চলতি বছর জার্মানির হামবুর্গে এলবিফিলহারমোনি হল উদ্বোধনের পঞ্চম বার্ষিকী। জার্মানি সময় ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায়, ‘ব্রেকিং দ্য ওয়েভস’ নামক একটি ইনস্টলেশন শিল্পের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার এলবিফিলহারমোনি হলকে আলোকিত করে। আলো ও সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বের ‘জন্মদিন’-এর শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এলবিফিলহারমোনি হলের পঞ্চম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে, নেদারল্যান্ডস থেকে শিল্পী গোষ্ঠী ট্রিফ্ট কনসার্ট হলের বাইরের দেয়ালে একটি অনন্য লাইট আর্ট শো পরিকল্পনা করে। ‘ব্রেকিং দ্য ওয়েস’ শিরোনামে পাফরম্যান্স শত শত আলোকিত ড্রোন পরিবেশনা করা হয়। এটি টানা ৪ রাত টমাস আরডেসের পিয়ানো কনসার্টে থাকবে। ট্রিফ্ট-এর একজন সদস্য রাল্ফ নদা বলেন,
“আমরা আশা করি ‘ব্রেকিং দ্য ওয়েভস’-এর এই অতুলনীয় কনসার্ট দুর্দান্ত। এটি নদী, আলো, সংগীত ও দর্শকদের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবে মিশে যায়। আপনি যখন এই উপাদানগুলিকে একত্রিত করবেন, তখন আপনি বাস্তব সংযোগের মুহূর্ত তৈরি করেন এবং এটিই আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে চাই।”
তার অংশীদার লোনেকে হ্যামডেন সাংবাদিকদের বলেন যে, সুচৌতে তার বাবা ১৫ বছর বসবাস করছেন। এ কারণে তিনি অনেকবার চীনে ভ্রমণ করছেন এবং চীনের উন্নয়ন ও প্রাণশক্তি তার মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন, “আমি চীনা সংস্কৃতি খুবই ভালোবাসি এবং আমি চীনকে খুব মিস করি। আমি সেখানে আমার সব বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। এই শৈল্পিক কাজ বিভিন্ন সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করতে পারে।”
এলবিফিলহারমোনি হলের শৈল্পিক পরিচালক ক্রিস্টোফ লিবেন-সটার উল্লেখ করেন যে, কনসার্ট হল হামবুর্গের সাংস্কৃতিক জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে: এটি উদ্বোধনের ৫ বছরে, স্থানীয় কনসার্টের দর্শক সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। তিনি বলেন,
“আমরা আশা করি এই ইতিবাচক প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সংগীতের জগতে অসীম সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা যেতে পারে। মহামারী শুরু হওয়ার আগে, চীনের শিল্পী এবং অর্কেস্ট্রারা এলবিফিলহারমনিক হলে নিয়মিত পারফর্মেন্স করেন। গত দুই বছরে, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে একটি বৃহত্ আকারের ‘রেশম পথ’-থিমযুক্ত সংগীত উত্সব। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, মহামারী পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই কার্যক্রমগুলি পুনরায় উন্নত হবে। আমরা অবশ্যই চীনা পর্যটকদের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাই। চীনের সঙ্গে সহযোগিতার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে অনেক ভালো শিল্পী রয়েছে এবং আমরা সবসময়ই আগ্রহী।”
হামবুর্গ পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক মিশেইল ওট্রুমবা বলেন যে, হামবুর্গ সবসময়ই চীনের শিল্পী ও পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় জার্মান গন্তব্য এবং এলবিফিলহারমোনিক হলের উদ্বোধন নিঃসন্দেহে হামবুর্গকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তিনি বলেন,
“এলবিফিলহারমোনিক হল হামবুর্গকে বদলে দিয়েছে। হামবুর্গ আগে একটি কমনীয় শহর ছিল, কনসার্ট হল একটি কলিং-কার্ড এবং ল্যান্ডমার্ক হিসেবে, আরও প্রতিশ্রুতিশীল হয়ে উঠেছে। এলবিফিলহারমোনিক হল এমন একটি জায়গা যেখানে বিভিন্ন লোক মিলিত হয় এবং যেখানে সংস্কৃতি বিনিময় হয়। অনেক লোক এসে হামবুর্গের সংস্কৃতি অন্বেষণ করায় আমরা খুবই খুশি। হামবুর্গে সবাইকে স্বাগত জানাই।”
জাতিসংঘে এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইন্টার্ন চৌ মেংইং’-এর গল্প
লাওস থেকে, সেশেলস, মঙ্গোলিয়া থেকে তুরস্ক...চীন থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের আবেগ ও দক্ষতা দিয়ে স্থানীয়দের এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে, ভালবাসা ও শক্তি ছড়িয়ে দেয়। আজ আমরা শুনবো জাতিসংঘে একজন তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইন্টার্ন চৌ মেংইং’-এর গল্প।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ছাত্রী চৌ মেংইংকে ‘পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন সহকারী’ হিসেবে কাজ করার জন্য ইউনিসেফ তুরস্কের অফিসে পাঠায়। তিনি হলেন ‘চীনা যুব স্বেচ্ছাসেবক বিদেশি পরিষেবা প্রোগ্রাম—জাতিসংঘের সংস্থায় পরিষেবা করা’ তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বিতীয় ব্যাচের এক সদস্য। চৌ বলেন, সে ‘চীনা যুব স্বেচ্ছাসেবক বিদেশি পরিষেবা প্রোগ্রাম’-এর বার্ষিক প্রতিবেদন লেখায় অংশগ্রহণের জন্য সম্মানিত। তিনি জানান,
“ইউনিসেফের তুরস্ক অফিস প্রতি বছর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন লেখে, যা ইউনিসেফের বিগত বছরের বিভিন্ন দিক যেমন- লিঙ্গ সমতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও গৃহীত প্রকল্প সহযোগিতার ব্যবস্থাপনার উপর প্রতিবেদন তৈরি করে। আমার কাজ হলো বছরের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে কৌশলগত পর্যবেক্ষণের তথ্য সংগ্রহ করা; যা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় এবং তুরস্ক অফিস ও এশিয়া-ইউরোপ অঞ্চলের মধ্যে ইউনিসেফের ডেটা সমন্বয় করে। আমি ডেটা সংগ্রহ করার পর, প্রাসঙ্গিক আমার সহকর্মীরা তার পুনর্বিবেচনা ও পর্যালোচনা করবে। যদি ডেটা নিয়ে কোন সমস্যা না-হয় তবে আমি একটি বিশেষ ব্যবস্থায় ডেটা ইনপুট দেবো।”
চৌ মংইং বলেন, অংশগ্রহণ ও শিক্ষা, সামাজিক নীতি, শিশু সুরক্ষা ও অন্যান্য বিভাগের মধ্যে বিনিময় এবং তথ্য ইনপুট (input) করার মাধ্যমে, ইউনিসেফের বার্ষিক প্রকল্প সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। পাশাপাশি, গভীরভাবে জাতিসংঘের অনেক প্রচেষ্টা, শিশুদের অধিকার ও লিঙ্গ সমতার সুরক্ষা প্রচার করা যায়। তিনি বলেন,
“এবার স্বেচ্ছাসেবক সুযোগের মাধ্যমে, আমি দেখতে পেলাম যে অপারেশন মোডসহ তারা যে কাজটি করে তা আমার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টকর, অপ্রত্যাশিত প্রচুর কাজের চাপ এবং সময়ক্ষেপণ। কারণ, এর কর্মপরিকল্পনায় শুধুমাত্র ইউনিসেফেই নয়, এমন স্থানও জড়িত যেখানে ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের নারী-বিষয়ক বিভাগ এবং তুরস্কের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহযোগিতা করে। তাই তারা কাজের পরিকল্পনা করার আগে প্রতি দু’সপ্তাহে ছোট ছোট সম্মেলন করে, প্রতি মাসে একবার বড় সম্মেলন করে এবং তাদের পরিকল্পনার সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যও বিবেচনায় নিতে হয়।”
একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তার ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে, চৌ মেংইং স্বীকার করেন যে, ভাষা ও ধারণা প্রকাশের পার্থক্য তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন,
“কারণ তুরস্ক ইউনিসেফে শুধু তুরস্কের নয়, সারা বিশ্বের অনেক মানুষ আছে এবং তারা ইংরেজিতে কথা বলে। তারপর, তারা বিশেষ করে পুরো শব্দের পরিবর্তে কিছু ইংরেজি সংক্ষিপ্ত শব্দ ব্যবহার করতে পছন্দ করে, যা শুরুতে আমার পক্ষে বোঝা অনেক কঠিন ছিল। তাই আমি পরে কিছু ভয়েস-টু-টেক্সট বা কিছু রেকর্ডিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করেছিলাম। সম্মেলনের পর আমি তা আবার শুনতাম ও পরীক্ষা করতাম। এভাবেই তা বুঝতে পারতাম। যদি আমি বুঝতে না পারি, তখন আমি এই সমস্যাগুলি প্রাসঙ্গিক বিভাগের প্রধানদের কাছে জিজ্ঞাসা করি। এত দীর্ঘ সময় পর আমি ধীরে ধীরে এই সংক্ষিপ্ত রূপগুলি বুঝতে শিখেছি এবং আমি প্রতিটি সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে অভ্যস্ত হয়েছি। আমি ধীরে ধীরে কাজের ছন্দের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলাম।”
যেহেতু দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, তাই ইউনিসেফ তুরস্কে আসা সিরীয় শিশুদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদানে সহায়তা করে। এই কাজগুলিও চৌ মংই-এর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। সে বলে,
“তথ্য বিশ্লেষণ করার সময়, তারা তথ্যের সামগ্রিক বিশ্লেষণের কাজে এই শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিশেষ করে মহামারীর পর, তারা মহামারীর সময় কিছু শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। আরেকটি হলো তুর্কি শিশুদের ক্লাসরুমগুলি চীনের মতোই অনলাইনে চালু করা হয়েছে এবং তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, কম শিক্ষামূলক এলাকার শিশুরা কোর্সগুলি শিখতে পারে। তারা কিছু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কিছু গ্রেড এবং বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাদানের বিষয়বস্তু প্রদান করেছে।”
চৌ বলে, তুরস্কে আসার প্রথম মাসে, সে সবসময় ‘অনেক ধন্যবাদ’ কথাটি বলেছে। এখানে সে তার সহকর্মীদের সক্রিয় দিকনির্দেশনা ও সাহায্য পেয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের উত্সাহ ও মৈত্রী অর্জন করেছে। তিনি বলেন,
“আমি আঙ্কারায় থাকি। এখানে বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজি জানে না। এটি আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু একই সঙ্গে এটি স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক আনন্দদায়ক হয়। যেমন, যখন আমি ট্যাক্সি নিতে বা কিছু কিনতে চাই, আমি স্থানীয় ভাষা বলতে না-পারলেও, আমার কিছু প্রয়োজন হলে বা কিছু জিজ্ঞাসা করলে, তারা খুব উত্সাহী হয়ে ওঠে। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করার পাশাপাশি, তারা মোবাইল ফোনের অনুবাদ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করে। একবার যখন আমি একটি শপিং মলে লিফটের কাছে অপেক্ষা করছিলাম, তখন একটি ছোট মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসে। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি কোন দেশ থেকে এসেছি। আমি বললাম, আমি চীন থেকে এসেছি। সে বলে, সে চীনা ভাষার কয়েকটি শব্দ শিখেছে। সে চীনা ভাষা ব্যবহার করে নিজের পরিচয় দেয়। সে আমাকে বলে যে, সে চীনা সংস্কৃতি খুব পছন্দ করে।”
অর্ধ বছরের ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা থেকে চৌ অনেক কিছু শিখেছে। যেসব চীনা তরুণ-তরুণী আন্তর্জাতিক সংস্থার কাজ করতে চায়- চৌ বলেন, “যদি সাহস থাকে, তাহলে তা সম্ভব।”