ধাপে ধাপে পুনরুদ্ধার হচ্ছে; যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় সমর্থন করবে।

 

সে সব দিক দিয়ে বোঝা যায় যে, মহামারীর প্রভাবে চীনা অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে, চীনা অর্থনীতির দৃঢ় স্থিতিস্থাপকতা, সম্ভাব্য উন্নয়নের সুযোগে পরিবর্তন হবে না।চীনের সুপার বাজার আছে। চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে এবং এ প্রবণতা বজায় রাখবে চীন।


সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা। আজকের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো, যদি ভালো লেগে থাকে, এবং আপনার কোনো মতামত থাকে, তাহলে আমাদের চিঠি বা ইমেইল লিখতে ভুলবেন না। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn এবং wangdanhong@cri.com.cn। আপনারা আমাদের ফেসবুকেও কমেন্ট করতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই ভালো থাকুন এবং সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে আবারও কথা হবে।

 

(রুবি/এনাম)