মহাকাশ থেকে সুষ্ঠুভাবে ফিরেছেন চীনের নভোচারীরা
2022-04-16 17:17:26

আজ (শনিবার) চীনের মহাকাশ স্টেশন থেকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন চীনা নভোচারীগণ। এই যাত্রায় টানা ছয় মাস মহাকাশে গবেষণাকাজ করেছেন তিন বিজ্ঞানী। শনিবার সকালে চীনের শেনচৌ ১৩ নং নভোযানের ‘রি-এন্ট্রি মডিউলটি’ চীনের তুংফেং কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে অবতরণ করে। চলতি বছর চীনের মহাকাশ গবেষণাকাজ ৬৬ বছরে পা দিলো। এই মুহূর্তে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় লিপ্ত রয়েছে চীন এবং বিভিন্ন দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তাদের অগ্রগতি, কাজের লক্ষ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনে মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণার প্রভাবের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হবে।

 

সাধারণ হিসাবে মহাকাশ ধরা হয় ৮১ কিলোমিটার উপর থেকে। চীনের মহাকাশ স্টেশন থিয়ানহ্য রয়েছে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসও রয়েছে আড়াইশো মাইল উপরে। আর চাঁদ কিন্তু আমাদের থেকে তিন লাখ ২২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। চীনের ছাংএ্য ৫ চাঁদ অনুসন্ধান মিশন চাঁদ থেকে চাঁদের মাটি সংগ্রহ করে এনেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিজেদের পতাকা স্থাপন করতে সক্ষম হয়। চীনের পতাকাটি দুই মিটার চওড়া এবং ৯০ সেন্টিমিটার লম্বা। মহাকাশ জয়ের গল্পে অন্য কিছু দেশের তুলনায় চীন নতুন হলেও কক্ষপথে প্রথম নভোচারী পাঠানোর মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই চীন বিস্ময় তৈরি করেছে। সম্প্রতি চাঁদের দূরতম অংশে সফলভাবে ল্যান্ড করে চীনের একটি স্পেসক্রাফট। এর আগে, ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১ অভিযানের সময় ওয়াশিংটন প্রথমবার চাঁদে পতাকা স্থাপন করে। এরপর মঙ্গলগ্রহ অনুসন্ধানে যায় চীনের ‘থিয়ানওয়েন ১নং’ মহাকাশযান। এখন মহাকাশে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশ স্টেশন সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে।

 

২০২০ সালে চীনের প্রথম মঙ্গলগ্রহ অনুসন্ধানকারী থিয়ানওয়েন ১নং সফলভাবে নিক্ষেপ করা হয়। ৭ মাসে ৪৭.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ ভ্রমণের পর থিয়ানওয়েন ১নং ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নাসার পর চীন মঙ্গল অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়। চীনের এই দ্রুত অগ্রযাত্রা বিজ্ঞান গবেষণায় আশার আলো জ্বালিয়েছে।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর চীনের নভোচারী চাই জি কাং, ওয়াং ইয়া পিং এবং ইয়ে কুয়াং ফু চীনের শেনচৌ ১৩নং মানববাহী মহাকাশযানের মাধ্যমে চীনের মহাকাশ স্টেশন থিয়ানহ্যতে পৌঁছান। ছয় মাস ‘মহাকাশ যাত্রায়’ তিনজন নভোচারী স্পেস ওয়াক করেছেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীর শিশুদের ‘থিয়ানকোং ক্লাস’ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

 

মহাকাশের এমন ঝুঁকিপূর্ণ গবেষণার কারণ কী? অনেকেই তা ভাবেন। মহাকাশে গবেষণা করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর নানা কারণ থাকতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যে লক্ষ্যে কাজ করছে, চীনেরও তেমনই লক্ষ্য বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন- দেশের ক্ষমতা ও সামর্থ্য প্রকাশের জন্য এটি একটি দারুণ উপায় এটি। মানবজাতির জন্য জ্ঞানই মূল শক্তি; এই গবেষণার প্রতিযোগিতা- সে কথাই আমাদের জানায়। নতুন অমূল্য বস্তু, এনার্জি বা জ্বালানির সন্ধান করা এসব দেশের লক্ষ্য। ভবিষ্যতের মানুষের জন্য যত এনার্জি বা জ্বালানির প্রয়োজন হবে সেটিরো হয়তো সন্ধান মিলতে পারে মহাকাশে। সৃষ্টিজগতের কারণ অনুসন্ধান করাও গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য বলে মনে করা হয়।

যে কোনো ধরণের অগ্রগতি বৃহদার্থে পৃথিবীবাসীর জন্যই কল্যাণকর। মহাকাশ গবেষণায় চীন অগ্রগতি দেখিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে মিলে-মিশে কাজের আগ্রহ-ও প্রকাশ করেছে।

 

বেসরকারী খাতেও মহাকাশ গবেষণার প্রভাব পড়েছে। কারণ মহাকাশ জয় করার স্বপ্ন মানুষ বহু দিন ধরেই দেখছে। অনেক নভোচারী ইতোমধ্যে পৃথিবীর বাইরে থেকে ঘুরে এসেছেন। সাতজন ধনী ব্যক্তি ঘুরে এসেছেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে। এখন পর্যন্ত মোট ৫৮০জন মহাকাশে গেছেন বলে জানা যায়।

পাশাপাশি, বিশ্বের বিত্তশালী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে মহাকাশে পর্যটন ব্যবসা শুরু করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন সম্প্রতি তার কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিকের ইউনিটি রকেটে চড়ে মহাকাশের দ্বারপ্রান্ত থেকে ঘুরে এসেছেন। অনলাইন সুপারমার্কেট অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসও প্রতিষ্ঠা করেছেন স্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিন। মার্কিন বাঙ্গালি মহাকাশ বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ বলেন, মহাকাশের পর্যটনের এই খরচ নামিয়ে আনা সম্ভব। "মোটামুটি ১০ বছর পর ৫০ হাজার ডলারে মানুষ হয়তো চাঁদে যেতে পারবে। এই পরিমাণ অর্থ খরচ করার মতো মানুষ এই পৃথিবীতে অনেকেরই আছে বলে মনে করেন তিনি।