বন্ধুরা, মহাকাশে মানবজাতির অনুসন্ধান-কাজ কখনই বন্ধ হয় নি। মহাকাশে প্রায় ৬ মাস থাকা চীনের তিনজন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরে আসছেন শিগগরি। ছয় মাস—যা চীনের মানববাহী মহাকাশ কাজে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এখন পৃথিবীতে ফেরার জন্য তাঁরা কেমন প্রস্তুতি নেবেন। তাঁদের অবস্থা কেমন? আজ এই বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর চীনের নভোচারী চাই জি কাং, ওয়াং ইয়া পিং এবং ইয়ে কুয়াং ফু চীনের জিউছুয়ান উপগ্রহ উত্ক্ষেপন কেন্দ্রে শেনচৌ ১৩নং মানববাহী মহাকাশযানের মাধ্যমে চীনের থিয়ানহ্য কোর মডিউলে প্রবেশ করেন এবং চীনের স্পেস স্টেশনের দ্বিতীয় দফা নভোচারী হন।
আধা বছরের ‘মহাকাশ যাত্রায়’ তিনজন নভোচারী স্পেস ওয়াক করেছেন, মহাকাশ থেকে ‘থিয়ানকোং ক্লাস’ দিয়েছেন পৃথিবীর শিশুদেরকে। সেই সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা করেছেন। বর্তমানে তাঁরা পৃথিবীতে ফেরার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তাহলে এসব প্রস্তুতি কাজ কেমন হয়?
চলে যাওয়ার আগে প্রথম কাজ নিশ্চয় থাকার ‘ঘর’ কে গোছগাছ করে রাখা। বাসায় ফেরার আগে নভোচারীদের উচিত কোর মডিউলের পরিবেশকে আগের মতো করা। যেমন শরীর চর্চার যন্ত্র, পরীক্ষা করার জিনিস, মেরামতের যন্ত্রাংশকে পুনরায় প্যাকেজ করা, নির্ধারিত জায়গায় রাখা। একদিকে বিভিন্ন জিনিস ভেসে না যায়। অন্যদিকে বাকি জিনিসগুলো বিন্যাস করা এবং আরও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। যাতে ভবিষ্যতে শেনচৌ ১৪নং মিশন সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায়।
আরেকটি কাজ হল লাগেজ প্যাকেজ করা। আমরা জানি, এবার তিনজন নভোচারী মহাকাশে ৬ মাস সময় থেকেছেন। এর মধ্যে তাঁরা অনেক পরীক্ষা করেছেন, যা মহাকাশ পদার্থবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, উপকরণবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন খাত সম্পর্কিত। এর বৈজ্ঞানিক মূল্য অনেক। আর এসব পরীক্ষার ডাটা ও তথ্যাবলী সবই পৃথিবীতে আসবে। এ ছাড়া মহাকাশ স্টেশন থেকে অর্ধেক বছরের আবর্জনাও সঙ্গে আনতে হয়। পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার আগে নভোচারীরা মহাকাশ স্টেশনকে পুরোপুরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। যেমন অবিশিষ্ট খাবারের আবর্জনা, দৈনন্দিন জিনিসের আবর্জনা, মহাকাশে পরীক্ষার পরিত্যক্ত দ্রব্যাদিকে প্যাকেজ করে অরবিটাল মডিউলে রাখা হয়, তারপর এসব আবর্জনা অরবিটাল মডিউল-এর সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করানোর পর প্রচণ্ড চাপ ও ঘর্ষণে তাপ তৈরি হয় এবং আগুন লেগে পুড়ে যায়।
এছাড়া নভোচারীদের উচিত নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চর্চা করা। কারণ তাঁরা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে থাকেন, শরীরের বিরাট পরিবর্তন ঘটে। যেন পেশী অবক্ষয়, হাড় ক্ষয় ইত্যাদি। এসব অবস্থার সম্ভাব্য ক্ষতি প্রশমনের জন্য নভোচারীরা প্রতিদিন মহাকাশ স্টেশনে শরীরচর্চা করেন। আর ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বলা যায়- চীনের মহাকাশ প্রযুক্তি খুব নির্ভরযোগ্য। তবে মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফেরার পথে বিভিন্ন ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ থাকে। তাই ফেরার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অপারেশন এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলার পদ্ধতি জানা খুব প্রয়োজন।
সর্বশেষ কাজ হলো ‘দরজা বন্ধ’ করা। যাওয়ার আগে নভোচারীরা মহাকাশ স্টেশনের প্রত্যেক কেবিনের দরজা বন্ধ করেন, তারপর কোর মডিউল থেকে শেনচৌ ১৩ নং মহাকাশযানে প্রবেশ করেন।
জানা গেছে, এবার তিনজন নভোচারী প্রথমবারের মত ‘দ্রুত ফিরে যাওয়ার’ মডেলে পৃথিবীতে ফিরে যাবেন। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে নির্ধারিত অবতরণ স্থানে পৌঁছে যাবেন। যা চীনের মহাকাশ প্রযুক্তির আরেকটি নতুন অর্জন।
আমরা পৃথিবী থেকে চীনের তিনজন নভোচারীর সুষ্ঠুভাবে ফিরে আসার অপেক্ষা করছি।