এপ্রিল ১২: পশ্চিমা দেশগুলো সার্বিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে। এ প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি সার্বিয়ান ফুটবলের জনৈক অনুরাগী একটি ফুটবল ম্যাচ চলাকালে স্টেডিয়ামে একটি ব্যানার প্রদর্শন করে। ব্যানারে গ্রানাডা, পানামা, আফগানিস্তান, ইরাক, ইত্যাদি দেশের নাম রয়েছে। এ দেশগুলো মার্কিন হামলার শিকার হয়েছে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান দেশটির ‘ভণ্ডামি প্রকাশ করেছে’। মূলত মার্কিন ভণ্ডামির কারণেই ইউক্রেন সংকট দানা বেধে ওঠে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হয়। এর ফলে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। অথচ এখন এই সংকট মোকাবিলার মূল দায়িত্ব নিতে বলা হচ্ছে ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে। এতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্ব স্পষ্টভাবে দেখতে পারছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, যে নিজেকে মানবাধিকারের অভিভাবক বলে অভিহিত করে থাকে, আসলে মানবাধিকারের আসল শত্রু।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের রেকর্ড সর্বদাই খারাপ ছিল। নিজের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, দেশটি অনেক দেশের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, অনেক যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়েছে। যার ফলে বিপুল বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলো চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়তে থাকে, জাতিগত সংঘাতও তীব্রতর হতে থাকে। সংখ্যালঘু জাতির সদস্য যখন পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে মৃত্যুর আগে বলেন ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, তখন মার্কিন মানবাধিকারের আসল চিত্র ফুটে ওঠে।
বাহ্যিক চাপের মুখে মার্কিন সরকারকে ঘোষণা করতে হয়েছে যে, তারা এক লাখ ইউক্রেনীয়কে গ্রহণ করবে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউক্রেনীয় আশ্রয়প্রার্থী পশ্চিম ইউরোপীয় প্রতিবেদশীদের দিকেই যাবে। আসলে, ইউক্রেনীয়দের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অনেক সময় লাগতে পারে। মার্কিন মিডিয়া বলছে যে, আফগানিদের যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তেমনি ইউক্রেনীয়দের গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পৌঁছানোর জন্য মার্কিন সরকার কিছু করবে কি না, সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ আছে।
নিজের প্ররোচনা বা সরাসরি হস্তক্ষেপে সৃষ্ট বিপর্যয়ের জন্য অন্য দেশগুলোকে দায়ী করতে অভ্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সাল থেকে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় তথাকথিত ‘আরব বসন্ত’ উস্কে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে বেশ কয়েকটি দেশে অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং ইউরোপে শরণার্থীদের একটি বড় অংশের আগমন ঘটে। মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে লিবিয়া ও সিরিয়াসহ অনেক জায়গায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; মধ্যপ্রাচ্য-পরিস্থিতির জন্য দেশটি অনেকাংশে দায়ী।
দেশটি প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ১০ বছরের কিছু বেশি সময় যুদ্ধ করেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, বিশ্বের ১৫৩টি অঞ্চলে ২৪৮টি সশস্ত্র সংঘাত সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ২০১টি শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অবৈধভাবে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও সামরিক অভিযানে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, কোটি কোটি মানুষ হয় গৃহহারা। এই থেকে স্পষ্ট যে, ‘মানবাধিকার রক্ষার’ অজুহাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জুড়ি মেলা ভার।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতিও সমানভাবে ভয়ঙ্কর। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে একশ্রেণির মার্কিন রাজনীতিবিদ মহামারী নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এতে যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিকিত্সাব্যবস্থা দেশে এমন পরিস্থিতি কল্পনা করাও কষ্টের। মার্কিন সরকার খোদ নিজের দেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারই রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার হচ্ছে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)