আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬৯
2022-04-14 19:58:43

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬৯

বৈশাখের বিশেষ অনুষ্ঠান

১. লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন: অধ্যাপক তালাত সুলতানা  

২. রংতুলির আঁচড়ে রবীন্দ্রনাথ

৩. সিনচিয়াংয়ের সুখী শিক্ষিকা

৪. লোকজ ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলার নারী

শুভ নববর্ষ। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে জানাই সাদর আমন্ত্রণ। আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলাদেশের সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলিত জাতীয় উৎসব। এসো হে বৈশাখ এসো এসো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের সঙ্গে বাংলা ১৪২৯ সালকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।

পহেলা বৈশাখ আমাদের একান্ত আপন লোকজ উৎসব। এই উৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তালাত সুলতানার সঙ্গে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

 

 

লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন: অধ্যাপক তালাত সুলতানা

 

 

সাক্ষাৎকার:

সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন’ বলেন তিনি। সরকারি তিতুমীর কলেজে অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে যেগুলোতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা অংশ নিচ্ছে। তালাত সুলতানা মনে করেন লোকজ ঐতিহ্য ধরে রাখায় নারীদের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। নারীরা তাদের পোশাকে এবং সাজসজ্জায় আজও বাঙালিয়ানা ধরে রেখেছে পরম মমতায়। পহেলা বৈশাখ আজকাল প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয়। সরকারি তিতুমীর কলেজও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে পিঠাপুলি, আলপনা আঁকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে বর্ষবরণের আয়োজন চলে বলে জানান তিনি।  তালাত সুলতানা একজন সংগীতশিল্পীও। তিনি নববর্ষ উপলক্ষে শ্রোতাদের জন্য দুটি গান পরিবেশন করেন। এসো হে বৈশাখ এসো এসো এবং নব আনন্দে জাগো গানদুটি পরিবেশনের মাধ্যমে তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাদের বাংলা নতুন বছরের শুভকামনা জানান।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে খুব পছন্দ করেন চীনা নাগরিক বি সিয়াও।  তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ‘বেগুনি তুষার’। এ নামে  চীনা এই নাগরিক রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে চীনা ভাষায় একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। কখনও কখনও মানুষকে জীবনের প্রয়োজনে পরিবর্তনের পথে হাঁটতে হয়।  চিন্তাভাবনা করতে হয় নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সিয়াও এমনই একজন মানুষ। সিয়াও এর কথা শুনবো  প্রতিবেদনে।

রংতুলির আঁচড়ে রবীন্দ্রনাথ

‘বেগুনি তুষার’গ্রন্থটির লেখিকা একজন চীনা নাগরিক বি সিয়াও।কর্মসূত্রে তার স্বামীর সঙ্গে ভারতের কলকাতায় কয়েক বছর থাকার সুযোগ হয় তার। সেখানেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন। এরপর থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা তাকে ভীষণ টানতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘কবিগুরুর কবিতার আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনের কারণেই মূলত আমার কাছে তাঁর রচনা খুব উপভোগ্য মনে হয়।’

সিয়াও তার শৈশব, ভালবাসার গল্প ও বিদেশে কাজকর্মের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে রবীন্দ্র-সাহিত্যের সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের অনুভূতি তার বই ‘বেগুনি তুষারে’ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি খুব কল্পনাপ্রবণ ছিলাম। আমি চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছি। তখন চীনের উত্তরাঞ্চলের সমভূমিতে খালি পায়ে আমি রোদে দৌঁড়াতাম। সেটা ছিল আমার জীবনের সুন্দর সময়। কিন্তু সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের গতিও পরিবর্তন হয়েছে। শহুরে জীবন তুলনামূলকভাবে কোলাহলপূর্ণ এবং ভীষণ ব্যস্ত।

বি সিয়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। তারপর বিয়ে। তাঁর স্বামী একজন চীনা কূটনীতিক ছিলেন। স্বামীর কাজের সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হয় তাকে।  সেখানে স্নাতকোত্তর পড়া শেষ করেন তিনি।

পরবর্তীতে বি সিয়াওর স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে তার কাজের মেয়াদ শেষ করে চীনে ফিরে যান এবং ভারতের কলকাতায় চীনা কূটনীতিক হিসেবে যোগদান করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের জীবন খুব গতিময় হওয়ায় সিয়াও একাকিত্ব অনুভব করেন এবং এক পর্যায়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলাম। ভারতে যাওয়ার আগে থেকেই, রবি ঠাকুরকে জানার আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। আমি যখন জানলাম যে, কলকাতায় তাঁর জন্মস্থান, তখন আমি আরও বেশি কৌতুহল অনুভব করি এবং আমি কলকাতায় চলে যাই। ’

ভারতের সবকিছুই বি সিয়াওর কাছে পরিচিত মনে হতে থাকে; তিনি সেখানে নতুন জীবন খুঁজে পান।  পাশাপাশি, সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সাহিত্যের সাথে পরিচিত হন।

বি সিয়াও তাঁর লেখা বইয়ে বর্ণনা করেন,  “রবীন্দ্রনাথের কবিতা জাগতিক বন্ধন দূর করে মানবতাকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি দেয়। তাই, তাঁর কবিতায় প্রায়শই শান্তি ও স্থিতি খুঁজে পান তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজগুলো কালজয়ী হয়ে থাকবে সমসময়। 

বি সিয়াও রবীন্দ্রনাথকে ভিতরে লালন করেন, ধারণ করেন এবং কবির আদর্শকে চর্চার মাধ্যমে আরো ছড়িয়ে দিতে চান মানুষের মাঝে। রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন মনের গহীন কথা।

 

সিনচিয়াংয়ের সুখী শিক্ষিকা

 

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের নারীরা বর্তমানে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করছেন। অতীতে তারা কেবল ঘরসংসার ও পারিবারিক কৃষিতে শ্রম দিলেও বর্তমানে তারা চাকরি করছেন, উপার্জন করছেন এবং অনেক বেশি অধিকার উপভোগ করছেন। সিনচিয়াংয়ের শিশুরাও কিন্ডারগার্টেন স্তর থেকেই আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। চীন সরকার শিশুদের শিক্ষার বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শুনুন সিনচিয়াংয়ের একজন আধুনিক  স্কুল শিক্ষিকা ও তার স্কুলের শিশুদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন

সিনচিয়াংয়ের একজন স্কুল শিক্ষিকা সেনবাত বায়বিত। তিনি বুরছিন কাউন্টির এগিজতোবে শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করেন। এই কিন্ডার গার্টেনের  প্রতিটি শিশুর জন্য সরকার থেকে বার্ষিক ২৮০০ ইউয়ান ভর্তুকি দেওয়া হয়।  শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় স্কুল থেকেই। দুবেলা খাবার ও ডেজার্ট দেয়া হয়।

সেনবাত নিজেই শিশুদের খাইয়ে দেন। যত্ন করেন তাদের। প্রিস্কুলের ছোট ছোট শিশুদের তিনি ছবি আঁকতে শেখান। খেলার ছলে কিছুটা লেখাপড়া, অক্ষর পরিচয় হয় তাদের। পাঠ্যবই, রংপেন্সিলসহ সব রকম শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয় বিনামূল্যে।

শিশুরা সেনবাতকে খুব ভালোবাসে। কারণ তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। তিনি ধৈর্য্ ধরে ওদের শিক্ষাদান করেন। সেনবাত সিনচিয়াংয়ের আধুনিক নারীদের প্রতীক যারা এই অঞ্চলের সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।

 

লোকজ ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলার নারী

আজ পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। পহেলা বৈশাখের লোকজ উৎসবে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত  অংশগ্রহণ রয়েছে। বৈশাখের পিঠাপুলি তৈরি, আল্পনা আঁকা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা সবকিছুতেই রয়েছে নারীর প্রাণবন্ত উপস্থিতি।

বলতে গেলে লোকজ সংস্কৃতি নারী ধারণ করে এবং পৌছে দেয় প্রজন্মান্তরে। বাংলা ছড়া, রুপকথা, উপকথা মা, নানীদাদীর কাছ থেকে শোনে শিশু। নকশী কাঁথার বুননে নারীরা ফুটিয়ে তোলেন বাংলার প্রকৃতির রূপ।

লোকজ রীতিনীতি পালনেও নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভ কামনা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। বাংলা ১৪২৯ সাল সকলের জন্য শুভ ও কল্যাণ বয়ে আনুক। শুভ নববর্ষ।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও অডিও সম্পাদনা : শান্তা মারিয়া

রংতুলির আঁচড়ে রবীন্দ্রনাথ প্রতিবেদন, রওজায়ে জাবিদা ঐশী,  অনুবাদ : ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া

সিনচিয়াংয়ের সুখী শিক্ষিকা এবং লোকজ ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলার নারী, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া