এপ্রিল ২৩: ব্রিটেনের লন্ডন স্থানীয় আদালত সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘উইকিলিকস’ ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এদিন অ্যাসাঞ্জের কিছু সমর্থক আদালতের বাইরে একটি সমাবেশ করে। সমাবেশে এ সিদ্ধান্তটিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে নিন্দা করা হয়। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠালে তার ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। উইকিলিকসের এডিটর-ইন-চিফ ক্রিস্টিন হাফসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এই পদক্ষেপ ‘অ্যাসাঞ্জকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সমতুল্য’।
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরেও কেন মার্কিন সরকার অ্যাসাঞ্জের পিছু ছাড়েনি? কারণ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছিলেন। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মান-সম্মান মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অ্যাসাঞ্জের অভিজ্ঞতা লোকদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্বাধীনতা’ বলে কিছু নেই। এটি শুধুমাত্র একটি আবরণ এবং হাতিয়ার যা আমেরিকান রাজনীতিবিদরা অন্যান্য দেশকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।
অ্যাসাঞ্জ ঠিক কী করেছিলেন? ২০১০ সালে, তার প্রতিষ্ঠিত ‘উইকিলিকস’ ওয়েবসাইটটি আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন সরকারের গোপন নথির একটি বড় অংশ প্রকাশ করে, যার মধ্যে বেসামরিক লোকদের উপর বোমা হামলা এবং নির্যাতন চালানোর বিষয় আছে। তারপর থেকে, অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারের একটি সিরিজ কেলেঙ্কারি প্রকাশ করেন, যা মার্কিন সরকারের ‘চোখের কাঁটা’ হয়ে ওঠে। এর পরই মার্কিন সরকার তাকে ১৮টি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে। ২০১২ সালের জুনে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে, অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডরের দূতাবাস ব্রিটিশ পক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীকালে, যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রত্যর্পণের আবেদন জারি করে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি তুলসি গ্যাবার্ড অকপটে স্বীকার করেছেন যে, উইকিলিকসের প্রকাশিত নথিগুলি আমেরিকান জনগণকে বলেছে যে তাদের কী জানা উচিত এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যপ্রাচ্যে কী করা উচিত ছিল না।
অ্যাসাঞ্জ কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর যুদ্ধাপরাধ প্রকাশ করে মার্কিন সরকারের শত্রু হয়ে উঠেছে। তার ভাগ্য একটি আয়নার মতো যাতে তথাকথিত ‘আমেরিকান স্বাধীনতা’-র ভণ্ডামির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)