আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসে পুরাকীর্তির গল্প তুলে ধরছেন সি চিন পিং
2022-05-18 14:27:14

মে ১৮: ১৮ মে হল আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। জাদুঘর হলো মানবসভ্যতা সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পুরাকীর্তি শুধু একটি জাতির উজ্জ্বল সংস্কৃতিই বহন করে না, বরং তা বিশ্বসভ্যতা বিনিময় জোরদারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পুরাকীর্তি সংরক্ষণ কাজের ওপর অনেক গুরুত্ব দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, নতুন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মীদের উচিত আরো ভালোভাবে চীনা জাতির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীনা সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ সামর্থ্য বাড়ানো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সি চিন পিং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে এক একটি চমৎকার পুরাকীর্তির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে চীনের গল্প তুলে ধরেছেন, ভিন্ন সভ্যতার পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থান জোরদার করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

 

বিশ্বখ্যাত চীনের ছিন রাজবংশ আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা চীন ও বিদেশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ সি চিন পিং ইউনেক্সোর সদর দপ্তরে বক্তৃতা দেওয়ার সময় চীনের এই পুরাকীর্তির কথা জানান। তিনি বলেন,

সবাই জানে, চীনে ছিন রাজবংশ আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা আছে। লোকজন তাকে ‘ভূগর্ভ সেনাদল’ বলে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক এটা দেখে বলেছিলেন, পিরামিড না দেখলে প্রকৃত অর্থে মিশরে যাওয়া হয় না। তেমনি, ছিন রাজবংশের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা না-দেখলে সঠিক অর্থে চীন ভ্রমণ হয় না। ১৯৮৭ সালে ২ সহস্রাধিক বছর ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা চীনা জাতির মূল্যবান পুরাকীর্তি বিশ্বের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

চীন ও বিদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে ছিন রাজবংশীয় আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা প্রায় ৫০টি দেশ ও অঞ্চলে প্রদর্শন করা হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে পেরুতে আয়োজিত ‘চীনা জাতির মূল্যবান পুরাকীর্তি’ প্রদর্শনীতে চারটি ছিন রাজবংশীয় আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা প্রদর্শন করা হয়। সি চিন পিং  তখন পেরুর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুকজিনস্কি গডার্ড একসাথে তা পরিদর্শন করেন।

২০১৬ সাল ছিল চীন ও পেরুর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। সে বছরটি চীন ও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বছর। সেই প্রদর্শনী দু’পক্ষের সাংস্কৃতিক বিনিময় বর্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্যবাহী। পেরুর ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রধান রুবেন তাং বলেন, পেরুতে ছিন রাজবংশ আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা দেখে তিনি খুব খুশি।

তিনি বলেন,

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং পেরুর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কুকজিনস্কি বলেন, উভয় দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি আছে। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের কারণে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আমি চীনের সি’আন শহরে ছিন রাজবংশ আমলের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা দেখেছি। তবে পেরুতে তা দেখতে পাওয়া সত্যি বিস্ময়কর এবং আনন্দের ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করি দর্শকরাও তা খুব পছন্দ করে। প্রদর্শনী খুব তাৎপর্যপূর্ণ। চীনের সংস্কৃতি সম্বন্ধে পেরুর জনগণের উপলব্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।

হাজার বছরের প্রাচীন ডুবোজাহাজ ‘বাতুহিতাম’ প্রাচীন সামুদ্রিক রেশমপথে চীন ও বিভিন্ন দেশের বিনিময়ের ইতিহাস তুলে ধরে। ৯ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চীন থেকে রওনা দেওয়া ‘বাতুহিতাম’ ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি গিয়ে ডুবে যায়। ১৯৯৮ সালে এটি উদ্ধার করা হয়। এই জাহাজটি গভীর সমুদ্রে হাজার বছর ধরে গোপন ছিল। জাহাজে ৬০ হাজারেরও বেশি মূল্যবান পুরাকীর্তি আছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই সিরামিক পণ্য। এ ছাড়া আরো আছে তামার আয়না, সোনা ও রূপার জিনিস। যা হাজার বছর আগে ‘চীনা উৎপাদনের’ প্রদর্শনীও বটে। সিঙ্গাপুরের এশিয়া সভ্যতা জাদুঘরের প্রধান ছেন ওয়েই রেন বলেন, ‘বাতুহিতাম’র মত মূল্যবান পুরাকীর্তির মাধ্যমে লোকজন এশীয় সংস্কৃতি উপলব্ধি করতে পারে। তিনি বলেন,

বিশ্বের সভ্যতা ও এশিয়ার সভ্যতা বিনিময় করেছে ও শিখছে। বিনিময়ের মাধ্যমে সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়, আরও দৃঢ় হয়। আমার মনে হয়, বিনিময় আমাদের জাদুঘরের কাছে, সিঙ্গাপুরের কাছে ও চীনের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সভ্যতা বিনিময়ের কারণে আরো রঙিন হয়। সভ্যতা পারস্পরিক শেখার কারণে সমৃদ্ধ হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর কথা অনুযায়ী, জাদুঘরে রাখা পুরাকীর্তি, বিস্তীর্ণ ভূমিতে বিভিন্ন উত্তরাধিকার, প্রাচীনকালের বইয়ে লেখা অক্ষর সবই জীবন্ত হোক, চীনা জাতির সভ্যতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সভ্যতার সঙ্গে মিলে- মানবজাতিকে সঠিক মানসিক শক্তি দেবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)