স্থানীয় সময় ২১ এপ্রিল ‘জাতিসংঘ চীনা ভাষা দিবস’ অথাত্ মিশরীয় জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরি চীনা বই প্রদান অনুষ্ঠান মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য হলো ‘চীনা ভাষা: যৌথভাবে ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করা’। কায়রো চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চীনা ভাষা সেতু ক্লাব (কায়রো) এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিইউট যৌথভাবে এই ইভেন্ট আয়োজন করেছে।
আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, এবারের ইভেন্টে ১৭৩ ধরনের বই এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল কাজ রয়েছে, আরবি ও ইংরেজি সংস্করণের চীনা বইও রয়েছে। সেইসঙ্গে মিশরীয় চীনা ভাষা প্রেমীদেরকে চীনা পাঠ্যপুস্তক উপহার দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম চীন মিশরের জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে চীনা বই দিয়েছে।
মিশরীয় জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান লিয়াদ বিশ্বাস করেন যে, চীনা ভাষা শেখা মিশরে একটি প্রবণতা; যা মিশর-চীন সম্পর্ককে আরও গভীর করা এবং ক্রস-সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া উন্নয়নে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের চীনা ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে, এই অনুষ্ঠান আয়োজন মিশর ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিফলিত করে। আমরা ভবিষ্যতে মিশর ও চীনের মধ্যে আরও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।”
কায়রোতে চীনা সংস্কৃতি কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সাও বিন তার বক্তৃতায় বলেন, ১৩তম জাতিসংঘ চীনা ভাষা দিসবকে একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বই প্রদান কার্যক্রম চীন-মিশর সম্পর্কের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র হিসেবে চীনাভাষার ভূমিকা তুলে ধরে এবং দুই দেশের মধ্যে সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা এবং মানুষের মধ্যে বন্ধন উন্নয়নে সাহায্য করে। তিনি বলেন, “আরও বেশি মিশরীয় বন্ধু—যারা চীনা ভাষা বলতে পারে, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন-মিশর সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মিশরীয় চীনা ভাষা সেতু ক্লাব পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে তা চীনা ভাষা প্রেমীদের একটি বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা আশা করা যায়, জাতিসংঘের চীনা ভাষা দিবস চীন-মিশর সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি নতুন সূচনা হবে।”
চীনা ভাষা সেতু ক্লাবের (কায়রো স্টেশন) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান স্যু ইয়েন হ্য বলেন যে, বই চীন-মিশর সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং বই প্রদান একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং মিশরীয় চীনা ভাষা প্রেমীদের জন্য চীনা ভাষা শেখা ও চীনকে বোঝার জন্য বিভিন্ন চ্যানেল প্রসারিত করেছে।
বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষ তাদের মাতৃভাষা হিসেবে চীনা ভাষায় কথা বলে থাকে। চীনা ভাষা শেখার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা- কথা বলা, গান শোনা এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা মার্শাল আর্ট পারফরম্যান্স দেখা ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে মিশরীয় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চীন সম্পর্কে জানার একটি চ্যানেল হয়ে উঠেছে। স্যু বলেন, “আমাদের পারস্পরিক আদান-প্রদান জোরদার করা উচিত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, জাতি ও সংস্কৃতি থেকে শিখা উচিত। বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখা উচিত।”
চীনের সিছুয়ান সুস্বাদু খাবার কোস্টারিকায় জনপ্রিয়
“আমার প্রিয় কং পাও গরুর মাংস!” কোস্টারিকার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেজন্দ্রো সোলানো ১৯ এপ্রিল সিছুয়ান খাবারে ভরা একটি টেবিলের দিকে তাকিয়ে সিনহুায়া বার্তা সংস্থার সংবাদদাতাকে একথা বলেন।
“সিছুয়ান সসেজের সঙ্গে কমলা মটরশুঁটি ভাজা সবচেয়ে সুস্বাদু!” কোস্টারিকান আইনসভার সদস্য ও লিবারেল মুভমেন্ট পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অটো গুয়েভারা পরের টেবিলে গিয়ে সাংবাদিককে বলেন, “আমি শুকনো রোস্টেড শাওজি চিংড়িও পছন্দ করি!”
সদ্য অবসর নেওয়ার কোস্টারিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া রদ্রিগেজ মশলাদার খাবার পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, “আমি এমন মশলাদার খাবার খেতে পারি না, কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে এই মাছের স্বাদযুক্ত খাবারটি খুবই ভাল, খুবই সুস্বাদু।”
১৯ এপ্রিলের সন্ধ্যায় ‘সিছুয়ান খাবার সংস্কৃতি সপ্তাহ’ কোস্টারিকার রাজধানী সান হোসেতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি চীন ও কোস্টারিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ১০ম বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি। উপরে উল্লিখিত অতিথি ছাড়াও, কোস্টারিকার সংস্কৃতিমন্ত্রী সিলভিয়া দুরানসহ প্রায় ১২০জন অতিথি সিছুয়ান খাবারের স্বাদ উপভোগের এই ভোজসভায় অংশ নেন।
কোস্টারিকাতে চীনের রাষ্ট্রদূত সুং ইয়েন বিন বলেন, ‘মানুষ খাদ্যকে তাদের অন্যতম আনন্দ হিসেবে স্বীকার করে।’ চীনা খাদ্য সংস্কৃতির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি ব্যাপক ও গভীর। সিছুয়ান রন্ধনপ্রণালী চীনের ৮টি প্রধান রান্নার একটি।
সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংদু ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব সুস্বাদু খাবারের রাজধানী’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বিশ্বের মাত্র ৬টি শহর এই সম্মান পেয়েছে। এই সিছুয়ান সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য, সিছুয়ান প্রদেশ বিশেষ পেশাদার শেফদের পাঠানো হয়।
সিছুয়ান প্রাদেশিক বৈদেশিক ও বিদেশি চীনা-বিষয়ক অফিসের উপ-পরিচালক ওয়েন সু বলেন, তিনি আশা করেন- সিছুয়ান খাদ্য সংস্কৃতির মাধ্যমে চীন ও কোস্টারিকার মধ্যে বেসরকারি বিনিময় বাড়বে এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে।
কোস্টারিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী আলেজন্দ্রো সোলানো বলেন, ১০ বছর আগে কোস্টারিকা ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং এখন দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে তিনি খুব খুশি।
কোস্টারিকা চীনের দূতাবাস, সিছুয়ান প্রাদেশিক বৈদেশিক ও বিদেশি চীন-বিষয়ক অফিস, সিছুয়ান প্রদেশের বিদেশি বিনিময় সমিতি, কোস্টারিকান চীনা সংস্কৃতি সমিতি ও কোস্টারিকা-চীন মৈত্রী সমিতির যৌথভাবে ‘সিছুয়ান সুস্বাদু খাবার সংস্কৃতি কেন্দ্র’ আয়োজন করেছে। ২২ এপ্রিল সিছুয়ান প্রাদেশিক বৈদেশিক ও বিদেশি চীন-বিষয়ক অফিসও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জলসে অন্য একটি সিছুয়ান সুস্বাদু খাবার নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
ড্রোনের তোলা ছবিতে মিলেনিয়াম মোগাও গ্রোটোস
বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী মোগাও গ্রোটোস হ্যসি করিডোরের পশ্চিম প্রান্তে কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং শহরের ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিংশা পর্বতের পূর্ব পাদদেশে অবস্থিত। গুহাগুলির মোট দৈর্ঘ্য ১৬০০মিটারেও বেশি। হাজার বছর পর, এখানে ৭৩৫টি গুহা, ৪৫হাজার বর্গমিটারের ম্যুরাল এবং ২৪০০টিরও বেশি ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। এর মূল্যবান ঐতিহাসিক, শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত মূল্য রয়েছে।
মোগাও গ্রোটোস হলো বিশ্বের বৃহত্তম গুহা মন্দির সাইট যেখানে দীর্ঘতম সময় ধরে, প্রচুর সামগ্রী, সবচেয়ে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এবং সবচেয়ে সূক্ষ্ম শিল্প দেখা যায়। ১৯৮৭ সালে মোগাও গ্রোটোকে ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি সিনহুয়া বার্তা সংস্থা ড্রোনের মাধ্যমে মোগাও গ্রোটোসের ছবি তুলেছে। সেই ড্রোন দৃশ্য উপভোগের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসুন।
শেক্সপিয়ারের হোমটাউনে ‘বিশ্ব বই দিবস’
২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস, এবং মহান ব্রিটিশ সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্মদিন। সেদিন অনেক সাহিত্যপ্রেমী শেক্সপিয়ারের হোমটাউন, ইংল্যান্ডের এভনের গ্রামের স্ট্রাটফোর্ডে যান, শেক্সপিয়ারের কাছে যেতে এবং তাকে অনুভব করতে চান।
এদিন সকালে শেক্সপিয়ারের ছবি-সম্বলিত একটি পতাকা গ্রামের উপর উড়তে দেখা যায়। যা উজ্জ্বল সূর্যালোকে অনেক আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল। অর্কেস্ট্রার সুরের তালে স্থানীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও লোকজনকে নিয়ে গঠিত পারফরমিং দল কেন্দ্রীয় চত্বরে জড়ো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা একযোগে জন্মদিনের গান পরিবেশন করেন। এদিনটি ছিল শেক্সপিয়ারের ৪৫৮তম জন্মদিন।
শেক্সপিয়ার ১৫৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬১৬ সালে মারা যান। তার জন্মের সঠিক তারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। ২৩ এপ্রিল ব্রিটিশ মানুষ তার জন্মদিনকে ব্যাপকভাবে পালন করে। এদিনটির বিশেষ তাত্পর্য হল ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো ২৩ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব বই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর ফলে আরও বেশি মানুষ পড়া ও লেখার প্রতি উত্সাহিত হবে, বই পড়াকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে মনে করবে।
ডার্বিশায়ারের একজন বয়স্ক দম্পতি সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে জানায়, তারা আজ শেক্সপিয়ারের হোমটাউনে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুভব করেছেন। তারা রাস্তার অভিনেতাদের পরিবেশিত শেক্সপিয়ারের কিছু নাটকও দেখেছেন।
ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শেক্সপিয়ার ইনস্টিটিউটের সম্মানিত গবেষক পল এডমন্ডসন সিনহুয়া বার্তা সংস্থার এক সাক্ষাত্কারে বলেন, শেক্সপিয়ারের মতো বিশ্ব সাহিত্যিকদের সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে বই দিবসের গুরুত্ব অনেক। তিনি বলেন যে, বিশ্ব সাহিত্যে শেক্সপিয়ারের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল অনেক শব্দের উদ্ভাবন। শেক্সপিয়ার হলেন ভাষার শিক্ষক, আগেবের প্রকাশক, চরিত্রের চিত্রকর এবং গল্পকার।
বই বিক্রির দায়িত্বে থাকা কর্মচারী ক্রিস্টিনা উলার্ড সিনহুয়াকে বলেন, শেক্সপিয়ারের জন্মদিনে বই পড়া খুবই অর্থপূর্ণ। ২৩ এপ্রিলে বইয়ের দোকানে শেক্সপিয়ার সম্পর্কিত বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামটিতে শেক্সপিয়ারের জন্মদিন উদযাপন প্রথম দুই বছর কোভিড-১৯ মহামারীতে প্রভাবিত হয়। সেই বছর থেকে, শেক্সপিয়ারের পায়ের ছাপ দেখতে সেখানে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই