মে ৬: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা বিশ্বব্যাপী সাধারণ উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ মূলত দুটি কাজ করতে চায়: নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশের নীতি বদলাতে চায় এবং নিজের নীতি ও অবস্থান প্রকাশ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং দেশটির এ প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মোট ৪৬ বার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বছরে গড়ে ১.৮ বার। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মোট ৪৮ বার, বছরে গড়ে ৫.৩ বার। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার ওপর অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক। এর মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট নিষেধাজ্ঞা এবং প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য খুব স্পষ্ট, আর তা হলো, রাশিয়াকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশটিকে অর্থনৈতিক, আর্থিক ও প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্ব থেকে আরও বিছিন্ন করা।
সাধারণ রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবার নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করেছে, দাবি করেছে যে, রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে বিছিন্ন করা উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদেশগুলোর ওপর রাশিয়াকে বিছিন্ন করার জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করতে বা এ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কতোটা কার্যকর, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিশ্ব আজ এক অপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বায়নবিরোধী প্রবণতা বহু বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে, বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ প্রচলিত রয়েছে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এ প্রবণতাকে শক্তি যোগায়।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে, রাশিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ব্যবসা বন্ধ করে স্বদেশে ফিরে যাচ্ছে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সরাসরি মূল সরবরাহ শৃঙ্খলের অপারেটিং খরচ বাড়ায়, যা মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ। এদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বেড়েছে; আমদানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে ভুগছে। অনেকেই ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর, বৈশ্বিক উন্নয়ন নতুন এবং আরো জটিল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের জনগণের সাধারণ উদ্বেগ বাড়াতে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতভেদ বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে নষ্ট করতে ভূমিকা রাখছে, যা কাম্য নয়।
এদিকে, চীন বরাবরই জাতিসংঘের অভিন্ন উন্নয়নের নীতির ওপর জোর দিয়ে আসছে, উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির পক্ষে কথা বলে আসছে এবং বৈষম্যমূলক ও একচেটিয়া নিয়ম ও ব্যবস্থার অংশ হতে অস্বীকার করে আসছে। চীন বিশ্বাস করে যে, সকল দেশের উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন এবং সকলের অভিন্ন সমৃদ্ধিই প্রকৃত সমৃদ্ধি। এই ধরনের চিন্তা ইতিবাচক ও টেকসই। (ইয়াং/আলিম/ছাই)