‘রেসিডেন্ট ইভিল’ মেকার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তর জৈব সামরিক কার্যকলাপ স্পষ্ট করতে হবে: চীনা মুখপাত্র
2022-04-29 15:28:27

এপ্রিল ২৯:চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র থা খ্যফেই গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জৈব অস্ত্র গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্র জৈব রাসায়নিক সংকটের নির্মাতা। বিশ্বকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা করা উচিত্। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ নিয়ে শুনবেন একটি প্রতিবেদন।

কিছুদিন আগে, বায়োসিকিউরিটি ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মেলনে রাশিয়া ইউক্রেন এবং বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব সামরিক কার্যকলাপ সম্পর্কিত নথি প্রকাশিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জৈব অস্ত্র কনভেনশন বা বিডাবলিউসি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়। রাশিয়ার অভিযোগের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, চীন ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে জৈব অস্ত্র কনভেনশন বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এ প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র থা খ্যফেই বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিডাবলিউসি’র লঙ্ঘনমূলক আচরণ এবং জৈব সামরিক কার্যকলাপের অবস্থা উন্মোচিত হয়েছে। এতে চীনসহ আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ বাড়ছে। চীন মনে করে, এই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি বলনে,

‘প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র হল জৈব রাসায়নিক সংকটের প্রকৃত স্রষ্টা। এমন দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী গত শতাব্দীর ৫০’-এর দশকে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত এলাকাসহ কোরীয় উপদ্বীপে ব্যাকটিরিওলজিকাল অস্ত্র ব্যবহার করেছিল; যা  আমেরিকান ইতিহাসবিদরাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ ভিয়েতনামের জনগণ এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছিল। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যা পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রসহ সব গণবিধ্বংসী অস্ত্র অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ৩০টি দেশে মোট ৩৩৬টি গবেষণাগার স্থাপন করেছে। মার্কিন পক্ষকে প্রশ্ন করার অধিকার বিশ্ববাসীর আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের সঙ্গে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব গবেষণাগারের সম্পর্ক কী? কেন বিরল মহামারী প্রায়ই মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিদেশি জৈব পরীক্ষাগারের চারপাশে দেখা যায়? মার্কিন পক্ষকে অবশ্যই সব প্রশ্নের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।

থান খ্যফেই জোর দিয়ে বলেন, চীন সবসময় জৈব অস্ত্র কনভেনশনের প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো কঠোরভাবে মেনে চলেছে, জৈব অস্ত্রসহ সব গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পূর্ণ ধ্বংসের পক্ষে। চীন জৈবিক অস্ত্রের বিকাশ বা ব্যবহারের দৃঢ় বিরোধিতা করে।

তিনি বলেন,

‘যুক্তরাষ্ট্রের বানানো তথাকথিত ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সম্মতি রিপোর্টে’ শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলা হয়েছে এবং তা ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক ও হাস্যকর। বিপরীত দিকে যুক্তরাষ্ট্রই একচেটিয়াভাবে জৈব অস্ত্র কনভেনশনের জন্য একটি যাচাইকরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে এবং বিশ্বজুড়ে জৈব গবেষণাগার স্থাপন করেছে এবং জৈব সামরিক কার্যকলাপ বিকাশ করেছে। কেন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে দ্বৈত মানদণ্ড পালন করে? সেদেশটি কী আড়াল করার চেষ্টা করছে? দায়িত্বজ্ঞানহীন এমন মনোভাব এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। জৈব সামরিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সব দেশের নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। জৈব অস্ত্রের শিকার দেশ হিসাবে চীন আন্তরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে মনোযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ ও সন্দেহের জবাব দেওয়া, তার জৈব সামরিক কার্যকলাপ নিয়ে ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা করা এবং বহুপক্ষীয় পরমাণু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়ার দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে থা খ্যফেই বলেন, বিশ্বের সবচে গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাষ্ট্র হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতাই উভয় পক্ষের জন্য কল্যাণকর হবে এবং যুদ্ধ হলে দুটি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুটি বাহিনীর স্থিতিশীল সম্পর্ক দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’ চায় না, চীনের ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না, চীনের বিরুদ্ধে তার জোটকে শক্তিশালী করতে চায় না, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ সমর্থন করে না এবং চীনের সঙ্গে সংঘর্ষ করার ইচ্ছা নেই। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই মন্তব্য বাস্তবায়ন করার দাবি জানায় চীন। মুখপাত্র বলেন,

 ‘যে বিষয়ে জোর দেওয়া দরকার, তা হল চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নের নিয়ম আছে। তাইওয়ান, আকাশ ও সমুদ্র নিরাপত্তা এবং ইউক্রেনসহ অন্যান্য ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উসকানি, অপবাদ, হুমকি ও চাপের দৃঢ় পাল্টা জবাব দেবে চীন। চীন দৃঢ়ভাবে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা করে।

আমরা মার্কিন পক্ষকে শক্তভাবে জানাতে চাই যে, চীনের দৃঢ় সংকল্প ও সক্ষমতাকে অবহেলা করা ঠিক হবে না। আশা করা যায়, মার্কিন পক্ষ স্নায়ুযুদ্ধের জিরো-সাম গেমের মানসিকতা ত্যাগ করবে, চীনের উন্নয়নকে বস্তুনিষ্ঠ ও যৌক্তিকভাবে দেখবে এবং চীনের সঙ্গে নেতাদ্বয়ের সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য বাস্তবায়ন করবে। পাশাপাশি, সামরিক পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করবে, ঝুঁকি এবং সংকট মোকাবিলা নিয়ন্ত্রণ করবে, বাস্তব সহযোগিতা চালাবে, যাতে দুই বাহিনীর সম্পর্কের স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল বিকাশ নিশ্চিত করা যায়।’

     লিলি/তৌহিদ