এপ্রিল ২০: যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস গত সোমবার বলেছে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর-বিষয়ক সমন্বয়কারী কুট ক্যামবেল চলতি সপ্তাহে সলোমান দ্বীপপুঞ্জসহ তিনটি দ্বীপ দেশ সফর করবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, চীনের বিষয়টি সফরে প্রাধান্য পাবে। এবারের সফরের লক্ষ্য হলো চীন ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের এক সম্পাদকীয়তে এসব বলা হয়।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চীন সলোমান দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে সরকারী পর্যায়ের নিরাপত্তা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দু’দেশ সমতাসম্পন্ন কল্যাণের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা, মানবিক ত্রাণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সলোমান তার নিজের নিরাপত্তা দক্ষতা উন্নয়ন করবে, যাতে স্থানীয় সামাজিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এ সহযোগিতা কাঠামো আন্তর্জাতিক আইন ও রীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং তৃতীয় কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে নয়।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া এ নিয়ে তত্পর হয়ে উঠেছে। তারা এ চুক্তিকে হুমকি হিসেবে বর্ণনা করছে এবং এর ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। অস্ট্রেলিয়া বহুবার তাদের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সলোমান দ্বীপপুঞ্জে পাঠায় এবং আর্থিক প্রলোভন দেখায়। যুক্তরাষ্ট্রও সলোমান দ্বীপপুঞ্জে উধ্বর্তন কর্মকর্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, চীন ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা ব্যাহত করা এবং চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করা।
সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কারো বাগান নয় এবং এটি ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের দাবার গুটিও নয়। দেশগুলোর আছে সহযোগিতার চাহিদা এবং সহযোগিতামূলক অংশীদার বাছাইয়ের অধিকার। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বর্ধিত পরিবারের পিতামাতা’র মানসিতকা নিয়ে যা-তা বলে থাকে। তাতে তাদের আধ্যিপত্যবাদী ও ঔপনিবেশিক মানসিকতা ফুটে ওঠেছে।
অস্ট্রেলিয়ার দ্য গ্রিন পার্টির জর্দান স্টিল জন বলেন, এমন কর্মকান্ড মূলত বর্ণবাদী আচরণ। সলোমান দ্বীপপুঞ্জের প্রধানমন্ত্রী মানাসেহ সোগাভার বলেছেন, ‘চীন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় হুমকি’র তত্ত্বটি একেবারে মিথ্যাচার এবং ভুয়া।
সলোমান দ্বীপপুঞ্জ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। তার আছে সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব করার অধিকার। আর তাই চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। যার কারণ হচ্ছে সত্যিকারের সহযোগিতা করছে চীন। গত অক্টোবর মাসে সলোমান দ্বীপপুঞ্জে দাঙ্গা হওয়ার পর চীন বেশ কয়েক চালান পুলিশী সামগ্রী প্রদান করেছে এবং স্থানীয় পুলিশের দক্ষতা উন্নত করতে পুলিশ উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। বাস্তবতা থেকে জানা গেছে, সে সব ব্যবস্থা দেশটির সরকার ও জনগণে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের নির্ভরশীল বন্ধু।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন দীর্ঘকাল ধরে সলোমান দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্বের সংকট ও দাঙ্গার ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে। সলোমান দ্বীপপুঞ্জে মার্কিন দূতাবাস এক সময় ২৯ বছর ধরে বন্ধ ছিল। চীন ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠার পর ওয়াশিংটন এ দ্বীপপুঞ্জের দিকে নজর দেয়া শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সলোমান দ্বীপপুঞ্জে তাদের দূতাবাস পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সম্প্রতি উধ্বর্তন কর্মকর্তা দ্বীপটি সফরের সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্র আসলে দ্বীপপুঞ্জের কল্যাণ চায়, না তাদের অন্য কোনো লক্ষ্য আছে? সবার চোখে তা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এককথায়, যুক্তরাষ্ট্র কখনও সলোমানের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি দেয়নি। দেশটিকে চীনের বিরুদ্ধে স্তম্ভ ও দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বাস্তবতা প্রমাণ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হুমকি। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি তৃপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের সম্পর্কের কাঠামোতে সুপার সনিক অস্ত্র উন্নয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোও সম্প্রতি নতুন কৌশল ও নকশা অনুমোদন করেছে, সে কৌশলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সে সব কর্মকান্ডে প্রতিফলিত হয়েছে যে, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে যুক্তরাষ্ট্র।
(রুবি/এনাম/শিশির)