সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কেনাবেচা ও বিশ্লেষণ
2022-04-30 19:11:24

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের মালিক হয়েছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। জানা যায়, ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনেছেন তিনি। বেসরকারি সংস্থার হস্তান্তর হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে এটাই সবচেয়ে বড় চুক্তি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এই ধনকুবের বলছেন, ‘বাকস্বাধীনতার প্রকৃত প্ল্যাটফর্ম’ হওয়ার জন্য এবং আরও উন্নত করতে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হতে হবে টুইটারকে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী এমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর  ব্যবহার, কেনা-বেচা এবং বিভিন্নমুখী প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত থাকছে সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগ চলছে এখন। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা বিষয় এখন তথ্যপ্রযুক্তির হাওয়ায় ভাসছে। বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে নতুন ধারা যোগ করেছে- তাতে আনুষ্ঠানিক খবরাখবরের মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম কখনও কখনও প্রতিদ্বন্দ্বির মতো হয়ে যায়। স্বাভাবিক কারণেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরকার বা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে। আবার এক দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্যদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে করে বিদেশি স্যোশাল মিডিয়ায় ভিনদেশি প্রাশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর এ সুযোগটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ভাবেই কাজে লাগাতে পারে মানুষ।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেবা প্রাত্যহিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। তবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবহারকারী মনে করেন সামাজিক নেটওয়ার্কিং সেবা প্রাত্যহিক জীবনের জন্য নেতিবাচক। প্রতিষ্ঠানটি সাত হাজার ৩৯৫জন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাংলাদেশির ওপর এ জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশির মতে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এসএনএস হচ্ছে ফেসবুক। ৭০ শতাংশের বেশি স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সেবা ব্যবহারকারী প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি এসব সেবা ব্যবহার করেন। বেসরকারি একটি সংস্থা পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর মধ্যে ৬জন অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের কাজ সারেন।

 

টুইটারের মালিকানা হাতবদলের ঘটনাটি সাড়া জাগিয়েছে সবখানে। ইলন মাস্ক সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত বাকস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেবেন। এ যেন সরাসরি ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে নামার ঘোষণা দিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত এ দুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পার্থক্য বজায় ছিল, তা যদি ঘুঁচে যায়, তাহলে দুই মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য কীভাবে আকর্ষণীয় হবে- তা প্রশ্নের দাবি রাখে।

 

সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির অংশ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ওয়েইসিন, লিংক্‌ডইন, টেলিগ্রাম ইত্যাদি অন্যতম। এ মাধ্যমকে ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। খুলে গেছে ই-কমার্সের দুয়ার। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক বিরাট মাধ্যমের সূচনা হয়েছে। বিভিন্ন নামীদামী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিংবা ছোটখাট ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যার ফলে তারা নিজেদের বিক্রয়যোগ্য পণ্যের প্রচারণা ক্রেতাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারেন। এই ই-কমার্সের সুফল ভোগ করতে বর্তমানে বহু বেকার তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে অনেকেই এখন অনলাইন ব্যবসামুখী হচ্ছে ও সফলতার মুখ দেখছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ঘিরেই গড়ে উঠছে নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন সংগঠন। মোটকথা, জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব নেই। এ যোগাযোগ মাধ্যমের যথার্থ ব্যবহার আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা অতি জরুরি।