প্রথম চীন-আফ্রিকা সভ্যতা-সংলাপ অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত
2022-04-11 11:07:28


এপ্রিল ১১: গত ৯ এপ্রিল ‘প্রথম চীন-আফ্রিকা সভ্যতা সংলাপ’ অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।

চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির উদ্যোগে এবং চীনের আফ্রিকান গবেষণালয় ও চীনে আফ্রিকান ইউনিয়নের কার্যালয়ের যৌথ সহায়তায় এবারের সংলাপ আয়োজন করা হয়। সংলাপে আফ্রিকান কূটনীতিকরা বলেছেন, আফ্রিকান ও চীনা সভ্যতার বিনিময় সুদীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। দু’পক্ষ একে অপরের সভ্যতা থেকে আরও শিখতে পারে।

এবারের সংলাপের মূল প্রতিপাদ্য ছিল: ‘সভ্যতার বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার মাধ্যমে নতুন সময়পর্বে চীন ও আফ্রিকার অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলা’। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে চীন ও আফ্রিকার মানবিক বিনিময়ে নতুন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে চীন ও আফ্রিকার সভ্যতার বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নেওয়া, যাতে নতুন সময়পর্বে চীন ও আফ্রিকার অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলায় বুদ্ধি ও শক্তি যোগানো যায়।

চীনে আফ্রিকান ইউনিয়ন কার্যালযের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রহমানতারা ওসমান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আফ্রিকান ও চীনা ঐতিহ্যবাহী সভ্যতায় রয়েছে সমষ্টিবাদ এবং মানুষের সাথে মানুষের ও মানুষের সাথে প্রকৃতির সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা। এই অভিন্ন ধারণা কেবল যে আফ্রিকান ও চীনা সভ্যতার ব্যবধান কমিয়েছে তা নয়, বরং আফ্রিকান ও চীনা সভ্যতার মধ্যে বিনিময়কে সমতা, শান্তি ও বন্ধুত্বের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে। আফ্রিকান সভ্যতা ও চীনা সভ্যতা সাম্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ধারণায় বিশ্বাস করে, যা বর্তমান জটিল ও চ্যালেঞ্জিং আন্তর্জাতিক পরিবেশে বিশেষভাবে মূল্যবান। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

‘দীর্ঘকাল ধরে, কিছু পশ্চিমা পণ্ডিত সভ্যতার ধারণা নিয়ে অনেক একতরফা অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। তারা ‘সভ্যতার ভালো-মন্দের তত্ত্ব’, ‘সভ্যতার কেন্দ্রের তত্ত্ব’, ‘সভ্যতার উপসংহার’, ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’, ‘সভ্যতার সংঘর্ষের তত্ত্ব’, ইত্যাদি প্রচার করছেন। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার মতোই আফ্রিকান ও চীনা সভ্যতার মতাদর্শগত ও বস্তুগত সাফল্য রয়েছে, যা নিয়ে তারা গর্বিত এবং উভয় সভ্যতাই বৈশ্বিক সভ্যতার বিকাশে অবদান রেখেছে। আফ্রিকান ও চীনা সভ্যতার আরও বিকাশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।’

চীনে ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূত তেশোম টোগা তাঁর বক্তৃতায়  উল্লেখ করেন যে, আফ্রিকা ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে স্থাপিত, যা সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

‘সমান অংশীদাররা একে অপরের সাথে কথা বলে, একে অপরের ধারণা বোঝে এবং অন্যের ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয় না; প্রকৃত বন্ধু একে অপরের উদ্বেগ ও স্বার্থকে সম্মান করে; প্রকৃত বন্ধুত্ব একচেটিয়া হয় না, প্রয়োজনে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। আমার মতে, আফ্রিকা এবং চীন একে অপরের মূল উদ্বেগকে সম্মান করে, সহযোগিতার ফল ভাগ করে নেয় এবং তারা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় তা যৌথভাবে মোকাবিলা করে। আর তাই আফ্রিকা ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

  চীনে সোমালি রাষ্ট্রদূত আভালে আলী কুরানে বলেন,  আফ্রিকা-চীন বিনিময়ের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । দু’পক্ষ স্বাধীনভাবে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। মহামারী এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে দু’পক্ষের বিনিময় এবং সহযোগিতা জোরদার করার আরও জায়গা রয়েছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

‘আন্তঃদেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি ক্রমাগত আফ্রিকা এবং চীনে বিকশিত হচ্ছে। চীনে তৈরি অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আফ্রিকাতে খুব জনপ্রিয়। পাশাপাশি, কফি বিন এবং ওয়াইন-এর মতো আফ্রিকান পণ্যগুলিও চীনা বাজারে খুব জনপ্রিয়।’

এই সংলাপ আয়োজনের অর্থ হলো চীন ও আফ্রিকার জনগণের মধ্যে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এটি চীন ও আফ্রিকার সভ্যতার বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)