চীনের সুন্দর মসজিদ এবং তার ইতিহাস
2022-04-12 16:20:23

চীনের মসজিদের স্থাপত্যশৈলী এবং শৈল্পিক রূপকে প্রধান দু’টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: একটি প্রধানত কাঠের মসজিদ, যা ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যশৈলী প্রতিফলিত করে। এটি চীনের অনন্য একটি ইসলামিক স্থাপত্য। অন্যটি, আরবীয় স্থাপত্যশৈলীর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে; যেখানে চীনের মসজিদের কিছু স্থানীয় বা জাতীয় বৈশিষ্ট্যময় উপাদান দেখা যায়। বিদ্যমান চীনা মসজিদগুলির অধিকাংশই ইউয়ান, মিং এবং ছিং রাজবংশের সময় নির্মিত বা পুনর্নির্মিত হয়েছে।

 

আজ আমি আপনাদের সাথে চীনের সুন্দর মসজিদ এবং সেসবের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।

প্রথমে, নানকুয়ান মসজিদ চীনের উত্তরাঞ্চলের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। এটি ইনছুয়ান শহরের পুরানো শহরে অবস্থিত এবং নিংসিয়া হুই জনগণের মনে এটি একটি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।

ইনছুয়ান নানকুয়ান মসজিদের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি মিং রাজবংশের শেষ দিকে এবং ছিং রাজবংশের প্রথম দিকে দক্ষিণ গেটের বাইরে তৈরি হয়েছে। ১৯১৫ সালে এটি নগর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়, ১৯৫৩ সালে প্রসারিত হয়। এটি সেই সময়ে একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যশৈলী ছিল। এরপর ১৯৮১ সালে তা পুনর্নির্মিত হয়; এরপর তা আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে পরিবর্তিত হয়।

নানকুয়ান মসজিদটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের। মূল হলটি ২৬ মিটার উঁচু এবং উপরের হলটিতে ১৩০০জনেরও বেশি লোক প্রার্থনা করতে পারে। মসজিদের মাঝখানে একটি বড় এবং চারটি ছোট সবুজ গম্বুজ রয়েছে, যার উপরে একটি অর্ধচন্দ্রাকার চিহ্ন ঝুলছে; মূল হলের সামনের দু’পাশে ৩০-মিটার-উঁচু ‘মিনার’ (minaret) এবং প্রমোনেড রয়েছে, সামনে একটি ফোয়ারা রয়েছে, যা পুরো মসজিদের শৈলীকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।

পুরো ভবনটির একটি কঠোর বিন্যাস, চমত্কার অলঙ্করণ, মর্জিত, মহত্ এবং এটি চীনের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ বলা যেতে পারে।

 

এবারে তুংকুয়ান মসজিদ।

তুংকুয়ান মসজিদ ছিংহাই প্রদেশের সিনিং শহরের তুংকুয়ান রাস্তার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এটি সিনিং শহরের একটি বিখ্যাত স্থাপত্য এবং চীনের একটি বিখ্যাত মসজিদ। বলা হয় যে তুংকুয়ান মসজিদ মিং রাজবংশের প্রথম দিকে তৈরি হয়েছে। ইতিহাসে এটি বহুবার ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ক্রমাগত পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যমান ভবনটি ১৯১৩ সালে পুনর্নির্মিত হয়েছে। এরপর আরেকবার প্রসারিত হয়েছে ও পুনর্নির্মিত হয়েছে, যা চীনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মহান মসজিদগুলির মধ্যে একটি। মসজিদের নির্মাণ চমত্কার এবং চীনের ধ্রুপদী স্থাপত্য ও জাতীয় শৈলীর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এতে একই সময়ে ৪০ হাজার মানুষ প্রার্থনা করতে পারে। পুরো মসজিদটি মার্জিত, গম্ভীর, শক্তিশালী আরবীয় বৈশিষ্ট্যময় এবং এটি একটি প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা ইউনিট।

 

এবারে সাতিয়েন মসজিদ দেখাবো। সাতিয়েন মসজিদকে চীনের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ বলা হয়। এটি সাতিয়েন গ্রেট মসজিদ নামেও পরিচিত। এটি ইয়ুননান প্রদেশের তিনটি জেলা ও শহরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এতে চীনা প্রাসাদ-শৈলীর স্থাপত্য দেখা যায়।

সাতিয়েন মসজিদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি ১৬৮৪ সালে নির্মিত হয় এবং ১৯৭৫ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমান স্থাপত্যটি ১৯৮০ সালে মূল জায়গায় পুনর্নির্মিত হয়। মসজিদের ২১ হাজার বর্গমিটার এলাকা এবং ইসলামি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ২০০৫ সালে আবারও প্রসারিত করার পর এটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের বৃহত্তম মসজিদে পরিণত হয় এবং এটিও চীনের একশ’টি বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে একটি।

 

সাতিয়েন মসজিদ স্থাপত্যে মার্জিত, প্রধানত আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি। এতে কিছু ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়।

ভবনের বাইরের দেয়ালগুলি সাদা, দেয়াল ও ছাদ ফিরোজা রঙের। অস্তগামী সূর্যের প্রতিফলনের সময় পুরো গ্র্যান্ড মসজিদ স্বপ্নের মতো দেখায়।

 

বন্ধুরা, চীনের মসজিদগুলি সম্বন্ধে আরো জানতে চান? অবশ্যই মন্তব্য করবেন।