আকাশ ছুঁতে চাই ৬৮
2022-04-06 19:26:00

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. সাক্ষাৎকার: দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে- স্থপতি সানজিদা শামস ঊর্মি

২. নারী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে বৈশ্বিক সিম্পোজিয়াম

৩. স্কুলের পথে সিনচিয়াংয়ের মিরজানরা

৪. গান: তাজিক লোকগীতি

৫. নারীদের বিশেষ কারুশিল্প সিলানখাপু ব্রোকেড

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।  কেমন আছেন আপনারা?

বাংলাদেশে স্থাপত্য পেশায় নারীর অংশগ্রহণ খুব বেশি দিনের নয়। মুষ্ঠিমেয় নারী এই পেশায় সাফল্য অর্জন করেছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন। স্থাপত্য পেশায় নারীর অংশগ্রহণ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো স্থপতি সানজিদা শামস ঊর্মির সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে- স্থপতি সানজিদা শামস ঊর্মি

                                               

 

সাক্ষাৎকার

সানজিদা শামস ঊর্মি দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে স্থপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমেই তিনি শোনালেন তার স্থপতি হয়ে ওঠার গল্প। স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন আর্কিটেকচারের শিক্ষার্থী। তার কাছ থেকেই তিনি স্থাপত্য কৌশলে পড়ার প্রেরণা পান। বুয়েট থেকে আর্কিটেকচারে পাশ করেন সানজিদা। তিনি কখনও নারী-পুরুষ বৈষম্যে বিশ্বাস করেন না। তাই পুরুষ সহপাঠীদের সঙ্গে একইভাবে কঠোর পরিশ্রমে লেখাপড়া ও অ্যাসাইনমেন্ট করার মাধ্যমে তিনি পাশ করেন। কিন্তু পেশায় প্রবেশের পর অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তাকে। নারী বলে অধীনস্তরা তাকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করে।

 নির্মাণ সাইটে স্থানীয়দের সঙ্গে কাজেওে কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়।  কিন্তু সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি সব সমস্যার মোকাবেলা করেন। সানজিদা বেশি কাজ করেছেন ইন্টেরিয়র এবং রিসোর্ট নির্মাণে। শ্রীমঙ্গল ও বান্দরবানে রিসোর্টের নকশা করেছেন তিনি। পরিবেশ , দেশীয় ঐতিহ্য এবং কাঁচামালের সহজলভ্যতার উপর তিনি গুরুত্ব দেন। নতুন যারা আসছে তাদেরকে তিনি ফিল্ডে যাওয়ার এবং সাহসের সঙ্গে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সাক্ষাৎকারে নিজের চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন সানজিদা শামস ঊর্মি

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে বৈশ্বিক সিম্পোজিয়াম

 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে নারী এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈশ্বিক সিম্পোজিয়াম থেকে এমন মতামত উঠে আসে বিশেষজ্ঞদের। তারা মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

জাতিসংঘের  ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নারী শিক্ষার বিস্তার বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের বেইজিংয়ে সম্প্রতি মেয়েশিশু ও নারী শিক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন" থিমযুক্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

সমাজে নারী শিক্ষার বিস্তারের মূল বিষয়গুলো এবং শিক্ষা ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে সংলাপের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই হলো এই সিম্পোজিয়ামের লক্ষ্য।

সিম্পোজিয়ামে চীনের শিক্ষা বিষয়ক উপমন্ত্রী তিয়ান সুয়েচুন বলেন, শিক্ষা বিষয়ক যেকোনো ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।  আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ক্রস-সেক্টর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা দিতে ডিজিটাল পরিবর্তনের আহ্বান জানান মন্ত্রী।

ইউনেস্কোর শিক্ষা বিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক স্টেফানিয়া জিয়াননিনি বলেন, নারীদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় এবং সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষাকে জনসাধারণের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর জনগণের যৌথ প্রচেষ্টাতেই এটি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। 

 

শিক্ষাকে সমাজের অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা উচিত বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

 

স্কুলের পথে সিনচিয়াংয়ের মিরজানরা

 

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের শিশুদের মধ্যে শিক্ষাগ্রহণের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে। ছেলে শিশুদের পাশাপাশি মেয়েশিশুরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষাগ্রহণ করছে।

উত্তর পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। থাক্সখোরগান তাজিক স্বায়ত্বশাসিত কাউন্টির ছোট্ট একটি গ্রাম রেসখাম। এই গ্রামের ১১ বছর বয়সী মেয়ে আয়িজমাল মিরজান। মিরজান স্কুলে যাচ্ছে।

বাসে চড়ে পামির মালভূমির ভিতরে পাহাড়ি পথ ধরে স্কুলে যাচ্ছে মিরজান ও তার বন্ধুরা। এই প্রথম এই শিশুরা এমন চমৎকার হলুদ বাসে চড়ে স্কুলে যেতে পারছে। এই বাস দেখতে ঠিক সিনেমায় দেখা বাসের মতো।

 

৬ ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে ২৫০ কিলোমিটার দূরে স্কুলে পৌছায় তারা। আগের দিনে হলে ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ঘোড়া, উট বা মোটর সাইকেলে চড়ে কয়েকদিন লেগে যেত। মিরজানের মতো মেয়েশিশুদের তো অত দূরের বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর কথা তাদের বাবা মায়েরা ভাবতেই পারতেন না।

২০০৮ সালে থাক্সখোরগানে একটা স্কুলনীতি গ্রহণ করা হয়। কিন্ডারগার্টেন থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত সব শিশুদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়। বোর্ডি স্কুলেরও ব্যবস্থা করা হয়।

বছর দশেক আগেও এখানকার শিশুদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরিমাণ কম ছিল। হাইস্কুল পাশ করে তারা হয়তো পশুপালকের জীবিকা বেছে নিতো। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত অল্প বয়সেই। কিন্তু এখন তারা ক্রীড়াবিদ, মডেল এমনকি নভোচারী হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে তারা নানা ধরনের পেশায় যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই নারীরাও।

এখন অবকাঠামোগত উন্নয়ন তাদের শিক্ষাগ্রহণের পথকে সুগম করেছে। শিক্ষাগ্রহণের হার ২০০৬ সালে ৭৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১০০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাগ্রহণের হারও এখন শতভাগ। মিরজানের মতো মেয়ে শিশুরা তাই এগিয়ে চলেছে জীবনের পথে।

গান: তাজিক লোকগীতি

চীনের সিনচিয়াংয়ে তাজিক জাতির মুসলিমরা বাস করেন। তাদের লোকজ সংগীত অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাজিক জাতির একটি বিখ্যাত লোকগান হলো গুলিবিতা। এর অর্থ হলো সুন্দর ফুল কেন এত লাল। এই লোকগানটিতে তাজিক জাতির একটি ভালোবাসার কাহিনী তুলে ধরা হয়। গানটি দ্বৈতকন্ঠে পরিবেশন করেছেন দুজন তাজিক লোকশিল্পী।

 

 

নারীদের বিশেষ কারুশিল্প সিলানখাপু ব্রোকেড

 

 

চীনের এক অনন্য কারুশিল্প সিলান খাপু ব্রোকেড। এই হস্তশিল্পের সঙ্গে নারীদের রয়েছে বিশেষ সংযোগ।

চীনের একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠি হলো থুচিয়া জাতি।  চাংচিয়াচিয়ের থুচিয়া জাতিগোষ্ঠির হস্তশিল্প হলো সিলানখাপু ব্রোকেড।

থুচিয়া জাতির একজন নারীর জন্য এই বয়নশিল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ। থুচিয়া মেয়েরা ১১/১২ বছর বয়স থেকেই বড়বোন বা মায়ের কাছে এই শিল্প শিখতে শুরু করে। সে যখন পূর্ণবয়স্ক হয়ে বিয়ে করে তখন তার যোগ্যতা পরিমাপের একটি অংশ হলো সে কত ভালো সিলানখাপু বুনতে পারে। তার হাতে বোনা ব্রোকেড বিয়ের উপহার হিসেবে গণ্য হয়।

থুচিয়া নারীদের বিয়ের পোশাকে কনের হাতে বোনা সিলানখাপু ব্রোকেড থাকে। কনের ঘোমটা বা ওড়না তৈরি হয় এই ব্রোকেডে। বিয়ের পর তার দামী পোশাকেও থাকে এই নকশা। আর কখনও যদি তার স্বামী একা দূরে কোথাও যায় তাহলে স্ত্রী সিলানখাপু নকশায় বোনা কাপড় দিয়ে তার ব্যাগ বেঁধে দেয়। এর মাধ্যমে সে ভ্রমণে মানসিকভাবে স্বামীর সঙ্গী হয়। সিলানখাপু  চীনের পাঁচটি প্রধান ব্রোকেড কাপড়ের অন্যতম।

 

এই কাপড়ে বিছানার চাদর, বালিশ, লেপের কভার ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। সোফার কুশনকাভার হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। এর রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস।

ফুল, লতাপাতা, পাখি, মানুষসহ নানারকম চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় এই ব্রোকেডে। ২০০ এর বেশি সিলানখাপু নকশা রয়েছে। সিলানখাপু নকশায় জড়িয়ে রয়েছে থুচিয়া জাতির নারীদের আবেগ এবং কারুশিল্পে দক্ষতার পরিচয়।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে বৈশ্বিক সিম্পোজিয়াম: প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

স্কুলের পথে সিনচিয়াংয়ের মিরজানরা এবং নারীদের বিশেষ কারুশিল্প সিলানখাপু ব্রোকেড:প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী