চাষের ক্ষেতে প্রযুক্তি
2022-04-06 10:43:56


চীনে বসন্তকাল হচ্ছে চাষের সময়। এখন কৃষক থেকে শুরু করে কৃষি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও তৃণমূলের ক্যাডারগণ ক্ষেতে ব্যস্ত রয়েছেন। কৃষিতে কী কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়? কীভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য উত্পাদন পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তা চাষের ক্ষেতে গিয়ে দেখার চেষ্টা করবো।

 

হুপেই প্রদেশের ওয়াই কো গ্রামে ১০টি ড্রোনের সাহায্যে তৃণমূল ক্যাডারগণ ওপর থেকে অ্যারোসোলাইজড ওষুধ স্প্রে করছেন। এসময় মা হং কুয়াং হাতের মোবাইলে দেখছেন ড্রোনটি কীভাবে পেইতো ব্যবস্থার সাহায্যে নির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করছে। মা হং কুয়াং একটি কৃষি সমবায়ের পরিচালক। তিনি বলেন, ঐতিহ্যিক কৃষি যন্ত্রপাতির তুলনায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির খরচ কম এবং অধিক কার্যকর। পেইতো নেভিগেশনের ব্যবস্থার ড্রোন দু বছর আগেও খুব কম দেখা যেতো। তবে এখন অনেকে তা ব্যবহার করছে। পেইতো ব্যবস্থার সাহায্যে ড্রোন স্প্রে করে। ফলে পানি ও কীটনাশকের ব্যবহার কম হয়। তাই যন্ত্রপাতি দিয়ে সবাই চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর তিনি ৬৬৭ হেক্টর জমিতে জৈব গম চাষের অর্ডার পেয়েছেন।

 

অন্যদিকে, হ্য নান প্রদেশের তু চুয়াং গ্রামের কৃষক লু হুয়া ইউং পেইতো নেভিগেশন ব্যবস্থার সাহায্যে কৃষি কাজ করেন। তিনি বলেন, এখন নেভিগেশন অনুযায়ী আরো কার্যকর ও ঠিক জায়গায় বীজ বপন করা যায়।

হুপেই প্রদেশের চিংহুয়া ধান চাষ সমবায়ের পরিচালক পি লি সিয়াও মোবাইলের মাধ্যমে ড্রোনের কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। ধান রোপন যন্ত্র, এবং ড্রোন যখন কাজ করে, তখন তিনি মোবাইলে এসবের প্রক্রিয়া দেখতে পারেন।

 

হেই লং চিয়াং প্রদেশের ছি সিং খামারে উত্পাদন চালকবিহীন অপারেশনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলতি বছর তারা ১,০০০ হেক্টর জমিতে প্রথম বারের মতো চালকবিহীন যন্ত্রের সাহায্যে ধান চাষ করবে। রোপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সবকিছুই চালকবিহীন যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

 

২০২১ সালের শেষ নাগাদ চীনে মোট ৬ লাখ কৃষি যন্ত্রপাতিতে স্থাপিত হয়েছে পেইতো পজিশনিং সিস্টেম।

 

বীজ চাষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত ২৪ মার্চ হ্য পেই প্রদেশের মিয়াও চুয়াং গ্রামের বাসিন্দা মিয়াও চেং হাই তার ক্ষেতে গম দেখে খুব খুশি হন। এবার তিনি অ্যাকাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সের উদ্ভাবিত নতুন ধরনের গম চাষ করেছেন। মিয়াও চেং হাই এ বছরের ফসলের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, আমি ভাল মানের বীজ বপন করেছি, আর জৈব সার প্রয়োগ করছি। অ্যাকাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তাই আশা করি, আমার চাষের এই গম সাধারণ গমের তুলনায় বেশি উত্পাদিত হবে এবং বাজারে তার দামও বেশি হবে।

 

ছি সিং খাবারের কর্মীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ডেটা প্ল্যাটফর্ম নিয়ে পরীক্ষা করছেন। কিছু দিন পর তারা ধান বীজের চাষাবাদ শুরু করবেন। তারা ধ্রুবক তাপমাত্রা এবং আর্দ্র পরিবেশে ধানের বীজ বপন করেন এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তা অঙ্কুরিত হয়। এটি সহজে বেঁচে থাকবে, আর উত্পাদন পরিমাণ স্থিতিশীল ও বৃদ্ধির জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করবে।

 

হ্য নান প্রদেশের  ৩,৩৩৩ হেক্টর উচ্চ-মানের প্রদর্শনী কৃষি জমিতে স্থাপিত হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পানি সরবরাহ সরঞ্জাম এবং নতুন একটি প্রযুক্তি।

 

স্পোর দ্বারা গমের রোগ ছড়ায়। তাই এ জমিতে স্থাপিত হয়েছে স্পোর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। তার মানে, মেশিনগুলো সবসময় জমির বায়ুতে স্পোর তথ্য সংগ্রহ এবং আপলোড করছে। প্রযুক্তি কর্মীরা এ তথ্য বিশ্লেষ করে কৃষকদেরকে বার্তা পাঠায়। আর এ তথ্য অনুযায়ী, কৃষকরা মোবাইল ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করতে পারছে। ফলে একজন কৃষক নিজের মোবাইলে ১৩৩ হেক্টর জমি ব্যবস্থাপনা করতে পারে।

 

কীটপতঙ্গও রোগ ছড়ায় এবং আবহাওয়া চাষের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। নিং চিন জেলার কৃষি ব্যুরো একটি ফসলের রোগ ও কীটপতঙ্গ মনিটরিং স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। তা ২৪ ঘন্টা ক্ষেতে কীটপতঙ্গের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পূর্বভাস দিচ্ছে। তা ছাড়া, জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র,  তারা চাষের ক্ষেতের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপতে পারে এবং কৃষকদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস সেবা প্রদান করে। জাতীয় আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, ভবিষ্যতে চীনের প্রত্যক কৃষকের জন্য আবহাওয়া বিপর্যয়ের সতর্কতা সেবা প্রদান করা হবে।

 

আমাদের কাছে ভালো খবর আছে যে, চলতি বছরের এপ্রিল আর মে মাসের আবহাওয়া গম উত্পাদনের জন্য অনেক উপযোগী হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)