গ্রামীণ নারীদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা
2022-05-18 10:30:56

 

১৯৮৩ সালে চীনের শান তুং প্রদেশের ত্য চৌ শহরের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তুং বিন। গ্রামীণ নারীদের নিয়ে তার পণ্যগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের তাইওয়ানসহ নানা অঞ্চলে অনলাইনে বিক্রি হয়। তুং বিন একটি ই-কমার্সের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। গ্রামের নারীদের অনেকে তাদের নিজ প্রদেশের বাইরে কখনও যাননি, তবে তারা এখন বিদেশীদের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। দশ কিলোমটার এলাকার মধ্যে তাদের ব্যবসার দশ-বারোটি শাখা অফিস আছে। আর তাদের কর্মীরা হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ নারী। ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তুং বিন তার ব্যবসা কাছের কয়েকটি জেলায় প্রসারিত করেছেন। ২০২০ সালে ৩০০ নারী কর্মী নিয়ে গঠিত এ কোম্পানির বার্ষিক মুনাফা এখন ৩ কোটি ইউয়ান। কর্মীদের মাসিক বেতন ১৫,০০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত। মূল বেতন ছাড়াও প্রতিভাবান ও পরিশ্রমীরা আরও বেশি উপার্জন করতে পারে।

 

 

তুং বিনের সবকর্মী আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দা। আগে গ্রামের পুরুষরা বাইরে গিয়ে কাজ করতেন, আর গ্রামে থেকে শিশুদের যত্ন নিতেন নারীরা। তুং বিনের একজন বন্ধু আছেন,তার নাম লি ছুয়ান শুয়াই। তিনি নিজের গ্রামে নিজস্ব মিডিয়া ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। গ্রামে থাকা নারীদের নিয়ে তিনি এটি করেন। তার কর্মীদের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়েছে। ২০১৭ সালে লি ছুয়ান শুয়াই তুং বিনকে বলেন, গ্রামে যাও, তাদেরকে নিয়ে ই-কমার্স কর,ওখানে সম্ভবনা রয়েছে।

গ্রমীণ নারীদের মূল কাজ হল পরিবারের যত্ন নেয়া। তবে তারা যদি একটি চাকরি পায়, তাহলে তাদের বেশিভাগই এটি পরিত্যাগ করবে না। গ্রামের অতিরিক্ত শ্রম ব্যবহার করে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে চান তুং বিন।

প্রথম দোকান খোলার পর তুং বিন তার কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দেন এবং তিনমাস পর তিনজন সেরা কর্মীকে অন্য গ্রামে পাঠান। তারা নিজ নিজ গ্রামে শাখা দোকান খুলেন। ২০১৭ সালে তুং বিন জেলার ৭টি উপজেলায় দোকান খুলেন এবং প্রতিটি দোকানে একজন কর্মীকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে নিয়োজিত করেন। একে ব্যবস্থাপনায় অ্যামিবা ব্যবসায়িক মডেল বলা হয়, যা কাজুও ইনামোরির ব্যবসার প্রথম দিন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কর্মীরা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেন। আগে গ্রামের নারীরা বাড়িতে প্রবীণ ও শিশুদের যত্ন নিতেন, এখন তারা বাড়িতে প্রবণীদের যত্ন নেন, শিশুদের স্কুলে পাঠান এবং অফিসে কাজ করেন।

 

নারী কর্মীদের সুবিধার্থে অফিসের সময় স্কুলের সময় অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। সকাল ৮ থেকে কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত তাদের বিশ্রামের সময় এবং কাজ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। কর্মীরা শিশুদের স্কুলে পাঠান এবং ডিনার ও লাঞ্চ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, স্কুল  ৫টায় শেষ হলে অফিস শেষ হবে সাড়ে ৪টায়। তারা শিশুদের অফিসে নিতে পারেন এবং অনেক কর্মী যারা ৬টায় কাজ শেষ করতে না পারেন, তারা অবশিষ্ট কাজ বাড়িতে বসে করতে পারেন।

 

গ্রামের বাসিন্দা ওয়াং নিং নিং বলেন, স্কুল শেষ করার পর আমি বাইরে কোন কাজ করি না। সবচেয়ে দূরে বলতে আমি কাছের একটি জেলায় গিয়েছি। আমি কখনও ভাবিনি, আমাদের ব্যবসা এত দূরে যেতে পারবে। তার মতো কোম্পানির অধিকাংশ কর্মী কখনও বাইরে যায় নি, তাই তাদের গ্রাহকরা কোথায় আছেন, তা বুঝাতে অফিসের দেয়ালে ঝুলছে বিশ্বের ম্যাপ, আর ডেস্কে রাখা হয়েছে একটি গ্লোব। তারা ইংরেজি বুঝেন না। তাই তুং বিন মূলত মালয়েশিয়াসহ তার আশেপাশের দেশে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ ওখানে চীনা ভাষা বেশি ব্যবহার  হয়।

 

এখানে কাজ করলে আয় বেশি হয় এবং শিশুদের যত্ন নেয়া যায়, তা শুনে কাছের গ্রামের আরও বেশি নারীরা কোম্পানিতে যোগ দেয়। গ্রামের বাসিন্দা চাও চুন হুয়া বলেন, শুরুতে বেতনের কথা বেশি ভাবিনি, পরিবারের যত্ন নিতে পারলে বেতম কম হলেও সমস্যা হবে না। তবে আমার বার্ষিক আয় ৭-৮ হাজার ইউয়ান,যা আমার স্বামীর আয়ের চেয়ে কম নয়।

 

২০২০ সালের জাতীয় দিবসের ছুটিতে দক্ষিণ চীনের কয়েকজন ব্যবসায়ী তুং বিনের কোম্পানি পরিদর্শন করেন। কোম্পানি দেখে তারা সবাই অবাক হন। তারা বিশ্বাস করতে পারেন না, ছোট একটি গ্রামে ই-কমার্স উন্নয়ন হতে পারে। সাধারণত ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স হল সুপার ইন্টারনেট জায়ান্টদের খেলা। যেমন, আলিবাবা, জেডি এবং বাইটডেন্স। হাং চৌ ও কুয়াং চৌসহ দক্ষীণ চীনের উপকূলবর্তী এলাকা হল ই-কমার্সের বেস শহর। শান তুংয়ের একটি গ্রাম এবং গ্রামের নারীরা এ খেলায় কীভাবে জয় লাভ করেছে? চলুন, জানা যাক তাদের জয়ের গল্প।

 

শুকনো মিষ্টি আলু উত্তর চীনের এক ধরনের জলখাবার। গ্রামের প্রতিটি পরিবার এ আলু নিজে উত্পাদন  করে এবং শীত্‌কালে জলখাবার হিসেবে খায়। ২০২০ সালে কোম্পানিতে নতুন যোগ দিয়ে একজন কর্মী নিজের তৈরি শুকনো মিষ্টি আলুর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে।

কোম্পানির একটি নিয়ম আছে: প্রতিরাতে দিনের কাজ শেষে কর্মীরা তাদের বিক্রির পরিমাণ লিখে কোম্পানির গ্রুপ চ্যাটে পাঠায়। ওই দিন শুকনো মিষ্টি আলু খুব ভাল বিক্রি হয়। তা দেখে প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিজেদের দোকানে এ তথ্য শেয়ার করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে সবদোকানে শুকনো মিষ্টি আলু বিক্রয় শুরু হয়।

ওই দিন কোম্পানি শুকনো মিষ্টি আলুর ৩০০টি অর্ডার পায়। জনপ্রিয় পণ্য খুঁজে পাওয়া এবং অনলাইনে টেস্ট করা কোম্পানির বৈশিষ্ট্য। যদি বিক্রয় বেশি হয়, তাহলে একই সঙ্গে তারা সবদোকানে এ পণ্য বিক্রি করে।  এভাবে তাদের বিক্রিয় পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আঞ্চলিক দায়িত্বীল ব্যক্তিরাও এ থেকে বোনাস পেতে পারে। সাধারণ কর্মীরাও দোকানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আঞ্চলিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি হতে পারেন।(শিশির/এনাম)