বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের জিডিপি ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে
2022-04-19 18:21:14


সবাইকে শুভেচ্ছা। ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের জিডিপি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা ২০২১ সালে জার্মানির সারা বছরের জিডিপির (৪.২১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এর চেয়েও বেশি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশিও ছিল বটে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং মহামারীর মতো নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা একটি ভালো সূচনা।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের প্রথম শিল্পের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি তথা ৬ শতাংশে পৌঁছায়। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৫.৮ ও ৪ শতাংশ। এর মধ্যে দ্বিতীয় শিল্পের উন্নয়ন জিডিপির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম প্রান্তিকে বড় আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আউটপুট ৬.৫ শতাংশ বেড়েছে।

বছরের প্রথম তিন মাসে হাই-টেক উত্পাদন শিল্পে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশের মতো, যা অন্যান্য বিভাগের তুলনায় উল্লেখ করার মতো বেশি। একই সময়ে বিদ্যুতচালিত গাড়ি ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে বিদ্যুতচালিত গাড়ির বাজার খুব ভাল পারফর্ম করেছে। এদের মধ্যে বিওয়াইডি’র মাসিক বিক্রি গড়ে এক লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে, তেলচালিত গাড়ির চেয়ে বেশি। অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছর বিদ্যুতচালিত গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রি আরও বাড়তে পারে।

চীনের রিয়েল এস্টেট খাতের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। বছরের প্রথম প্রান্তিকে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ মাত্র ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাই-এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং এবং হাই-টেক পরিষেবা শিল্পে বিনিয়োগ যথাক্রমে ৩২ ও ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে রিয়েল এস্টেট নয়, হাই-টেক শিল্প ও উচ্চ প্রযুক্তি উত্পাদন প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি তিনটি: বিনিয়োগ, রফতানি ও ভোগ। প্রথম প্রান্তিকে চীনে স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রধানত উত্পাদন ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে হয়েছে, রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য নয়। এদিকে, প্রথম প্রান্তিকে আমদানি ও রফতানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; রফতানি বৃদ্ধির হার ছিলো ১৩ শতাংশ। এসময় ভোগ ও খুচরা বিক্রয় ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, মার্চ মাসে ভোগ কমেছে।

এ পর্যন্ত এসে একটু তুলনামূলক আলোচনা করা যাক। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতো? ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপি ছিলো ২৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে প্রথম প্রান্তিকের মোট জিডিপি ছিল ৫.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আসলে প্রত্যেক প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের উপরে। তাই চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও তাই।

একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার বিবেচনা করলে, নামমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেশি হতে পারে, যখন মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি কম হবে। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সিপিআই ৭.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর মার্চ মাসে ৮.৫ শতাংশ, ফলে মুদ্রাস্ফীতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে, জিডিপিও গত বছরের তুলনায় বেশি, ৫.৫ থেকে ৫.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকতে পারে।

বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জিডিপি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে পরিষেবা, ফাইনান্স ও রিয়েল এস্টেট ইত্যাদি তৃতীয় শিল্পের অবদান ৮০ শতাংশ। অথচ চীনে দ্বিতীয় শিল্প এখনও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। এ শিল্প জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৪০ শতাংশ অবদান রাখছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, চীনের জিডিপি’র প্রকৃতি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে তফাত কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির হার এখনো বাড়ছে এবং আর্থিক সংকট অনিবার্য হয়ে দেখা দিতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ ঘোষণা করেছে যে, চলতি বছরে সুদের হার বৃদ্ধি করবে। ব্যাংক অফ আমেরিকা জানিয়েছে, সুদের হার বাড়ানো এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে মার্কিন অর্থনীতি মন্দার মধ্যে পড়তে পারে।  (স্বর্ণা/আলিম/হাইমান)