গত ১৪ মে বিকেলে ১৮ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ পেটন কিন্ড্রন কৌশলগত সরঞ্জাম পরে নিউইয়র্কের বাফেলোতে একটি সুপার মার্কেটে প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাশাপাশি, সে একটি ক্যামেরার মাধ্যমে তা অনলাইনে সম্প্রচার করে। এ ঘটনায় ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, যাদের ১১জন আফ্রিকান-আমেরিকান এবং দুজন শ্বেতাঙ্গ। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তখন ঘটনাটিকে ঘৃণামূলক অপরাধ এবং জাতিগত সহিংসতা ও চরমপন্থার মামলা হিসেবে তদন্ত শুরু করে। একদিন আগে উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে দুই ঘণ্টার মধ্যে তিনটি শুটিংয়ের ঘটনায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছে। নিউইয়র্কের গুলিবর্ষণের একদিন পর ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির লেগুনা উডসের একটি গির্জায় গুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। একই সপ্তাহের টানা তিনদিনের এই রক্তাক্ত ঘটনা প্রবাহ শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হতবাক করেনি, সেসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক সহিংসতা এবং বর্ণবাদের বিষয় আবারও বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা একটি খারাপ প্রবণতা দেখাচ্ছে। মহামারী দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায়, সামাজিক চাপ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জাতিগত বিদ্বেষের মামলা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের "গান ভাইয়োলেন্স আর্কাইভস" ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক-সংক্রান্ত ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে, এটি চলতে থাকলে গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর হিসেবে ২০২১-কে ছাড়িয়ে যেতে পারে ২০২২ সাল।
নিউইয়র্কের এ দুর্ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ঘৃণার দ্বারা উদ্দীপ্ত অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের অবসানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত। তবে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের কোন কথাই তাঁর বিবৃতিতে নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক সহিংসতা কোন নতুন সমস্যা নয়, তবে তা কখনও সমাধান হয়নি। একদিকে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দুটি দল জরুরী সামাজিক এ সমস্যাকে দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আর অন্যদিকে লবিস্টদের প্রভাবে মার্কিন বন্দুক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বহু বছর ধরে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে পদ্ধতিগত বর্ণবাদের সমস্যাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য তীব্র হয়েছে।স্থানীয় মিডিয়ার বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুসারে, হত্যা করার আগে কিন্ড্রন ইন্টারনেটে "কীভাবে যতটা সম্ভব আফ্রিকান-আমেরিকানকে হত্যা করা যায়" তা-সহ হত্যার পরিকল্পনার বিভিন্ন বিবরণ বর্ণনা করেছিলেন। প্রাথমিক পুলিশ তদন্তে পাওয়া গেছে যে, কিন্ড্রন বারবার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এবং জাতিগত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সমর্থনকারী ওয়েবসাইট পরিদর্শন করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ-স্তরের রাজনীতিবিদ, কিছু সেলিব্রিটি এবং পণ্ডিত বর্ণবাদী মন্তব্য প্রকাশ করে। এই ধরনের সামাজিক পরিবেশে আমেরিকান সমাজ আরও বিভক্ত হয়ে পড়েছে, দ্বন্দ্ব আরও গভীর হয়েছে এবং জাতিগত বিদ্বেষের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কের শ্যুটিংয়ের ঘটনাকে আমেরিকান আত্মার উপর একটি দাগ বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু একই ভুল বারবার পুনরাবৃত্তির পর মৌখিক নিন্দা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কিছুই করতে পারছে না।
(শিশির)