এপ্রিল ২৫: চীনের সপ্তম মহাকাশ দিবস উপলক্ষ্যে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে চীনের কোনও নতুন পরিকল্পনা আছে কি? সম্প্রতি ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর উ ইয়েনহুয়া সম্প্রতি জানান, চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের চতুর্থ পর্ব এ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। চায়না অ্যারোস্পেস এ বছর ‘ছাংএ্য ৬’, ‘ছাংএ্য ৭’ এবং ‘ছাংএ্য ৮’ মহাকাশে পাঠাবে। পাশাপাশি, মিশনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক চন্দ্র বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণকাজ চালু করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘ছাংএ্য ৬’ চাঁদের পিছন দিক বা অন্ধকার অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে এবং চাঁদের চারপাশে যোগাযোগ ও নেভিগেশন স্যাটেলাইটগুলির একটি নক্ষত্রমণ্ডল নির্মাণের কাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
২০২১ সালে চীনের মহাকাশ শিল্প উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। ২০২২ সালে চীনের মহাকাশ শিল্পে স্বপ্ন অন্বেষণের ধাপ বন্ধ হয় নি। সারা বছর ৬০টিরও বেশি মহাকাশ উৎক্ষেপণ মিশনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চীনের মহাকাশ স্টেশন অন-অরবিট নির্মাণ সম্পন্ন করবে, চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের চতুর্থ পর্ব এবং প্রধান গ্রহাণু সনাক্তকরণ কাজসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন চালু করবে। ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর উ ইয়েনহুয়া জানান, ‘ছাংএ্য ৬’ মিশনে চীন চাঁদের পিছন দিকের নমুনা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন,
‘এখন দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে আশা করছেন যে, আমরা চাঁদের পিছনের দিক থেকে নমুনা নিতে পারব। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও দেশই চাঁদের পেছনের অংশ থেকে নমুনা আনতে পারে নি। যা গবেষণার জন্য অনেক বেশি মূল্যবান। বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন যে, চাঁদের পিছন দিকের বয়স সামনের দিকের চেয়ে ২ বিলিয়ন বছর কম হতে পারে।’
চাঁদের ‘ম্যাগমা’ কখন স্থির হয়েছে? এটি চন্দ্র বিবর্তনের ইতিহাস অধ্যয়নের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন। ২০২০ সালের শেষ দিকে, চীনের ‘ছাংএ্য ৫’ অনুসন্ধানযান চাঁদ থেকে কিছু মাটি পৃথিবীতে নিয়ে আসে। দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের কঠোর গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর তারা একটি উপসংহারে পৌঁছায়। তা হলো- ১.৯৬ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদে ম্যাগমা ছিল। যা চাঁদের বর্তমান পরিচিত ভূতাত্ত্বিক বয়সকে প্রায় এক বিলিয়ন বছর বর্ধিত করেছে। এটি চাঁদের বিবর্তনের ইতিহাস উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করেছে। উ ইয়েনহুয়া বলেন,
‘‘ছাংএ্য ৫’ অনুসন্ধানযানের উদ্যোগে সংগ্রহ করা নমুনা অনুযায়ী চাঁদের বয়স আগের ধারণার চেয়ে এক বিলিয়ন বছর কমেছে। তবে, আমাদের এই প্রাথমিক ধারণা কি ঠিক? আমরা ‘ছাংএ্য ৬’ চাঁদ অনুসন্ধানযানের নেওয়া নমুনা বিশ্লেষণ করে হয়তো তা জানা যাবে। এই বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তা ছাড়া, চাঁদের পিছনের উপকরণ ও পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় তত্ত্বাবধান ও গবেষণা করা শুরু হয় নি। তাই চাঁদের অন্ধকার অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
উ ইয়েনহুয়া বলেন, চাঁদের পিছনে অবতরণ করে নমুনা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি কাজটি হলো কীভাবে চাঁদের পিছনের অংশে পাঠানো স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তথ্য আদানপ্রদান করা যাবে—এই সমস্যার সমাধান করা উচিত্।
নিক্ষেপ করা ‘ছাংএ্য ৪’-সহ চাঁদ অনুসন্ধান প্রকল্পের চতুর্থ পর্বের পরিকল্পনায় রয়েছে ৪টি মিশন। পরে আরো আছে তিনটি মিশন। ‘ছাংএ্য ৭’ ও ‘ছাংএ্য ৮’ প্রসঙ্গে উ ইয়েনহুয়া বলেন,
‘প্রথম উদ্দেশ্য হলো জরিপ করা। জরিপ করার উদ্দেশ্যে এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগবে। দ্বিতীয় পর্যায় হবে নির্মাণকাজ। এজন্য ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগবে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্বাগত জানাই। সব দেশের উদ্যোক্তা ও সামাজিক সংস্থাকেও স্বাগত জানাই। যাতে আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্রকে একটি সম্পূর্ণ ও কার্যকরী বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
লিলি/তৌহিদ/শুয়ে