মে ৬: মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রচারের অভিযোগ আনা হয়। একই বিবৃতিতে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে চীনা কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমগুলো সক্রিয় আছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বিবৃতিটিতে ভালো করে পড়লে এটা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, খোদ বিবৃতিটিই মিথ্যায় পরিপূর্ণ!
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে যে-অভিযোগ এনেছে তা আসলে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষাগার থাকা বিষয়ে রাশিয়ার তথাকথিত ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রচারে সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের ল্যাব থাকার কথা খোদ যুক্তরাষ্ট্রই স্বীকার করে নিয়েছে!
২০২১ সালের নভেম্বরে জীবাণু অস্ত্র কনভেনশনের কনফারেণ্স অফ দ্য পার্টিজ-এ যুক্তরাস্ট্রের জমা দেওয়া একটি কার্যপত্রে স্বীকার করা হয়েছে যে, ইউক্রেনে তাদের ২৬টি জৈবিক পরীক্ষাগার এবং অন্যান্য সহযোগিতামূলক সংস্থা রয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘তথ্যের নথি’ অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬টি সহযোগিতামূলক সংস্থা রয়েছে। ২০২২ সালের ৮ মার্চ, মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউল্যান্ড ইউএস সিনেটের শুনানিতে ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন যে, ‘ইউক্রেনে জৈবিক গবেষণার ব্যবস্থা রয়েছে’। এসব কি তবে মিথ্যা তথ্য?
অন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বিবৃতিতে চীনের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলা হয়েছে যে, চীন এসব করছে ‘ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টির লক্ষ্যে’। সত্য হচ্ছে, ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে, প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক জর্জ কেনান উল্লেখ করেছিলেন যে, ন্যাটোর ক্রমাগত পূর্বমুখী সম্প্রসারণ ‘স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে সবচেয়ে ভুল মার্কিন নীতি’। ইউক্রেন সংকট শুরুর পর, আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মেয়ারশেইমার এবং সুপরিচিতি ব্রিটিশ স্কলার মার্টিন জ্যাকসের মতো বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, আজ যা ঘটেছে তার জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দায়ী। দেখা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন সংকটের সূচনাকারী কে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন মত রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তি বাড়াতে চীনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে’ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো গণমাধ্যমের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো কোনো মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা এবং সংবাদমাধ্যম ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়িয়েছে। চীন বরাবরাই মার্কিন বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার শিকার।
মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যাচারের কথা বিশ্ব জানে। ইরাক যুদ্ধের ‘ওয়াশিং পাউডার’ থেকে সিরিয়ার যুদ্ধের ‘হোয়াইট হেলমেট’ পর্যন্ত, তারা উভয়ে ছিল একে অপরের প্রতারণামূলক সহযোগী। ইউক্রেন সংকটের পর তারা আবার একই কৌশল অবলম্বন করছে।
সম্প্রতি চীনা সংবাদমাধ্যমে ১৫ হাজার শব্দের দীর্ঘ নিবন্ধে ‘ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চীন-সম্পর্কিত ভ্রান্তি’ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও এর সমমনাদের চীন-সম্পর্কিত ভুল ও মিথ্যা তথ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কে গুজব ছড়াচ্ছে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করছে? প্রতিটি নিরপেক্ষ ব্যক্তি এ প্রশ্নের উত্তর জানেন।
ইউক্রেনীয় সংকটের সুচনাকারী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইতোমধ্যেই ‘মিথ্যার সাম্রাজ্য’ নামে কুখ্যাতি পেয়েছে এবং বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। যতবারই দেশটি চীনকে দোষারোপ করবে, ততবারই নিজের আসল চেহারা বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে উন্মোচিত করবে।
(ইয়াং/আলিম/হাইমান)