এক কাপ কফিতে গভীর আবেগ
2022-04-29 10:00:04

 


মধ্য আমেরিকার সুইডেন হিসেবে খ্যাত কোস্টারিকা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর অন্যতম।  আশি বছর বয়সী মালক্য সামোলা স্থানীয় কফি খামারের একজন মালিক। ২০১৩ সালের ৩ জুন সামলা পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। সে সময় কোস্টারিকা সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও তার স্ত্রী পেং লি ইউয়ান সামলা পরিবার সফর করেন। সামলা তার সিটিং রুম, বেডরুম, ও রান্নার ঘর চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে দেখান এবং তার পরিবারের তিন প্রজন্মের সকলের জীবনের কথা তুলে ধরেন।  কাঠ দিয়ে রান্না করা, হাঁস-মুরগীর মাটিতে চলাফেরা এবং ঘরের বাইরের গ্রামীণ দৃশ্যবালী দেখেন প্রেসিডেন্ট সি। সামলার মেয়ে স্মরণ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সে সময় বলেছিলেন, গ্রামীণ দৃশ্যবলী দেখে গ্রামে তাঁর তরুণ জীবন ও কর্মের কথা মনে পড়েছে।

বাসার পিছনের কফি বাগানে সি চিন পিং  হাটতে হাটতে কফি সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তিনি জানতে চান, কফি কবে পাকে? বাজার কেমন?। সামলা প্রেসিডেন্ট সিকে বলেন, তিনি প্রায় ৫২ বছর ধরে কফি চাষে জড়িত। কফি তার পরিবারের আয়ের মূল উত্স।

 

সি চিন পিং ও সামলা তার পারিবারিক বাগানের কাঠের ঘরে বসে কফি পানের পাশাপাশি আড্ডা দেন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো কোস্টারিকায় এসেছি। এখানকার মানুষ খুব সহজ-সরল, পরিশ্রমী এবং মেধাবী। আমি এখানকার সাধারণ মানুষের জীবন দেখতে চাই’।

 

সি চিন পিং আরও বলেন, তিনি ৭ বছর কৃষক ছিলেন। তাই সাধারণ মানুষের প্রতি তার প্রকৃত এবং গভীর আবেগ রয়েছে।

 

সি চিন পিংয়ের আন্তরিক কথা সামলাকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘তার কথায় আমি খুব গর্বিত। আগে আমি কৃষক হিসেবে লজ্জা পেতাম। সি’র কথা শুনে কৃষক হয়ে আমি ভুল করিনি বলে মনে করি’।

 

সি চিন পিং বলেছেন, ‘আমি সব সময় কৃষকদের দেখতে গ্রামে যাই। তাদের জীবন-যাত্রা ও আবেগ সম্পর্কে খোঁজখবর নিই। গ্রামীণ কাজ ভালোভাবে করলে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং কৃষকদের সুখী জীবন নিশ্চিত করা আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ’।

 

সামলার ছেলে আরসেথো বলেন, ‘এটি জনগণের প্রত্যাশিত সরকার। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কেবল অফিসে থেকে কাজ করার প্রেসিডেন্ট নন, তিনি সব সময় কারখানা, স্কুল ও গ্রাম পরিদর্শন করেন। যেসব বিষয়ে তিনি মনোযোগী এবং দারিদ্র্যমুক্তিতে তাঁর প্রচেষ্টা দেখতে পেলাম আমরা’।

 

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘জনগণ যেটা নিয়ে চিন্তা করেন, সেটার ওপর নজর রাখি আমি। জনগণ যেটা প্রত্যাশা করে, সেটার জন্য আমি প্রচেষ্টা চালাই’। সাত বছর ধরে চীনের স্যানসি প্রদেশে তাঁর তরুণ সময় কাটান সি চিন পিং। তিনি তাঁর গভীর আবেগ সে হলদে মাটির সঙ্গে যুক্ত করেছেন। বহু বছর পর, সামলা পরিবারের বাগান বা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মঞ্চে তিনি বারবার স্যান সি প্রদেশের লিয়াং চিয়া হ্য’র সময়কাল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেখানেই পা দিই না কেন? আমি চিরকালই হলুদ মাটির ছেলে’।

 

জনগণের সঙ্গে জড়িত আছে তার সবচেয়ে গভীর আবেগ। তাই কোস্টারিকা সফরকালেও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কৃষক পরিবার, কারখানা এবং বন্দর সফর করেন। তিনি সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান এবং কথা বলেন। তাঁর আন্তরিক আচরণের মাধ্যমে কোস্টারিকার জনগণ চীন সম্পর্কে এবং চীনা মানুষ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারেন।

 

আন্তরিক মন দিয়ে বন্ধুত্ব করলে সে বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়। সামলার পরিবারের বইয়ের তাকে স্পেনিশ সংস্করণের ‘সি চিন পিং’র রাষ্ট্র প্রশাসন’ বইটি আছে। সি চিন পিং’র সঙ্গে তার পরিবারের ছবিও ভালো দেখায়। সামলা বলেন, ‘যেন কালকে তিনি আসলেন। আমরা তাঁর সফরের প্রতিটি মুহূর্ত মনে রেখেছি’।

 

সামলা স্মরণ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কফির ফুল ছিড়ে তাঁর স্ত্রীকে গন্ধ দেন। দুজন সাধারণ দম্পতির মতো একটি বিস্কুট শেয়ার করেন। সি চিন পিং সে সময় বলেছেন, ‘আমি বলতে চাই যে, চীনে আরো বেশি কফি রপ্তানি করা উচিত’।

 

এক কাপ কফি, এক ধরণের বন্ধুত্ব। নেতার আন্তরিকতায় দেখতে পান বড় দেশের উষ্ণতা, যা সামলা পরিবারের জন্য সুন্দর স্মৃতি হয়ে আছে। সামলার পরিবারের জন্য কফি শুধু চীনে রপ্তানিকৃত পণ্য নয়, বরং আবেগ ও শুভ কামনার বাহক। তারা বলেন, ‘আশা করি, আবারও কোনো একদিন আমরা সি চিন পিং দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে পারবো এবং আড্ডা মারবো। এখানে চিরদিন তাঁদের জন্য থাকবে এক কাপ কফি’।