শুধু একটি হাত এবং দুটি পা আছে- এমন দম্পতির গল্প
2022-05-13 19:33:09

এক দম্পতি, দু’জনের শুধু দুটি পা এবং একটি হাত আছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু কীভাবে! তাঁদের কাহিনী কেমন ছিল, চীনের শীর্ষনেতা সি চিন পিংও বিশেষভাবে তাঁদের প্রশংসা করেছেন? আজকে চীনের এমন এক প্রতিবন্ধী দম্পতির গল্প আপনাদের জানাবো।

 

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুন মিং শহর থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট গ্রাম আছে। অনেক ভোরে, যখন সূর্য ওঠে না, তখন চাং সুন তুং এবং লি কুও সিউ দম্পতি বিছানা থেকে ওঠেন, কর্মব্যস্ত দিন শুরু করেন। এই দু’জনের একটি মাত্র হাত এবং দুটি পা আছে। তবে তারা সব কাজই করতে পারেন। তাদের মনে আছে- আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষের জন্য অকল্পনীয় দৃঢ় সংকল্প।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, দেশের দারিদ্র্যবিমোচন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবাইকে এই দম্পতির গল্প জানান। তিনি বলেন: ইয়ুননান প্রদেশের খুন মিং শহরের পিং জি গ্রামের কৃষক চাং সুন তুং বলেছেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী, তবে তাঁরা মানসিক প্রতিবন্ধী নন। তাদের বুদ্ধি আছে, একটি হাত আছে; তারা চিন্তা করতে পারেন ও চেষ্টা করতে পারেন।

 

এটি হলো এই পরিবারের অবস্থা। চাং দম্পতির পরিবার। স্বামী চাং সুন তুং ছোটবেলায় গরু চরানোর সময় বেখেয়ালে ছিন্ন হয়ে থাকা উচ্চ বৈদ্যুতিক তারে পা রেখে আহত হন। তখন তিনি তাঁর ডান ডান হাত হারান। আর এতে তাঁর দুটি পা গুরুতরভাবে আহত হয়। স্ত্রী লি কুও সিউ জন্ম নিয়েছেন দুই হাত ছাড়া। অন্যের চোখে, এই দু’জন প্রতিবন্ধী, তাদের দু’জনের পরিবার গঠনের সিদ্ধান্ত ভালো নয়। তবে তাঁরা বিয়ে করেছেন।

স্ত্রী লি কুও সিউ-এর বড় ভাই লি কুও ইয়ুন বলেন, তখন আমি তাদের বিয়ের বিরোধিতা করেছিলাম। আমার ছোট বোনের দুই হাত নেই, আর চাং-এর শুধু একটি হাত আছে, কীভাবে তারা জীবনযাপন করবে!

চাং সুন তুং-এর চোখে স্ত্রী লি খুব ভালো একজন নারী। তিনি বলেন, আমি দেখেছি, সেলাই করা, জুতার প্যাড তৈরি করা- ইত্যাদি সব কাজ সে করতে পারে। সে খুব পরিশ্রমী, আমি তাকে খুব পছন্দ করি। স্ত্রী লি কুও সিউ স্বামীকেও অনেক ভালোবাসেন, তিনি বলেন, স্বামী খুব হ্যান্ডসাম, দৃঢ় সংকল্পের মানুষ এবং বুদ্ধিমান। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।

 

তাদের বসবাসের তুং ছুয়ান জেলা আগে চরম দরিদ্র জেলা ছিল। একসময় সে জেলার দারিদ্রের হার ৫২.৮৮ শতাংশ ছিল। সেখানে পাহাড় উঁচু, ভৌগলিক অবস্থা খুব জটিল। চাং দম্পতির কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এই জমি থেকে অনেক শস্য পাওয়া যেতে পারে।

স্ত্রী লি কুও সিউ জানান, কৃষিকাজ করার সময়, তিনি পিঠে ঝুড়ি নেন, স্বামী সবজি কাটেন। তারপর দুজন এসব সবজি বাইরে নিয়ে যান। মাঝে মাঝে অনেক ভারি হওয়ায় তা নিতে পারেন না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হয়। আরও ভারি হলে অন্যকে কিছু টাকা দিয়ে শাকসবজি বাইরে নেওয়ার সাহায্য নেন।

১৯৯৩ সাল এবং ১৯৯৬ সালে চাং দম্পতির সন্তান হয়। এতে তাদের পরিবারের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে চাং দম্পতির কাছে সন্তানরা হলো জীবনের আশা।

স্ত্রী লি কুও সিউ বলেন, তিনি শিশুদের যত্ন নেন। অন্যদের শিশু বাবা মা’র হাতে বড় হয়েছে, তবে তাদের ছেলেমেয়ে পা-এর আলিঙ্গনে বড় হয়েছে।

২০১৩ সালে বেশি কাজ করা এবং সময় মত চিকিত্সা না করায় স্বামী চাং-এর দুটি পা বাধ্য হয়ে কেটে ফেলতে হয়। তখন থেকে একটি হাত এবং একটি পা হল এই দম্পতির সব অবলম্বন!

স্ত্রী লি কুও সিউ বলেন, এখন মনে হয় আগের জীবন কত কঠিন ও কষ্টের ছিল।

 

সৌভাগ্যের বিষয় হলো, চিকিত্সার জন্য সরকার তাদের ২০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি ফি বহন করেছে এবং অন্যান্য আর্থিক ভর্তুকি দিয়েছে। এই ছোট পরিবারে আশার আলো দেখা দিয়েছে। চাং দম্পতি সাহায্যের অপেক্ষা করেন না, অন্যের ওপর নির্ভরও করে না, অন্যের কাছ থেকে সাহায্যও চান না। তাঁরা নিজের হাতে শস্য চাষ করেন, পশু পালন করেন, কৃষিজাত দ্রব্য বিক্রি করেন। তাঁদের মতে, জীবিত থাকলেই জীবনের জন্য চেষ্টা করতে হয়।

যদিও সরকার তাদের বিভিন্ন ভর্তুকি ও সহায়তা দেয়, তবে স্ত্রী লি কুও সিউ বলেন, সবসময় দেশের দেওয়া বীমা ও নিশ্চয়তার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করা ঠিক নয়।

 

দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে চাং দম্পতি সাধারণ মানুষের চেয়ে হাজার গুণ বেশি চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এই পরিবারকে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন গ্রামের নিবন্ধিত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে আগে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া পরিবার। এখন দম্পতির প্রতি বছরের আয় ২০ হাজারেরও বেশি ইউয়ান।

স্বামী চাং বলেন, তাঁরা আশা করেন পরিবারের বৈশিষ্ট্যময় কৃষিজাত দ্রব্য অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন।

২০২১ সালে স্থানীয় সরকারের উত্সাহ ও সাহায্যে চাং দম্পতি ই-কমার্স এবং অনলাইনের কেনাকাটা চালু করার চেষ্টা করেন। স্বামী চাং বলেন, তিনি হলেন স্ত্রীর হাত, স্ত্রী হলেন তাঁর পা। দু’জন মিলে যে কোনো কঠিনতা অতিক্রম করা যায়।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, দরিদ্র মানুষজন মানসিক দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে, আস্থা আরো দৃঢ় হয়েছে, চিন্তা আরো নমনীয় হয়েছে, তাদের ভিতর থেকে বাইরে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে।