সুন্দর প্রকৃতি চীনে বাঘের ঘরে ফিরতে সাহায্য করছে
2022-05-20 16:32:43

বন্ধুরা, বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাঘ বিশেষ ধরনের একটি প্রাণী। বাঘ চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জাতীয় পশু বেঙ্গল টাইগারের মতো চীনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বাঘ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী। তাহলে এখন এই বিলুপ্ত পশুর কি অবস্থা? বাঘ সংরক্ষণে চীনের কিছু অভিজ্ঞতা আছে, যা বাংলাদেশের জন্যও সহায়ক হতে পারে? আজ এই বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো।

 

বন্ধুরা দেখুন, এটা হল চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাঘ লেপার্ড জাতীয় উদ্যান (Northeast Tiger Leopard National Park)। এখানে বাঘ ও লেপার্ড আরামের সঙ্গে থাকে। আগের এই বিলুপ্ত প্রাণী আবারও প্রকৃতির কোলে ফিরে এসেছে। চীন কীভাবে মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে?

 

গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৫তম স্বাক্ষরকারী দেশের সম্মেলনে চীন প্রথম দফায় ৫টি রাষ্ট্রীয় উদ্যানের নাম তালিকা প্রকাশিত হয় এর মধ্যে চিলিন এবং হেই লুং চিয়াং প্রদেশের চীনের উত্তর-পূর্ব বাঘ লেপার্ড জাতীয় উদ্যান এর মধ্যে অন্যতম।

 

উত্তর-পূর্ব বাঘ লেপার্ড জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি হল চীনের একমাত্র বন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাঘ এবং লেপার্ডের স্থিতিশীল বাসস্থান ও জন্মের স্থান। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানে বন্য উত্তর-পূর্ব টাইগারের সংখ্যা আগের ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২টিতে। আর লেপার্ডের সংখ্যা আগের ৫০টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। সেখানকার কর্মীরা মনিটার করে আবিষ্কার করেছেন যে নতুন জন্ম নেওয়া ১০টিরও বেশি ছোট বাঘ এবং ৭টিরও বেশি ছোট লেপার্ড। আর তা সেই উদ্যান থেকে বিভিন্ন প্রদেশে সম্প্রসারণ করা হয়। এর আগে চীনে বুনো বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। এমন গুজব ভেঙে দিয়েছে সেই বাস্তবতা।

 

চীনের রাষ্ট্রীয় বনজ ও তৃণভূমি ব্যুরোর উত্তর-পূর্ব বাঘ ও লেপার্ড তত্ত্বাবধান ও গবেষণা কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ফেং লি মিন জানান, আমরা আবিষ্কার করেছি যে বাঘশাবক ও লেপার্ডশাবক বেঁচে থাকার হার দ্রুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। মানে দু’টি শিশু বাঘ ও লেপার্ডের মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তারা আরো দূরের জায়গায় যেতে পারে, নিজের দখল করা সার্কেল স্থাপন করতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও বাঘ ও লেপার্ড রক্ষা একটি কঠোর কাজ। উত্তর-পূর্ব টাইগারের বাসস্থান পুনর্নির্মাণে চীন কখনই প্রচেষ্টা বন্ধ করে নি। ২০১৭ সালে চীন উত্তর-পূর্ব বাঘ ও লেপার্ড রাষ্ট্রীয় উদ্যানের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়। তখন থেকে উদ্যান পরিচালনা ব্যুরো এবং চিলিন ও হেই লুং চিয়াং প্রদেশের সরকার যৌথভাবে কর্মব্যবস্থা স্থাপন করেছে, পরীক্ষামূলক কর্ম নিশ্চয়তা ব্যবস্থা গঠন করেছে। এর মাধ্যমে বাঘ ও লেপার্ড রক্ষায় সহায়ক চেষ্টা চালানো হয়েছে।

 

বিশ্ব প্রকৃতি তহবিলের বাঘ পরিকল্পনার প্রধান স্টুয়ার্ট চ্যাপম্যান বলেন, বুনো বাঘ রক্ষার ক্ষেত্রে, সবচেয়ে অসাধারণ এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের অন্যতম হার, ২০১০ সালে চীন সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বুনো টাইগারের সংখ্যা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দশ লাখ হেক্টরেরও বেশি আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম বাঘ সংরক্ষণ এলাকা স্থাপন করেছে।

 

প্রাকৃতিক সিস্টেম পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সিকা হরিণ, বাদামি ভালুক, yellow-throated mink-সহ বিভিন্ন প্রাণী বনে দেখা যাচ্ছে। যা ফুড-চেইনের শীর্ষ থাকা উত্তর-পূর্ব টাইগারের জীবিত থাকা এবং বংশবৃদ্ধির জন্য শর্ত যুগিয়েছে।

ফেং লি মিন বলেন, এখানে বাঘ আছে, মানে এর পিছনে পূর্ণাঙ্গ ফুড-চেইন আছে। শুধু বাঘের জীবিত থাকা নয়, বরং এর পিছনে অনেক তৃণভোজী প্রাণী আছে। যা খুব সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য তৈরি করেছে এবং পুরো প্রাকৃতিক ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর।

 

চীন বিশাল একটি দেশ, চীন হলো বিশ্বে জীববৈচিত্র্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রাকৃতিক সভ্যতার চিন্তাধারার নেতৃত্বে, চীন প্রকৃতিকে শীর্ষস্থানে রেখেছে, সবুজ উন্নয়ন করেছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা সুসংহত করেছে, এর ফলে সরকারের নেতৃত্বে, গোটা সমাজের অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। চীনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

ফ্রেডরিক কুলমে, আফ্রিকার বন্যপ্রাণী তহবিলের চেয়ারম্যান, তিনি বলেন, চীনের জীববৈচিত্র্য বিশ্বের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। চীন সরকার প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক। যেমন প্রকৃতি সভ্যতাকে ভবিষ্যত উন্নয়নের মৌলিক চিন্তাধারা হিসেবে নির্ধারণ করেছে চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের’ ১৫তম স্বাক্ষরকারী দেশের শীর্ষসম্মেলনে বলেছিলেন, জীববৈচিত্র্য পৃথিবীকে প্রাণচঞ্চল করেছে; তা মানবজাতির টিকে থাকা এবং উন্নয়নের ভিত্তি। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পৃথিবী রক্ষায় সহায়ক। এখন চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন উত্তর-পূর্ব বাঘের ঘরে ফিরে আসার পথকে আলোকিত করেছে, মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থানের সুন্দর দৃশ্য চীনে দেখা যাচ্ছে।