সি চিন পিংয়ের হাই নান সফর ও হাই নান নিয়ে তার আবেগ
2022-04-15 21:10:02

গত ১০ এপ্রিল বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হাই নান প্রদেশের সান ইয়া শহরের  ইয়া চৌ ওয়ান বীজ পরীক্ষাগার ও চীনা ওশান ইউনিভার্সিটির সান ইয়া সমুদ্র গবেষণালয় পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বীজ শিল্প নবায়ন ও সমুদ্র প্রযুক্তি উন্নয়নের খোঁজখবর নেন।

 

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সমুদ্রের শক্তিশালি দেশ নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন। সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করে হাই নানকে সমুদ্রের শাক্তিশালি প্রদেশে পরিণত করার নির্দেশনা দেন তিনি।

 

গত ১১ এপ্রিল প্রেসিডেন্টস সি চিন পিং হাই নান প্রদেশের উ চি শান শহর পরিদর্শন করেন। তখন তিনি হাইনান রেইনফরেস্ট জাতীয় পার্কের উ চি শান এলাকা ও সুই মান উপজেলার মাও না গ্রাম ঘুরে দেখেন।

 

সেখানে তিনি হাই নানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ, এবং দারিদ্র্যবিমোচনের অর্জনকে একীভূত করে গ্রামীণ পুরুদ্ধারসহ নানা বিষয়ের খোঁজ খবর নেন।

 

  হাই নান প্রদেশের উ চি শান পবর্তের পাদদেশের মাও না গ্রাম পরিদর্শনকালে সি চিন পিং লি জাতির গ্রাসবাসীদের পরিবারে গিয়ে তাদের খোঁজখরব নেন। সি চিন পিং বলেন, “আমরা সার্বিক স্বচ্ছল সমাজ গঠন করেছি এবং আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি”। তিনি বলেন, গ্রামীণ পুনরুত্থানের কাজ ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত। এ কাজ করতে গেলে প্রথমে দারিদ্র্যমুক্তির সাফল্যকে রক্ষা করতে হবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নিখিল চীনের নানা জাতির লোকজনের সুন্দর জীবন অর্জনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করে। সিপিসির নিজস্ব স্বার্থ নেই। জনসাধারণের সুখী জীবন তৈরি করতে যথাযথ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সিপিসি।

 

গত ১২ এপ্রিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হাইনান প্রদেশের ওয়েন ছাং মহাকাশযান উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি কেন্দ্রটির সকল কর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের খোঁজখবর নেন।

 

 ওয়েন ছাং উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র ঘুরে দেখার পাশাপাশি সি চিন পিং কেন্দ্রটির সংশ্লিষ্ট তথ্য ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন শুনেন। এসময় সি চিন পিং বলেন, ওয়েন ছাং উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র চীনের নতুন প্রজন্মের রকেট উতক্ষেপণের ঘাঁটি। যার চীনের মহাকাশযান ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। সবার উচিত মহাকাশযানের চেতনায় বিশ্ব মহাকাশ উন্নয়নের মুখে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দেশের মহাকাশযানের চাহিদা মেটানো এবং বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর মহাকাশযান উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র গঠনের প্রচেষ্টা চালানো।

একই দিন চীনের হাইনানে সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘ইয়াং ফু অর্থনৈতিক উন্নয়ন এলাকা’ পরিদর্শন করেন এবং এখানকার উন্নয়ন ও চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ-খবর নেন। একই দিনে চীনের শুল্ক সাধারণ ব্যুরো প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, হাইনান বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ২০১৭ সালের ৭০.২৮ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ১৪৭.৬৮ বিলিয়ন ইউয়ানে; বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ২০.৪। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গতি গোটা দেশের গড় গতির চেয়ে চেয়ে ১১.৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। এ থেকে স্পষ্ট যে, হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের যথেষ্ট প্রাণশক্তি রয়েছে।

 

অবাধ বাণিজ্য বন্দর আজ বিশ্বে উন্মুক্ততার সর্বোচ্চ স্তর। ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল হাইনানে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অবাধ বাণিজ্য বন্দর চালু হয়। গত চার বছরে, হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরে ‘শূন্য শুল্ক’ নীতির ভিত্তিতে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ৭ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। বন্দরে প্রকৃত ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ বছরে ৭৯.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। এসময় ১৫০টিরও বেশি অবাধ বাণিজ্য বন্দর নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, উন্মুক্তকরণের মান বাড়ানোর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং বিশ্বের সঙ্গে পারস্পরিক কল্যাণকে এগিয়ে নিতে চীনের প্রচেষ্টা বজায় রয়েছে।  

২০২৫ সালের মধ্যে একটি অবাধ বাণিজ্য বন্দর নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা স্থাপিত হবে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য বন্দর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও অপারেটিং মডেল আরও পরিপক্ক হবে—এটি হচ্ছে হাইনান মুক্ত বাণিজ্য বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট নীলনকশা। বর্তমানে, দ্বীপ-ব্যাপী শূন্য শুল্ক-ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু করা হয়েছে, অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণের কাজও ত্বরান্বিত হচ্ছে। অনেক বিদেশি মিডিয়া বিশ্বাস করে যে, হাইনান ‘চীনের দুবাই’ হয়ে উঠবে, বিশ্বকে সুযোগ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ দেবে।

 

আসলে, বিশ্ব বিগত চার বছরে হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর থেকে লাভবান হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘শূন্য শুল্ক’ নীতি থেকে অনেক কোম্পানি লাভবান হয়েছে।

 

গত ১৪ মার্চ বড় আকারের আমদানিকৃত বিনোদনমূলক সরঞ্জামের একটি ব্যাচ সফলভাবে হাইখৌ পোর্ট কাস্টমস-এ ক্লিয়ারেন্স পায়, যার মূল্য ৮ লাখ ৭৫ হাজার ইউরো। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ১২ লাখ ৪৮ হাজার ইউয়ানের শুল্ক মওকুফ সুবিধা পেয়েছেন।

 

ফ্রান্সের স্নাইডার বিদ্যুত্ ও গ্যাস কোম্পানির অধীনে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য ও লজিস্টিক ক্ষেত্রের ব্যবসা সবই হাইনান বন্দর দিয়ে হচ্ছে। কোম্পানির সংশ্লিষ্ট প্রধান ‘শূন্য শুল্ক’  নীতি বাস্তবায়নকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘হাইনানের অবাধ বাণিজ্য বন্দরের বাণিজ্য সহজিকরণ পটভূমিতে হাইনান একটি খুব আকর্ষণীয় জায়গা, যেখানে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক, যা আমাদের জন্য অনেক সুযোগ বয়ে আনবে।

 

২০২২ সালের মার্চ মাসের শেষ দিক পর্যন্ত, হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের ‘শূন্য শুল্ক’ নীতির অধীনে আমদানিকৃত পণ্যের সঞ্চিত মূল্য ৭ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজ, ইয়ট, গাড়ি, বিমান, উত্পাদন-উপকরণ এবং উত্পাদন সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য।

 

 চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) অষ্টাদশ গণকংগ্রেসের পর এটি সি চিন পিং’র তৃতীয় হাই নান সফর। সিন চিন পিং’র অফিসের তাকে তরুণ সি চিন পিং ও তাঁর বাবার ছবি রাখা ছিল। ছবিটি ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে হাই নান প্রদেশে তাঁর বাবা সি চুং স্যুনকে দেখতে গিয়ে তুলেছিলেন তিনি। সেসময়ের হাই নান প্রদেশ খুব গরিব ছিল। তবে হাই নান উন্নয়নে নির্মাণকারীদের তখনকার চেতনা সি চিন পিংকে মুগ্ধ করেছিল। এরপর গত ৪০ বছরে তিনি বেশ কয়েকবার হাই নান প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন এবং দূরপাল্লার এ দ্বীপের ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক পর্যটনস্থলে পরিণত হওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি হাই খৌ শহরের শি চা গ্রাম পরিদর্শন করেন। ২০১৬ সালে এ গ্রাম সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। সি চিন পিং শি চা গ্রামের উন্নতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ উত্থান করতে গেলে শিল্পের ওপর নির্ভর করতে  হয়। শৈল্পিক উন্নয়নে নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে হয়।  বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন এবং নিজের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পথ খুঁজে বের করতে হয়।

২০১৮ সালে হাই নান প্রদেশের অর্থনৈতিক বিশেষ জোন প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সি চিন পিং। তখন তিনি হাই নান প্রদেশে অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দেন। যা নতুন যুগে হাই নান প্রদেশের উন্নয়নের নকশা তৈরি করে। এ নকশা অনুযায়ী, ২০৩৫ সালে হাই নান চীনের উন্মুক্ত অর্থনীতির দৃষ্টান্তে পরিণত হবে।