মহাকাশে চীনা স্বপ্নের আলো
2022-04-25 15:03:11

গতকাল (রোববার) ছিল চীনের সপ্তম মহাকাশ দিবস। চলতি বছরে মহাকাশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মহাকাশে চীনা স্বপ্নের আলো’। এ পর্যন্ত চীনা জু রো নামক মহাকাশযানের মঙ্গল অনুসন্ধ্যান, সি হ্য মহকাশযানের সূর্য অনুসন্ধ্যান এবং থিয়ান হ্য নামক মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণসহ মহাকাশে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে চীন। নিজের মহাকাশ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে দেশটি। মহাকাশের আরও গভীরে অনুসন্ধ্যান করে যাচ্ছে চীন।

 

২০১৬ সালের ৮ মার্চ চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ প্রতি বছরের ২৪ এপ্রিলকে ‘চীনের মহাকাশ দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করে। চলতি বছরের  মহাকাশ দিবস উপলক্ষ্যে চীনের বিভিন্ন স্থানে মহাকাশ জনপ্রিয়করণ কার্যকলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাং এ-৫ মহাকাশযানের চন্দ্র থেকে আনা মাটির নমুনা বিনা পয়সায় চীনের হাই নান প্রদেশের জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ও জনগণ প্রথমবারের মতো চন্দ্রের মাটি দেখতে পেয়েছেন। বেইজিংয়ে মহাকাশ জনপ্রিয়করণ কার্যকলাপ কেন্দ্রে মহাকাশ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অলিম্পিক গেমসের মশালের মহাকাশ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছেন, যা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মহাকাশযান সিটিতে চীনের মহাকাশ শিল্প প্রদর্শনীতে নভোচারীদের ও মহাকাশ অনুরাগীদের তোলা অনেক ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। চীনের সামরিক শিল্পের সাংবাদিক সমিতির ক্যামেরা-বিষয়ক কমিশনের মহাপরিচালক মৌ চিয়ান ওয়েই বলেন, এ প্রদর্শনী খুব লাভবান হয়েছে। তাতে চীনের গত ১০ বছরে চীনের মহাকাশের ব্যাপক সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। 

 

অনেকে হয়তো ভাবেন, মহাকাশ অনুসন্ধ্যানের সঙ্গে মানব জাতির জীবন-যাপনের সঙ্গে কি সম্পর্ক রয়েছে?  আসলে মহাকাশ সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আমরা মহাকাশে যাই নি, তবে আমরা যে শাকসবজি খায়, তাদের কিছু হয়তো মহাকাশে পরিবর্তন হওয়া বীজ থেকে আসা। এ মাসে চীনের শেং চৌ-১৩ মহাকাশযানের তিনজন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরেছেন, তাদের সঙ্গে ফিরে এসেছে ১২ হাজার বীজ।  মহাকাশে থেকে সে বীজগুলোর রং, ফসলের আকার, স্বাদ এবং উত্পাদনের পরিমাণসহ নানান পরিবর্তন ঘটেছে। হাই নান প্রদেশের মহাকাশ প্রকল্পের বীজ গবষণা কেন্দ্র গত দশ বছর ধরে ‘মহাকাশ  কলা’ লালন করে আসছে। এ মহাকাশ কলার উত্পাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে এবং ফসল উত্পাদনের সময় ১৩ মাস থেকে কমে ৯ মাসে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, ভিটামিন সির পরিমাণ বেড়েছে এমন মরিচের উত্পাদন ১.৮ গুণ এবং টমেটোর পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। মহাকাশে থাকা টেলি-যোগাযোগ উপগ্রহ চীনের গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের ১৪ কোটি পরিবারের জন্য টেলিভিশন সংকেত প্রদান করছে। অনলাইন শিক্ষা, চিকিত্সা এবং গ্রামীণ ই-কমার্সের সেবা প্রদান করছে।  পেই তৌ নেভিগেশন ব্যবস্থা লজিস্টিক, ও যানবাহনের জন্য সঠিক দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। বর্তমানে চীনের ৫০০টিরও বেশি উপগ্রহ কক্ষপথে কাজ করছে।

 

চীনের মহাকাশ অনুসন্ধ্যান কাজ কতদূরে এগিয়ে যাবে? চলতি বছর চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশ প্রকল্পের ৬টি উত্ক্ষেপণ পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেং থিয়ান ও ওয়েন থিয়ান পরীক্ষাগার ক্যাবিন উত্ক্ষেপণ, দুটি মনুষ্যবাহী মহাকাশযান এবং দুটি মালবাহী মহাকাশযান উত্ক্ষেপণ। এসবের ফলে চীনের স্পেস স্টেশন সার্বিকভাবে নির্মিত হবে। এটি নির্মিত হলে মনুষ্যবাহী মহাকাশের পরবর্তী উন্নয়নের পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপিত হবে।

 

বর্তমানে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র চীন এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চালানোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ কেন্দ্র চীনের দক্ষিণ ও উত্তর মেরুর কেন্দ্রের মতো বিশ্বের প্রযুক্তিবিদদের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রদান করবে।

(রুবি/এনাম/শিশির)