ইউক্রেনে দ্রুত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা- চীনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা: জাতিসংঘে চীনা প্রতিনিধি
2022-04-06 11:43:45

এপ্রিল ৬: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল (মঙ্গলবার) ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে উন্মুক্ত সম্মেলন আয়োজন করে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি চাং চুন সম্মেলনে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে চীনের অবস্থা ব্যাখ্যা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, দ্রুত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা হলো আন্তর্জাতিক সমাজ ও চীনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

চাং চুন বলেন, চীন বহুবার জোর দিয়ে বলেছে যে, সংলাপ ও আলোচনা হল শান্তির দরজা উন্মোচনের একমাত্র উপায়। রাশিয়া ও ইউক্রেন কয়েক দফা আলোচনা করেছিল। চীন দু’পক্ষের আলোচনা এগিয়ে নেওয়াকে সমর্থন করে। যাতে সমস্যা ও মতভেদ দূর করা যায় এবং সার্বিকভাবে সংকট সমাধানের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত আলোচনার জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা, রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানের সুযোগ করে দেওয়া, বাধা না-দেওয়া এবং সংঘর্ষ এড়ানো।

 

চাং চুন বলেন, চীন ইউক্রেনের মানবিক সমস্যার ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়। ইউক্রেনের মানবিক সংকট প্রশমনের যে কোনও উদ্যোগ ও ব্যবস্থাকে সমর্থন করে চীন। বর্তমানে সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছে, চীন সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে নেওয়া, সাধারণ মানুষ এবং বেসামরিক যন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নিরীহ মানুষের হতাহত এড়ানো, মানবিক প্রত্যাহার এবং মানবিক প্রবেশের সুষ্ঠু পথ নিশ্চিত করতে চায়, নারী, শিশু এবং আহতের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় চীন।

 

চীনা প্রতিনিধি বলেন, মানবিক  সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। ইউক্রেন ও আশেপাশের দেশের মানবিক চাহিদা অনেক। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার উচিত ন্যায়সঙ্গত অবস্থানে আরও বেশি সম্পদ সমন্বয় করা, নিরীহ মানুষ রক্ষা এবং প্রাণ উদ্ধারে নিরলস চেষ্টা চালানো। চীন অব্যাহতভাবে ইউক্রেন ও আশেপাশের দেশে মানবিক সাহায্য দেবে।

 

চাং চুন বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, সশস্ত্র সংঘর্ষে নিরীহ মানুষের যে কোনো ধরনের সহিংসতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। নিরীহ মানুষের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। বুচা শহরে নিরীহ মানুষের হতাহতের খবর উদ্বেগজনক। যা তদন্ত করা উচিত। তদন্তের ফলাফল না-পাওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষের উচিত সংযম বজায় রাখা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ না-করা।

চাং চুন বলেন, ইউক্রেন সংকট বিশ্বের ওপর, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। শাস্তি আরোপ করে সমস্যা সমাধান করা যায় না। বরং এতে সংকট আরও গভীর হয়, নতুন জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বিশ্বায়ন গভীরতর হয়েছে, মানবজাতির ভাগ্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সার্বিক শাস্তি আরোপ করা মানে বিশ্ব অর্থনীতিতে রাজনীতিকরণ, অস্ত্রায়নের ফলে আর্থ-বাণিজ্যিক, জ্বালানি, খাদ্য, শিল্প চেইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুতর সংকট সৃষ্টি করা এবং বিভিন্ন দেশের জনগণকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশ সংঘর্ষ-সংশ্লিষ্ট পক্ষ নয়; তাদের এতে জড়ানো উচিত না। বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর উচিত বিশ্ব বাজারের স্থিতিশীলতা ও আর্থিক পুনরুদ্ধার এগিয়ে নেওয়া।

 

চাং চুন বলেন, স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়েছে তিন দশক আগে। ইউরোপে এমন একটি ভৌগলিক রাজনৈতিক সংকট ঘটেছে, যা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা উচিত। বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি সম্মান করা উচিত। একটি দেশের নিরাপত্তা অন্য দেশের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করে অর্জন করা ঠিক না।  চীন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, ইইউ রাশিয়ার সঙ্গে সার্বিক সংলাপ করা, বহু বছরের মতভেদ সমাধান করা, কার্যকর ও টেকসই আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো গঠন করার পরামর্শ দেয়।

 

চাং চুন বলেন, ইউক্রেন সমস্যা থেকে চীনের ভৌগোলিক রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনের ইচ্ছা নেই। চীন পরিস্থিতি অবনতি করার মতো কোনও আচরণও করবে না। চীনের আন্তরিক লক্ষ্য একটিই, তা হল- শান্তি। চীন অব্যাহতভাবে শান্তি আলোচনার জন্য চেষ্টা করবে, ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/লিলি)