‘অ্যা লাইফলং জার্নি’ টিভি সিরিজে নারীর চরিত্র
2022-04-14 09:29:48

‘অ্যা লাইফলং জার্নি’ টিভি সিরিজ চীনের বিখ্যাত লেখক লিয়াং সিও শেংয়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে।

উপন্যাসে চীনের উত্তর-পূর্বের একটি প্রদেশে বাস করা সাধারণ এক পরিবারের তিন প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে দশজনেরও বেশি সাধারণ মানুষের জীবনের পরিবর্তন তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায় ও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের পৃথিবী কাঁপানো বিশাল পরিবর্তন এবং চীনা জনগণের দৈনন্দিন জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়। এতে ‘চীনা জনগণের জীবনের ইতিহাসের পঞ্চাশ বছরের’ উত্থান-পতন উপস্থাপন করা হয়।

টিভি সিরিজে বেশ কয়েকটি বৈচিত্র্যময় মানুষের চরিত্র তৈরি হয় এবং সেগুলোর মধ্যে অনেক নারী চরিত্র দর্শকদের সমাদর পায়। আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে এ টিভি সিরিজের বেশ কয়েকটি নারী চরিত্রের ওপর দৃষ্টি দেবো।

 

এসব নারী চরিত্র যুগের সাথে সাথে এগিয়ে যায় এবং সাহসিকতার সাথে নিজের চমত্কার জীবন গঠন করেন। বলা যায়, নারী হলো এই টিভি সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের শরীরে আমরা চীনা নারীর শক্তি, নমনীয়তা, সাহস, উষ্ণতা ও দয়া খুঁজে পাই।

‘এমন এক ব্যক্তি, তার কিছুই নেই, সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সে নিজেকে হারাতে পারেন নি, নিজের ওপর নির্ভর করেই আকাশে ওড়ার সাহস পায়। কথাগুলো হলো চেং চুয়েনের কষ্টকর জীবনের চিত্রায়ণ। পারিবারিক অবস্থা দরিদ্র হলেও তিনি নিজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ভুলে না গিয়ে জীবনের কাছে মাথা নত করেন নি। তিনি নিজের হাতে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেছেন। টিভি সিরিজে চেং চুয়েন বলেন, আমার তাদের সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। অনেক লোক আছে, যারা সমস্যার মধ্যে আছে। অন্যরা তা কাটিয়ে উঠতে পারে, আর আমিও অবশ্যই করতে পারি। চেং চুয়েনের শরীরে আমরা নারীর মৃদু ও শক্তিশালী শক্তি দেখতে পাই।

নারীরা আসলেই দুর্বল, তবে মা হিসেবে নারী অনেক শক্তিশালী। চীনের এই প্রচলিত কথা ‘চৌ মা’ এই চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলন করেছে। চৌ মা, খুব সাধারণ মুখ, তৃণমূল পর্যায়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি নিরক্ষর, তবে তিনি জ্ঞানী এবং দয়ালু। তিনি তিন সন্তানের লালন-পালন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, ‘মায়ের ভালবাসা পৃথিবীর সবচে আন্তরিক ভালবাসা’ এই কথা ব্যাখ্যা করার জন্য তার জীবন ব্যবহার করেছিলেন।

 

চৌ মা এই চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী সা রি না বলেন, আসলে তিনি বুদ্ধিমান। তার মায়ের ভালোবাসা ছাড়াও, জীবন সম্পর্কে জ্ঞান আছে। তিনি সব কষ্ট নিজের কাছে রাখেন এবং সন্তানদেরকে আশার আলো দেখান।

কোনো  কোনো দর্শক বলেন, তারা চৌ মা’র মৃদুহাসি দেখতে পছন্দ করেন। যখন সন্তান বাসায় ফিরে আসেন, চৌ মা হাসেন, স্বামী বাসায় ফিরে আসেন, চৌ মা হাসেন। বাসায় সেই হাসি মুখ দেখতে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন। সেই হাসিমুখ হলো সব প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য এবং চালিকাশক্তি, এটি সব উদ্বেগ ও দুঃখ রোধ করার একটি অস্ত্র। সেই হাসিমুখ দেখে সবকিছু পরাজিত করা সম্ভব হবে বলে দর্শকেরা মনে করেন।

 

‘চৌ রোং’ নামে টিভি সিরিজের আরেকটি চরিত্র সবচে বিতর্কিত নারী ব্যক্তিত্ব। একদিকে, তিনি সত্যিকারের ভালবাসার পক্ষে, ভালবাসার সাহস ও ঘৃণা করার সাহস আছে তার। নিজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি এবং ভাগ্য পরিবর্তন করেন। অন্যদিকে সারা জীবনে তিনি নিজের জন্য বেঁচে থাকেন এবং প্রেমের জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। চৌ রোং এই চরিত্রে অভিনয় করা সোং চিয়া বলেন, চৌ রোং একজন রোমান্টিক, অহংকারী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মহিলা। তিনি ইচ্ছাকৃত এবং একটু স্বার্থপর হতে পারেন, কিন্তু তিনি আমাদের সেই সময়ে মহিলাদের ভাগ্যের আরেকটি সম্ভাবনা দেখান।

 

ছিও ছুন ইয়েন চরিত্রকে সবচে সম্পূর্ণরূপে চিত্রিত করা চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তার একটি উষ্ণ ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব রয়েছে, তাড়াহুড়ো করে কাজ করে এবং ভাল কাজ করে, ‘শক্তিশালী পুরুষের’ মতো অনুভূতি দেখানো হয়।

ছিও ছুন ইয়েন খুব স্বচ্ছ জীবন যাপন করতেন। জীবনের উত্থান-পতন সত্ত্বেও, তিনি একটি ইতিবাচক ও আশাবাদী মনোভাবের সাথে এর মোকাবেলা করতেন এবং হাসিমুখে জীবনের সামনে দাঁড়ান।

 

ছুই সিউ চেন নামের চরিত্রটি একজন পরামর্শদাতা হিসেবে আবির্ভূত হন, শ্রমিকদের কাজের অবস্থার উন্নতি ঘটান, অন্যদেরকে লেখাপড়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং সূক্ষ্ম ও নীরবে তাদের যত্ন নেন। অন্যান্য নারী চরিত্রের চেয়ে এই চরিত্র কিছুটা ভিন্ন। তার শরীরে মেয়েলি কোমলতা, দয়া, সাহস এবং প্রজ্ঞা রয়েছে।

 

‘অ্যা লাইফলং জার্নি’ টিভি সিরিজের পরিচালক লি লু এক সাক্ষাত্কারে বলেন, টিভি নাটকে নারী চরিত্রগুলো সকলেই দৃঢ় ও শক্তিশালী। তাদের সবারই ঐতিহ্যবাহী চীনা নারীদের গুণাবলী আছে। পরিবার ও বন্ধুর প্রতি দায়িত্ববোধ রয়েছে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দর্শকদের মধ্যে যারা ‘অ্যা লাইফলং জার্নি’ টিভি সিরিজ উপভোগ করেন, তাদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সের কম তরুণদের অনুপাত ৪৬.৮ শতাংশ। চীনের অতীতের সময় বর্ণনা করা এই টিভি নাটক কেন ব্যাপক তরুণ তরুণীর মন জয় করলো? একজন নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, যুগের প্রেক্ষাপটে দর্শকরা টিভি সিরিজে বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে ভাবানুভূতির একই আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। টিভি সিরিজ দেখে মনে হয়- এটা যেন আমার একজন প্রতিবেশীর গল্প।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে