ওয়াশিংটনকে জিরো-সাম খেলা বাদ দিতে হবে: মার্কিন কর্মকর্তা
2022-04-22 16:38:05

যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অন্য দেশকে প্রতিরোধ করে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তা থেকে বোঝা যায়, এটি আধিপত্যের মাধ্যমে সংঘর্ষ সৃষ্টি করা এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা নষ্ট করার কৌশল।

 

২০০৩ সালে চলচ্চিত্র ‘হ্যারি পর্টার’-এর ডিরেক্টর মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে এই চলচ্চিত্রের চরিত্র লর্ড ভলডেমর্ট হিসেবে বর্ণনা করেন। আসলে লোকজন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘর্ষের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালো জাদুর’ মতো রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে পারছে। ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাশিয়ার নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করা, এরপর ইউক্রেনকে ন্যাটোয় যোগ দিতে উত্সাহ দেওয়া ইউক্রেনের সমস্যা বাড়িয়েছে। ফলে এখন দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র এবারের সংঘর্ষের মাধ্যমে মিত্র দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সার্বিক শাস্তি আরোপ করে।

 

আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের যৌথ ‘প্রচেষ্টার’ ফলে, রাশিয়া ও ইউক্রেন দুর্যোগে পড়েছে, অন্যদিকে ইইউ’র কৌশলগত স্বাধীনতার আশা ব্যর্থ হয়েছে, তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই লাভবান হচ্ছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ বছরের ইতিহাসে, মাত্র ২০ বছর ছাড়া বাকি সময় যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক শাস্তি গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ক্ষতি করেছে এবং বিশ্বের আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর জেরি ব্রাউন সম্প্রতি নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকস-এ ‘ওয়াশিংটনের পাগলামির বাস্তবতা’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

প্রবন্ধে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘জিরো সাম’ অনুমানের উপর ভিত্তি করে বর্তমান চিন্তাভাবনা এই বাস্তবতা উপেক্ষা করেছে; যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের টিকে থাকা এবং উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা এবং সহাবস্থান করা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রকে চীনা এবং আমেরিকান ব্যবস্থার পার্থক্য মেনে নিতে হবে এবং ‘পাগলামির বাস্তবতা’ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনবে।

 

প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী মন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন ‘বড় রাষ্ট্রের সংঘর্ষ’ ছড়িয়ে দিয়েছে এবং চীনকে এশিয়া ও বিশ্বে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠা ঠেকানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আরেকটি যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা।

 

ব্রাউন মনে করেন, অনেক ‘রাজনৈতিক বাস্তববাদী’ উভয় দেশের উন্নতি এবং এমনকি স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করেন। প্রতিযোগিতা অনিবার্য হলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অভিন্ন স্বার্থ ভাগ করে নেয় এবং একটি একক দেশ কার্বন নির্গমন, পারমাণবিক অস্ত্র, ভাইরাস ও প্রযুক্তির সৃষ্ট বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারবে না। চীনের একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি রয়েছে। চীন প্রতিবেশীদের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বাকি বিশ্বের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রাখে। পৃথিবী কখনোই গভীরভাবে পারস্পরিক নির্ভরশীল ছিল না। যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা আলাদা। তবে দুটি দেশকে নতুন শীতল যুদ্ধ শুরু করার পরিবর্তে সহাবস্থান করা বা সহযোগিতা করা শিখতে হবে। ব্রাউন বলেন, ‘যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র উপায় হল চীনের ব্যবস্থা আমাদের থেকে আলাদা- তা মেনে নেওয়া, আমাদের দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সমস্যার একটি শালীন সমাধান খোঁজা।’