এপ্রিল ২৭: ‘সি চিন পিং: রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি’ বইটিকে বরাবরই চীনকে জানার জন্য বিশ্বের জানালা হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশে বিদেশে বই প্রকাশের পরিমাণ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চীন ও বিশ্বের মধ্যে প্রাণবন্ত বিনিময়ের এই কাজে অংশগ্রহণকারী বিদেশি বহুভাষী অনুবাদক এবং সম্পাদকরা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
নেপালের চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্বাহী চেয়ারম্যান সুন্দর নাথ ভাত্তারাই ‘সি চিন পিং: রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি’ বইয়ের নেপালি ভাষার সংস্করণের প্রথম পর্বের অনুবাদ কাজে অংশ নিয়েছিলেন। ২০২১ সালে ‘সি চিন পিং: রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি’ বইয়ের নেপালি ভাষার সংস্কণের দ্বিতীয় পর্ব কাঠমাণ্ডুতে প্রকাশ করা হয়। এর আগে বইয়ের প্রথম খণ্ড ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। নেপালের চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থাত্ ৮৩ বছর বয়সী সুন্দর নাথ ভাত্তারাইয়ের উদ্যোগে এ দুটি পর্বের অনুবাদ ও প্রকাশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তা ছাড়া, তিনি নিজেই প্রত্যেক খণ্ডের শতাধিক পৃষ্ঠা অনুবাদ করেছেন। নেপালের প্রাক্তন এই কূটনীতিকের ধারণায় ‘সি চিন পিং: রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি’ বইটি নেপালি ভাষায় অনুবাদ করা এবং নেপালি পাঠকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া তত্পর্যময়।
তিনি বলেন,
‘বইটিতে চীনা পরিচালনার নানা দিক রেকর্ড করা হয়। বইটি অনুবাদ করা আমাদের দারুণ কাজ। নেপালি পাঠকদের জন্য এটি একটি সুযোগ, তারা চীন পরিচালনা সংক্রান্ত প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চিন্তাধারা, প্রস্তাব ও অর্জিত সাফল্য জানতে সক্ষম।’
ভাত্তারাই মনে করেন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও অর্থনীতি নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যেমন, বইটিতে দারিদ্র্যোমোচন ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ক্ষেত্রে চীনের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে; যা নেপালসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো শিখতে পারে। তিনি বলেন,
‘রাষ্ট্রীয় প্রশাসন প্রক্রিয়ায় নানা দিকে চীনের নীতিমালা সবার জন্য শিক্ষণীয়। শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন হলো সবার আকাঙ্ক্ষা। দুর্নীতি নির্মূল করা হলো সবার ইচ্ছা। সুষ্ঠু ও ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনই সবার লক্ষ্য। ‘শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন মেনে চলা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের জয় বেগবান করা’সহ চীনের অনুসৃত এসব ধারণা এবং প্রস্তাব বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
ভাত্তারাই বহুবার চীন সফর করেছেন, বিশেষ করে গত দশ বছরে চীনের উন্নয়ন তার মনে গভীর দাগ কেটেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘অব্যাহতভাবে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ, উন্মুক্তকরণের মান বাড়ানো এবং উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সংস্কার ও উন্নয়ন প্রচার করার’ প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, চীনের ভবিষ্যত আরও উন্নত হবে।
তিনি বলেন,
‘চীনের উন্নয়ন নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং, তা বহির্বিশ্বে উন্মুক্ত করার জন্য জোর দিচ্ছে এবং এই যাত্রা ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। আজ চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে, তা এখনও উন্মুক্ত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আগামী দিনে চীন এই উন্মুক্তকরণের পথে আরো উন্নতি লাভ করবে।’
ভাত্তারাই স্বীকার করেন, সামনাসামনি প্রেসিডেন্ট সিকে না দেখলেও তার বই অনুবাদ করা এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য পড়ার মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট সি’র ‘জনগণকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখার’ ধারণার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন,
‘প্রেসিডেন্ট সি সব সমস্যা বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে জনগণকে কেন্দ্র করে চিন্তা করেন। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামীণ পরিবারে গিয়েছেন। চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন। তার এই জনগণকেন্দ্রিক ধারণা সত্যিই শ্রদ্ধা করার মতো বিষয়।’
ভাত্তারাই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেন। তিনি মনে করেন, কিছু উন্নত দেশ শুধুমাত্র তাদের আধিপত্য প্রদর্শনের জন্য নেপালের মতো তুলনামূলক পেছনে থাকা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষমতার রাজনীতি বা এমনকি ‘জবরদস্তিমূলক কূটনীতি’ প্রয়োগ করেন। তবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগটি ‘যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও সমন্বিত অর্জনের’ নীতিতে চলে; যা একটি দায়িত্বশীল দেশের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।
ভাত্তারাই নেপাল ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গভীরতা এবং দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। নেপালের ভালো প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীনের আরও ভালো ভবিষ্যত প্রত্যাশা করেন তিনি।
লিলি/তৌহিদ/শুয়ে