বোয়াও এশিয়া ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ
2022-04-22 17:22:41

বৃহস্পতিবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ হাইনানে এশিয়ার ২৫টি দেশ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্হিতিতে বার্ষিক বোয়াও এশিয়া ফোরাম শুরু হয়। ফোরামটি অনলাইন ও অফলাইন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারে ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মহামারী ও বিশ্ব: বৈশ্বিক উন্নয়নে অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা’। ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ, এবং মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খুরেলসুখ উখনাসহ কয়েকটি দেশের নেতৃবৃন্দ অনলাইনে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন।

ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলো।

 

অনলাইন ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, এশিয়ার জনগণ অনেক যুদ্ধের কষ্ট সহ্য করেছে। তাই শান্তি ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয়। গত কয়েক দশক ধরে এশিয়া মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে এশিয়াতে।

তিনি বলেছেন আমরা অব্যাহতভাবে এশিয়ার উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেবো যাতে এশিয়াকে বিশ্বের শান্তি, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও সহযোগিতার সেরা জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।”

ভাষণে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের নানা দেশ অভিন্ন ভাগ্যের একটি জাহাজের অভিযাত্রী। ঝড়ো হাওয়ার উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হলে সবাইকে একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। কাউকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলার আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

 

ভাষণে তিনি বলেন, বিশ্বের অভিন্ন নিরাপত্তার জন্য চীন কিছু প্রস্তাব দিতে চায়। সবাইকে যৌথ, সার্বিক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তা বোধে অবিচল থেকে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা, নানা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি সম্মান করা এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করার নীতি মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, সব দেশকেই নানা দেশের জনগণের বাছাইকৃত উন্নয়ন পথ ও সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান করা, উপদলীয় রাজনীতি ও লড়াই না করা, নিরাপত্তা নিয়ে নানা দেশের যৌক্তিক উদ্বেগকে গুরুত্ব দেওয়া, সুষম, কার্যকর ও টেকসই নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা এবং নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে অন্য দেশের নিরাপত্তাহীনতা কারণ সৃষ্টির বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি, সংলাপ ও শান্তি আলোচনার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে মতভেদ দূর করা এবং একতরফাভাবে অবরোধের বিরোধিতা করেন। ঐতিহ্যিক ও আধুনিক সব খাতে নিরাপত্তা সমন্বয় রক্ষা করা, আঞ্চলিক সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ইন্টারনেট নিরাপত্তা ও জৈব নিরাপত্তাসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ যৌথভাবে মোকাবিলা করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

সি চিন পিং বলেন, দেশে আইন থাকলে ধনী হবে, বিশৃঙ্খল হলে দরিদ্র হয়ে পড়বে। নিরাপত্তা হলো উন্নয়নের অন্যতম শর্ত, আর মানবজাতি হচ্ছে পরস্পর সংযুক্ত অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি।

তিনি বলেন, বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করেছে যে, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামো নষ্ট করে এবং আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতি বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। আর উপদলীয় কোন্দল একবিংশ শতাব্দীর নিরাপত্তার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।

ভাষণে সি চিন পিং বলেন, জিরোসাম খেলার পরিবর্তে  সংলাপ ও সহযোগিতা, রুদ্ধদ্বার নীতি ও একতরফাবাদের পরিবর্তে উন্মুক্তকরণ ও সহনশীলতা এবং আধিপত্যবাদের পরিবর্তে বিনিময় ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করা উচিত। দেশের আয়তন যাই হোক না কেন, সব দেশেরই উচিত এশিয়ায় বিশৃঙ্খলা না করা এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া।

 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “মানব ইতিহাস আমাদের জানায়, সময় যত কঠিন হবে, প্রত্যয় তত দৃঢ় হতে হয়। সব দ্বন্দ্ব ভয়ংকর নয়, সঠিক দ্বন্দ্ব মানব সমাজের অগ্রগতিকে উদ্বুদ্ধ করে”। কোনো জটিলতাই ইতিহাসের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে পারে না।

তিনি বলেন, আঁধার কাটিয়ে আলোর দিকে যাওয়ার শক্তি হলো সহযোগিতা এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে একসঙ্গে কাজ করা।

তিনি বলেন, মানবজাতির সংহতি হচ্ছে অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি। বিভিন্ন দেশের উচিত শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও উভয়ের জন্য কল্যাণকর যুগের ধারার সঙ্গে হাতে হাত রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার সাথে ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করা।

উল্লেখ্য, বোয়াও ফোরামকে ‘প্রাচ্যের দাভোস’ বলে অবহিত করা হয়। একে প্রকৃত বাস্তবতা বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। বিশ্বের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের ভিন্নমত পরিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে বোয়াও এশিয়া ফোরাম।