আজকের টপিক: বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া ঠেকাতে আর্টেমিসিনিনের ভূমিকা
2022-04-28 18:09:23

এপ্রিল ২৭: গত ২৫ এপ্রিল ছিল ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস’। আবার চলতি বছর হচ্ছে আর্টেমিসিনিন বাজারে আসার ৫০তম বার্ষিকী। ম্যালেরিয়া ঠেকাতে আর্টেমিসিনিন বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রেখে আসছে। আর এই ওষুধ আবিষ্কার করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনের আর্টেমিসিনিন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং ম্যালেরিয়া ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চীন যে সহায়তা দিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক সমাজ তারও ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

 ‘ম্যালেরিয়া’ প্লাজমোডিয়াম সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ এবং এটি বিশ্বের তিনটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে একটি। পরিসংখ্যান অনুসারে, আর্টেমিসিনিন আবিষ্কারের আগে বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতো। ১৯৭২ সালে ‘থু ইয়ৌ ইয়ৌ’ গবেষণা গোষ্ঠী ম্যালেরিয়ারোধী কার্যকর মনোমার আর্টেমিসিনিন পেতে গবেষণা শুরু করে। ১৯৯২ সালে, বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, ‘থু ইয়ৌ ইয়ৌ’-এর দায়িত্বে থাকা বৈজ্ঞানিক গবেষণা দল একটি নতুন ওষুধ ডাইহাইড্রোআর্টেমিসিনিন তৈরি করতে সক্ষম হয়, যার ক্লিনিকাল কার্যকারিতা আর্টেমিসিনিনের চেয়ে বেশি।

২০১৫ সালের অক্টোবরে ‘থু ইয়ৌ ইয়ৌ’ আর্টেমিসিনিন আবিষ্কারে তার মূল অবদানের জন্য ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার জিতে নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্কার এক অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২০ বছরে, একটি প্রথম সারির অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ হিসাবে, আর্টেমিসিনিন সারা বিশ্বে লাখ লাখ প্রাণ বাঁচিয়েছে এবং প্রতি বছর কোটি কোটি রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে এ ওষুধ দিয়ে।

গত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘আর্টেমিসিনিন বাজারে আসার ৫০তম  বার্ষিকী এবং মানব স্বাস্থ্যের একটি অভিন্ন  স্বার্থ কমিউনিটি গড়ে তোলা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ফোরামে’ চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার মহাপরিচালক লুও চাও হুই বলেন, আর্টেমিসিনিন ইতোমধ্যেই ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে চীনের গুরুত্বপূর্ণ কার্ডে পরিণত হয়েছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন


“আবিষ্কারের দিন থেকে, আর্টেমিসিনিন চীনা জনগণের মহান ভালবাসা বহন করেছে এবং চার সমুদ্র অতিক্রম করেছে। এটি চীনের অবদান এবং ঐতিহ্যগত চীনা ওষুধের অবদান। আর্টেমিসিনিন চীনের ‘ছোট কিন্তু সুন্দর’ শীর্ষক বৈদেশিক সহায়তার সুন্দর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।”

জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্টেমিসিনিন ওষুধের প্রয়োগ, কর্মীদের প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ প্রেরণ এবং ম্যালেরিয়াবিরোধী কেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ঠেকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অনেক সহায়তা দিয়েছে চীন। এখন পর্যন্ত, ম্যালেরিয়া ঠেকাতে চীনের সহায়তা-প্রকল্পের সংখ্যা ৩ শতাধিক। ৩০টিরও বেশি দেশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন করেছে চীন। আর ৭২টি দেশ ও অঞ্চলে ২৮ হাজার চিকিত্সাকর্মী পাঠিয়েছে চীন। পাশাপাশি, উন্নয়নশীল দেশগুলোর হাজার হাজার ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী কর্মীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে দেশটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রায় ২৪ কোটি মানুষ আর্টেমিসিনিন-ভিত্তিক সংমিশ্রণ থেরাপি থেকে উপকৃত হয়েছে। চীনের আর্টেমিসিনিন এবং ম্যালেরিয়া বিরোধী সহায়তা প্রকল্পগুলিও প্রাপক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে উচ্চ প্রশংসা এবং ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়া ফোরামে তাঁর বক্তৃতায় বলেন,

“বিগত পাঁচ বছরে ৬ লাখ ম্যালেরিয়া রোগী কমিউনিটি পর্যায় থেকে কার্যকরভাবে চিকিত্সা পেয়েছেন। আর্টেমিসিনিনের ভিত্তিতে যৌথ চিকিত্সা রোগের লক্ষণ প্রশমনে দ্রুত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।”

তিনি চীনা গবেষণাকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)