চলতি বছরের অনলাইনে বোয়াও ফোরামের বার্ষিক অধিবেশনে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুনরায় চীনা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
2022-04-22 16:33:02

গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের হাইনান প্রদেশের বোয়াও শহরে চলতি বছরের বোয়াও এশিয়া ফোরাম উদ্বোধন হয়েছে। তাতে অনলাইনে ভাষণ দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

 

সিপিসির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর এবার সি চিন পিং পঞ্চমবারের মতো বোয়াও এশিয়া ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিলেন।

 

 বর্তমানে সারা বিশ্ব শত বছরের অদেখা পরিবর্তন ও মহামারির কারণে মানব জাতি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের দৃঢ় আস্থা যুগিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

 

 ভাষণে সি চিন পিং বলেন, মানব জাতি শত বছরের অদেখা মহামারির কুয়াশা থেকে বেরিয়ে আসেনি, আবার নতুন নিরাত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এখনও দুর্বল। আবার রয়েছে উন্নয়নের ব্যবধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা চ্যালেঞ্জ। সে সব চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্বের কি করা উচিত? সি চিন পিং বলেন, “মানবজাতির ইতিহাস আমাদের জানায়, সময়টা যত কঠিন হয়, প্রত্যয় তত দৃঢ় হয়। সব দ্বন্দ্ব ভয়ংকর নয়, সঠিক দ্বন্দ্ব মানব সমাজের অগ্রগতিকে উদ্বুদ্ধ করে”।

 

গত দু’বছরে আন্তর্জাতিক সমাজ মহামারি প্রতিরোধে এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ভাষণে সি চিন পিং বিভিন্ন দেশের প্রতি শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও অভিন্ন অর্জনের প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানব জাতির অভিন্ন যৌথ কমিউনিটি গঠনের সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি সকলকে হাতে হাত রেখে সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টির জন্য সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

 প্রেসিডেন্ট সি বলেন,  আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমাজ একটি অত্যাধুনিক এবং জৈবিক ঐক্যের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। যে কোন একটি খুচরা যন্ত্রাংশ ছাড়া যেমন পুরো যন্ত্রটি চলতে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়, তেমনি যারা বিচ্ছিন্ন হবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত  হবে। বিশ্বের নানা দেশ অভিন্ন ভাগ্যের একটি জাহাজে বসে আছে। ঝড়ো সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে সবাইকে একসাথে প্রচেষ্টা করতে হবে। কাউকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করার আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। দেশ সুশৃঙ্খল হলে ধনী হবে, বিশৃঙ্খল হলে দরিদ্র হবে। নিরাপত্তা হচ্ছে উন্নয়নের শর্ত, আর মানবজাতি হচ্ছে অবিচ্ছেদ্য অভিন্ন লক্ষ্যের নিরাপত্তা কমিউনিটি।

 

তিনি বলেন, বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করে, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা কেবল বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামো বিনষ্ট করে এবং আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতি কেবল বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। আর উপদলীয় কোন্দল কেবল একবিংশ শতাব্দির নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে গুরুতর করে তুলবে।  জিরোসাম খেলার পরিবর্তে সংলাপ ও সহযোগিতা, রুদ্ধদ্বার নীতি ও একতরফাবাদের পরিবর্তে উন্মুক্ততা ও সহনশীলতা, এবং আধিপত্যের পরিবর্তে আদান-প্রদান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এশিয়ানদের মানসিকতা হওয়া উচিত। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আকাশ থেকে পড়ে না, কোনো দেশের দানও নয়; বরং আঞ্চলিক দেশসমুহের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে এটি অর্জিত হয়।

 

তিনি বলেন, “আজ এশিয়ার প্রথম উত্থাপিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ও বন্ধনের চেতনার আরও বাস্তবায়নশীল তাত্পর্য রয়েছে। আমাদের উচিত পরস্পরকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমতাসম্পন্ন কল্যাণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে সুপ্রতিবেশি সুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিতে নিজের ভাগ্য নিজের হাতে গড়া”।

 

তিনি বলেন, কুয়াশা থেকে আলোর দিকে যাওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি হচ্ছে সহযোগিতা এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে এক সাথে কাজ করা। মানবজাতির সংহতি হচ্ছে অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি। বিভিন্ন দেশের উচিত শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও উভয়ের জন্য কল্যাণকর যুগের ধারার সঙ্গে হাতে হাত রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার সাথে ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করা। দেশ বড় কিম্বা ছোট--যা-ই হোক না কেন, সকল দেশেরই উচিত এশিয়ায় বিশৃঙ্খলার পরিবর্তে গৌরব সৃষ্টি করা এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া, যাতে ঐক্যবদ্ধ ও অগ্রসর এশিয়ান পরিবার গঠন করা যায়।

 

চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হান চেং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

‘মহামারী ও বিশ্ব: বৈশ্বিক উন্নয়নে অভিন্ন ভবিষ্যত গড়ে তোলা’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এবারের বোয়াও ফোরাম ২০ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইন ও সরাসরি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ, এবং মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খুরেলসুখ উখনাসহ কয়েকটি দেশের নেতৃবৃন্দ অনলাইনে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।