রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ: তুরস্কের টেক্সটাইল শিল্পে বড় আঘাত
2022-04-04 17:49:11

এপ্রিল ৪: ইউক্রেনের পরিস্থিতি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কযুক্ত কালো সাগরের প্রতিবেশী হিসেবে তুরস্কের বিভিন্ন শিল্পও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে টেক্সটাইল শিল্প হলো অন্যতম। সম্প্রতি সিএমজি’র সাংবাদিক তুরস্কের এজিয়ান অঞ্চলের টেক্সটাইল শিল্পের শিল্পপতিদের সাক্ষাত্কার নেন। শিল্পপতিরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, আঞ্চলিক ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ইউক্রেন সংকট, যার জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র দায়ী।

হালিস ওডেল হলেন তুরস্কের এজিয়ান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ টেক্সটাইল শহর ডেনিজলির একটি হোম টেক্সটাইল ব্যবসা ও একটি টেক্সটাইল কাঁচামাল রপ্তানি কোম্পানির মালিক। ৯০-এর দশক থেকে তার ব্যবসা বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর সাথে।

ওডেল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া ও বেলারুশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা আরাপ করেছে। রাশিয়া ও বেলারুশকে সুইফ্ট ব্যবস্থার বাইরে রাখায় তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা হচ্ছে। এতে, ওই দুই দেশ থেকে রপ্তানির পেমেন্ট স্বদেশে ফেরত আনা যাচ্ছে না। এ ছাড়া, সংঘর্ষের ফলে পণ্যের পরিবহনেও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে। আগে কালো সমুদ্রের মধ্য দিয়ে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশে পাঠানো পণ্য যেতো, এখন শুধুমাত্র স্থলপথে পণ্য যায়।

ওডেল বলনে, ‘পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। কালো সমুদ্র পরিবহন লাইন বাতিল করার পর ইউরোপে যাওয়ার স্থল লাইন খুবই ব্যস্ত। বর্তমানে পণ্য পাঠানোর গতি ধীর।’

মোস্তফা তাসিন হলেন তুরস্কের একজন বিবাহের পোশাকের ফ্যাব্রিক সরবরাহকারী। তিনি আগে চীনে লেখাপড়া করতেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি চীন থেকে বিবাহের পোশাকের ফ্যাব্রিক আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। গত বছর তিনি ইউক্রেনেও তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। তবে ইউক্রেনের সংঘর্ষের কারণে তাঁর সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।  তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ইউক্রেনের বাজারে কোনো ব্যবসা নেই। আমাদের ক্ষতি হয়েছে।’

ওডেল ও তাসিন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের সরাসরি শিকার।

ওডেল সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হলো এবারের সংঘর্ষের সূচনাকারী। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের নেতৃত্বে একটি একক মেরুর বিশ্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করছে। এতে বিশ্বের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তাসিন মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের পিছনে মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ইউক্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পরিত্যক্ত হয়েছে।

ডেনিজলি শহরের সাংবাদিক সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান আহমেত দিদা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাতে সশস্ত্র শক্তি দিয়ে ইরাক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সম্পদ লুণ্ঠন করা। যত বেশি সংঘর্ষ, যুক্তরাষ্ট্র তত বেশি অস্ত্র বিক্রয় করতে পারবে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো যুক্তরাষ্ট্র। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)