এপ্রিল ২৪: ২০১৯ সালের মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ইতালি সফরের আগে সেদেশের (Convitto Nazionale di Roma) কোনভিত্তো নাজিওনালে দি রোমার উপাচার্য (Paolo Maria Reale) পাউলো মারিয়া রিয়েলে এবং ৮জন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্ট সিকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট সি’র ইতালি সফরের জন্য উদগ্রীব প্রত্যাশা প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে শিক্ষার্থীরা তাদের চীনা ভাষায় পড়াশুনার অনুভূতি ব্যাখ্যা করেন এবং ইতালি ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তিন বছরে প্রেসিডেন্ট সি’র জবাবি চিঠির অনুপ্রেরণায় এই স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা চীনা ভাষা শেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ইতালি ও চীনের বিনিময় ও সহযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
কোনভিত্তো নাজিওনালে দি রোমার শিক্ষাভবনে তিন বছর আগে প্রেসিডেন্ট সি’কে দেওয়া চিঠি এবং প্রেসিডেন্ট সি’র জবাবি চিঠিটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই বছর প্রেসিডেন্ট সি’র জবাবি চিঠি পাওয়ার কথা স্মরণ করে উপাচার্য পাউলো মারিয়া রিয়েলে খুব উত্তেজনা বোধ করেন। তিনি বলেন,
‘জবাবি চিঠি পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। চিঠি পাওয়ার সময় সবাই ছিল বেশ সন্তুষ্ট। আমাদের মনে হচ্ছিল- আমাদের প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের স্বীকৃতি দিয়েছে প্রেসিডেন্ট সি’র জবাবি চিঠি।’
চিঠিতে ৮জন ইতালিয়ান শিক্ষার্থী তাদের চীনা ভাষা ও চীনা সংস্কৃতি শেখার অনুভূতি তুলে ধরেছিল। জবাবি চিঠিতে প্রেসিডেন্ট সি তাদেরকে ‘নতুন যুগের মার্কো পোলো’ হয়ে চীন ও ইতালির সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দূত হিসেবে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
বর্তমানে পোলিতেকনিকো দি মিলানোর (Politecnico di Milano ) স্থাপত্য নকশার বিষয়ে লেখাপড়া করা জিওভান্নি স্তোপ্পোলোনি (Giovanni Stoppoloni) হচ্ছেন ৮জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন। তিনি সাংবাদিককে বলেন, চিঠি দেওয়া ছাড়াও, তিনি নিজের রচিত একটি চীনা ভাষার কবিতা প্রেসিডেন্ট সি-কে পাঠিয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে খুব গর্বিত ছিলেন তিনি। তিনি বলেন,
‘সেই বছর আমাদের চিঠি লেখার কারণ ছিলো আমরা চীনা ভাষা শিক্ষা করা একদল ইতালিয়ান শিক্ষার্থী। চীনা ভাষা শেখার মাধ্যমে আরো ভালোভাবে চীনকে জানা এবং আমাদের দু’দেশকে আরও কাছাকাছি করা চিঠি লেখার উদ্দেশ্য। অপ্রত্যাশিত ব্যাপার হলো, চীনা প্রেসিডেন্ট সত্যিই আমাদের জবাব দিয়েছেন। এতে আমরা সবাই গর্বিত।’
কোনভিত্তো নাজিওনালে দি রোমা হলো ইতালির বিখ্যাত ও বিরাট জাতীয় বিজ্ঞান বোর্ডিং স্কুল। ২০০৯ সালে এটি ছিল ইতালির প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়; যারা চীনা ভাষাকে বাধ্যতামূলক পাঠ্যক্রম হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এটি ইতালির অল্প কয়েকটি স্কুলের মধ্যে একটি, যা সিনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষার বিষয় হিসাবে চীনা ভাষাকে তালিকাভুক্ত করেছে। ২০১০ সালে এই স্কুল রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট যৌথভাবে একটি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করে; যা ইতালিতে অনেক শিক্ষার্থীর কনফুসিয়াস ক্লাসরুমে পরিণত হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে চীনা ও চীনা সংস্কৃতির কোর্স অধ্যয়ন করেছে।
উপাচার্য রিয়েলে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি’র জবাবি চিঠির অনুপ্রেরণায় তারা স্কুলের নানা কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘আমি আমাদের অর্জিত ফলাফলে অনেক সন্তুষ্ট। চীনা ভাষার কোর্স হলো আমাদের স্কুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় কোর্সের মধ্যে একটি। একে সবচে গুরুত্বপূর্ণ কোর্সও বলা যায়। আমাদের স্কুল বরাবরই চীনা ভাষা শিক্ষাদানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ইতালির অন্যান্য শহরের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা চীনা সংস্কৃতি ও ভাষা শিখতে এখানে আসে। ইতোমধ্যে অর্জিত সাফল্য নিয়ে আমি সন্তুষ্ট, তবে এখানেই আমরা থামবো না।’
আর কয়েক মাস পর স্তোপ্পোলোনি পোলিতেকনিকো দি মিলানো থেকে স্নাতক পাস করবেন। ১৪ বছর বয়সে চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন তিনি। ভাষাগত সুবিধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সহপাঠীদের চেয়ে বেশি ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তিনি অনেক চীনা স্থপতি প্রকল্পের শিল্পকর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। চীনের সঙ্গে তার স্বপ্ন আরো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ভবিষ্যতে চীনে কাজ করা এবং নিজের সুপরিচিত ক্ষেত্রে দু’দেশের বিনিময় করা হলো তার পরিশ্রমের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন,
‘আমার লক্ষ্য এখন চীনে গিয়ে চীনা নির্মাণশিল্পে কাজ করা। আমি স্থাপত্য নকশা এবং নগরায়নের ক্ষেত্রে ইতালি ও চীনের বিনিময় এগিয়ে নিতে খুব আগ্রহী। আমার ধারণা, আমি ভবিষ্যতে চীনে গিয়ে কাজ করবো এবং সেখানে বাস করবো। আমি সেখানকার পরিবেশ ও জীবন ভালোবাসি। সেখানে কাজ করা উত্তেজনাপূর্ণ, মজাদার ও উদ্ভাবনীমূলক হতে পারে বলে আমি মনে করি।’
লিলি/তৌহিদ/শুয়ে